অখণ্ড ভারতের মানচিত্র নিয়ে ঢাকা, পাকিস্তানে ক্ষোভ
- আপডেট সময় : ০৬:০০:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ জুন ২০২৩
- / ১৭৬৩ বার পড়া হয়েছে
ভারতের নতুন সংসদ ভবনে আছে অখণ্ড ভারতের ম্যাপ-সহ ম্যুরাল। তা নিয়ে ক্ষোভ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপালের।
যে মানচিত্রটি নতুন সংসদ ভবনে ম্যুরাল করে রাখা হয়েছে, তা অতীতের। সামনে অশোকের শিলালিপি রয়েছে। মৌর্যদের সময়ে যে সব এলাকার যা নাম ছিল, মানচিত্রেও তা আছে। সেখানে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, আফগানিস্তান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা অখণ্ড ভারতের মানচিত্রে ঠাঁই পেয়েছে।
অতীতের এই মানচিত্র নতুন সংসদভবনে ঠাঁই পাওয়ার পর খোদ সংসদীয়মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী সেই মানচিত্রের ছবি-সহ টুইট করে বলেছেন, ”আমাদের সঙ্কল্প, অখণ্ড ভারত।” এই টুইটের পরই বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল প্রতিবাদ এসেছে।
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশে সরকারের তরফে বা আওয়ামী লীগের তরফ থেকে কোনো আনুষ্টানিক প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীদের নেতৃত্বে ১৪ দলের জোটের শরিক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক মিনু প্রথম আলোকে বলেছেন, ”১৯৪৭-এর পরের সময়ে অখণ্ড ভারত বলে আর কিছু নেই। সংসদে তাই অখণ্ড ভারতের মানচিত্র রাখা উচিত নয়।” তার আশা ভারত দ্রুত তা সংশোধন করে ফেলবে।
বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম একই সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, ”অন্য দেশের অখণ্ড মানচিত্রে বাংলাদেশকে দেখানোটা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি।”
বাংলাদেশের বামপন্থি দলগুলিও এর প্রতিবাদ করেছে।
পাকিস্তানের বক্তব্য
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ”ম্যুরালে প্রাচীন ভারতের মানচিত্র দেখানো হয়েছে, তার মধ্যে পাকিস্তান ও অন্য কিছু দেশকেও রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতারা এরপর য়ে বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে আমরা আতঙ্কিত বোধ করছি।”
তার দাবি, ”এই অখণ্ড ভারতের কথা হলো সম্প্রসারণবাদী মনোভাবের ফসল। এটা শুধু ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির মানুষেরই নয়, ভারতেও সংখ্যালঘুদের পরিচয় ও সংস্কৃতিকে নিজেদের অধীনে নিয়ে আসার চেষ্টা। তাই এখন যে অখণ্ড ভারতের কথা বলা হচ্ছে, তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। ভারতীয় রাজনীতিকরা যেন এই নিয়ে কথা বলা বন্ধ করেন। তারা যেন তাদের বিভাজনের চেষ্টা থেকে দূরে থাকেন। ”
নেপাল যা বলেছে
নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি বলেছেন, ”বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড যেন ভারতের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এই ম্যুরালটি যেন সংসদ ভবন থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। ”
তার বক্তব্য, ”ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশ যদি সংসদ ভবনে রাখা মানচিত্রে নেপালকেও তাদের অংশ হিসাবে দেখায়, তাহলে সেটা একেবারেই ঠিক নয়।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মত
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী সাপ্তাহিক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ”এই ম্যুরালটা অখণ্ড ভারতের নয়, বরং মৌর্য সাম্রাজ্যের সময়ের মানচিত্র।”” তিনি বলেছেন, সম্রাট অশোকের সময় ,সাম্রাজ্য কতটা বিস্তৃত ছিল এবং অশোক যে জনমুখি ও কল্যাণকর শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই বিষয়েই বলা হয়েছে।”
অরিন্দম বাগচী বলেছেন, ”নেপালের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরের সময় এই বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। আলোচনাতেও বিষয়টি আসেনি।”
কেন এই মানচিত্র?
প্রবীন সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ”অতীত ও ট্রাডিশনকে জাতীয়তাবাদের সঙ্গে মিশিয়ে অনেকসময়ই একটা ন্যারেটিভ তৈরি করার চেষ্টা হয়। এটা আসলে বর্তমান সময় থেকে চোখ সরানোর চেষ্টা। অতীতের আশ্রয় নেয়া।”
শুভাশিস মনে করেন, ”যারা এটা করেন, তারা হয়ত ভাবেন, এখন সময়টা ততটা গৌরবোজ্জ্বল নয়। পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে এই মানচিত্রের যদি বিরোধ হয়, তাহলে তো তাকে খারাপ বলতেই হবে। আরো একটা কথা মনে রাখতে হবে, ভারতের নির্দিষ্ট কোনো মানচিত্র ছিল না। বিভিন্ন সময়ে তার মানচিত্রের পরিবর্তন হয়েছে।”
শুভাশিসের দাবি, ”বিজেপি-র নেতা-মন্ত্রীরা আরএসএসের অখণ্ড ভারতের কথাই বলে যাচ্ছে।”
ডয়চে ভেলে