ছাদের টালি যখন সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করে
- আপডেট সময় : ০৫:২৮:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুন ২০২৩
- / ১৬৮৬ বার পড়া হয়েছে
জ্বালানি সংকট, মূল্যবৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে শুধু পরিবহণ ক্ষেত্রে নয়, দৈনন্দিন জীবনে সব ক্ষেত্রেই জ্বালানি সাশ্রয়ের তাগিদ বাড়ছে৷ জার্মানির এক উদ্যোগপতি এক অভিনব উপায়ে সেই কাজে অবদান রাখছেন৷
জার্মানির বাড়িঘরের ছাদের উপর বিপ্লব আসতে চলেছে৷ কর্নেলিউস পাউল একেবারে নতুন ধরনের টাইল সৃষ্টি করেছেন, যেগুলি একই সঙ্গে সোলার মডিউলও বটে৷ তাছাড়া সাধারণ টালির মতো সেগুলি ভবনের সুরক্ষাও নিশ্চিত করে৷
সেই টাইল দিয়ে অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়৷ যতক্ষণ সূর্যের আলো থাকে, তত সময় ধরে এক পরিবারের চাহিদার তুলনায় বরং বেশি বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়৷ সোলার টাইলের উদ্ভাবক কর্নেলিউস পাউল বলেন, ‘‘আমরা সহজ হিসেব করতে পারি৷ ছাদের উপর এক হাজার টাইলের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দশ কিলোওয়াট৷ জার্মানির কোনো জায়গায় বছরে প্রায় ৯,০০০ কিলোওয়াট আওয়ার, কোথাও বা দশ হাজার কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে৷ অন্য বিষয়টি হলো, প্রায় ২০ বছরে সেই টাইল কেনা ও বসানোর ব্যয় উঠে আসার কথা৷”
এই ভবনে সোলার টাইল বসাতে প্রায় ৪০,০০০ ইউরো ব্যয় হয়েছে৷ সাধারণ ছাদের উপর আলাদা করে সোলার প্যানেল বসানোর ব্যয়ের তুলনায় সেই অংক বেশ কয়েক হাজার ইউরো বেশি৷
পথিকৃত হিসেবে বিপ্লবীদের সব সময়ে সমস্যার মুখে পড়তে হয়৷ তাঁর উদ্ভাবনী টাইল উৎপাদনের জন্য এখনো হাতে করে অনেক কাজ করতে হয়৷ ফলে জার্মানির পূর্বাঞ্চলে নিজস্ব কারখানায় উৎপাদনের ব্যয়ও বেড়ে যায়৷
আরেকটি বাধা হলো, তাঁর নতুন পণ্যকে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য হতে হবে, যাতে কয়েক দশক ধরে বিঘ্ন ছাড়াই টাইল মজবুত থাকতে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ চালিয়ে যেতে পারে৷ কর্নেলিউস বলেন, ‘‘সোলার মডিউল, তার উপরের সোলার ল্যামিনেট প্রথাগত প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়৷ এই শিল্পক্ষেত্র কোটি কোটি বার সেগুলি হাতেনাতে যাচাই করেছে৷ উপাদান হিসেবে পরীক্ষিত হওয়ায় আমার মনে কোনো দুশ্চিন্তা নেই৷”
সম্প্রতি রোবটও কাজে লাগানো হচ্ছে৷ ফলে কর্নেলিউস আরও বেশি পরিমাণে এবং আরো সস্তায় উৎপাদন করতে পারছেন৷ দামী সরঞ্জাম কেনার সামর্থ্য নিশ্চিত করতে তিনি বিনিয়োগকারীদের নিজের কোম্পানির অংশীদার করেছেন৷ এভাবে নতুন কোম্পানির প্রতি আস্থা আদায় করতে পেরেছেন তিনি৷ কর্নেলিউস পাউল বলেন, ‘‘২০১১ সালে আমরা মাত্র তিন জনকে নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম৷ এখন প্রায় ৭০ জন কর্মী সক্রিয় রয়েছেন৷ গত বছর আমাদের টার্নওভার দ্বিগুণ হয়ে ৫০ লাখ ছুঁয়েছে৷ চলতি বছর আমরা সেটা পাঁচ বা ছয় গুণ করতে চাই৷”
জ্বালানি সংকটের কারণে জার্মানির অনেক বাসার মালিকের মনে নিজস্ব জ্বালানি উৎপাদনের তাগিদ বাড়ছে বলে উদ্যোগপতি হিসেবে কর্নেলিউস সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন৷ সেইসঙ্গে সম্প্রতি এমন উদ্যোগের জন্য আরও মোটা অংকের রাষ্ট্রীয় সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে, যে ক্ষেত্রে বেশি জটিলতা ছাড়াই ভবনের রূপান্তর ঘটানো যায়৷ একটি ভবনের সংস্কারের বর্ণনা দিয়ে কর্নেলিউস বলেন, ‘‘ছাদে কয়েকটি জায়গায় গর্ত করা হচ্ছে৷ সেখান দিয়ে প্লাস ও মাইনাস কেবেল ঢোকানো হবে৷ সেই তার কেবেল চ্যানেলের মাধ্যমে সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যেখানে ইনভার্টার রয়েছে৷”
কোটি কোটি ইউরো অংকের বাজারে এই ‘টাইল বিপ্লবী’ এখনো ছোট আকারে ব্যবসা করছেন৷ তবে কোনো এক সময়ে তাঁর সোলার টাইল জার্মানিতে বড় আকারে বিক্রি হবে বলে তিনি নিশ্চিত৷ কর্নেলিউস পাউল মনে করেন, ‘‘জার্মানিতে দেড় কোটি এমন বাড়ি রয়েছে, যেখানে একটি বা দুটি পরিবার বাস করে এবং আগামী ৩০ বছরের মধ্যে যেগুলির জ্বালানি কাঠামোর সংস্কার করতে হবে৷ হয়তো ছাদও খুব পুরানো হয়ে গেছে৷ সেই হিসেব অনুযায়ী বছরে প্রায় পাঁচ লাখ ছাদের সংস্কার, অর্থাৎ ২০ থেকে ৩০ কোটি সোলার টাইল সেখানে লাগানো হতে পারে৷ আমরা সেই ধরনের কাজের মাধ্যমে সে ক্ষেত্রে অবদান রাখার আশা করছি৷”
জার্মানির মানুষ কিন্তু সাধারণত মূল্যের বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন৷ ফলে তাদের মন জয় করা কঠিন হবে৷ কিন্তু আপাতত যুগের হাওয়া তাঁর জন্য সুবিধা বয়ে আনছে৷ টাইলের কার্যকরিতা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে পড়লে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে সম্ভবত আরও ক্রেতা পাওয়া যাবে৷
ডয়চে ভেলে