জনগণ মূক ও বধির হলে নির্বাচনে গণমাধ্যমও নীরব থাকে
- আপডেট সময় : ১১:২২:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ১৬৪৭ বার পড়া হয়েছে
নিজেদের রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে বধির ও মূক জনগণ নিবর্তনমূলক রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা যখন স্বেচ্ছায় মেনে নেয় তখন শুধু গণমাধ্যমের কাছ থেকে নির্বাচনে যথাযথ ভূমিকার আশা করাটা বোকামি এবং নিরর্থক৷
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা৷ কোন্ ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো অংশ নিবে কীনা, দেশের মানুষ অবাধে ভোট দিতে পারবে কীনা বা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কীনা – এসব নিয়ে জনমনে শঙ্কা এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক থাকলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন নির্বাচনের একটি আবহ ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে৷ বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক চাপের কারণে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কতটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে তা এখন সর্বস্তরে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে৷ প্রাসঙ্গিকভাবে, বরাবরের মতই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা কেমন হবে বা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে৷ কোনো কোনো দেশীয় ও বিদেশি সংস্থা নির্বাচন রিপোর্টিংয়ে সাংবাদিকদের সিদ্ধহস্ত করে তুলতে প্রশিক্ষণেরও আয়োজন করছে৷ কিন্তু বাংলাদেশের সবশেষ দুটি সংসদ নির্বাচনে গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের আচরণ এবং ওই নির্বাচনগুলোতে গণমাধ্যমের নতজানু ভূমিকার কারণে সাধারণ জনগণই শুধু নয়, খোদ মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকদের মধ্যেও গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব আছে৷
একটি দেশের জাতীয় নির্বাচনে গণমাধ্যমের কতটা শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে এবং সে ভূমিকার প্রভাব কেমন হতে পারে তা নিয়ে গণমাধ্যম, রাজনীতি ও সাংবাদিকতা শাস্ত্রে বহু গবেষণা হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছে৷ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও দেশ পরিচালনায় নাগরিকদের সম্পৃক্ততার অনেক উপায় থাকলেও সাধারণ জনগণের জন্য সর্বাধিক প্রচলিত অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি হলো নির্বাচনের সময় ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জড়িত হওয়া৷ এই ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রক্রিয়াটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে স্বীকৃত৷ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নির্বাচনের সময় রাজনীতিতে গণমাধ্যমের ইতিবাচক কিন্তু সীমিত প্রভাব রয়েছে৷ আবার কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নির্বাচনে গণমাধ্যম রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে বা রাজনীতিবিদদের আচরণ কি রকম হবে তা নির্ধারণ করে দেয়৷ অর্থাৎ রাজনীতির গণমাধ্যমীকরণ হয়ে থাকে৷ ভূমিকার মাত্রা যেমনই হোক না কেন, সঠিক ও নির্ভুল তথ্য তুলে ধরা এবং অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করার মাধ্যমে গণমাধ্যম নির্বাচনের সময় জনগণের সম্মিলিত দৃষ্টিভঙ্গিকে উৎসাহিত এবং শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে৷ এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের কাছে প্রত্যাশা থাকে তারা দুটি উপায়ে ভূমিকা রাখবে৷ প্রথমত, নির্ভুল ও সঠিক তথ্যের মাধ্যমে তথ্যসমৃদ্ধ নাগরিক সমাজ তৈরি করা যার ফলে ভোটাররা বিভিন্ন প্রার্থী এবং রাজনৈতিক দলের অগ্রাধিকার এবং এজেন্ডাগুলো বুঝতে পারে৷ দ্বিতীয়ত, পর্যবেক্ষক হিসেবে নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা এবং রাজনীতিবিদদের তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী করা৷ এই দুটি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে গণমাধ্যম মানুষকে স্বাধীন ও স্ব-শাসিত হওয়ার জন্য যে ধরনের তথ্য প্রয়োজন তা সরবরাহ করে৷ এদিক থেকে নির্বাচনের সময় গণমাধ্যম ‘জনগণের চোখ ও কান’ হিসেবে কাজ করে৷ বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর নির্বাচনে এমন ধরনের ভূমিকা রাখার নজির প্রায় ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে তকমা পাওয়ার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে৷
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ নির্বাচনকালীন সরকারের ধরন এবং নির্বাচনী ফলাফলের গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে এই ১১টি নির্বাচনকে আমরা দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি৷ একটি হলো কনসোলিডেট নির্বাচন, যে নির্বাচনগুলো একটি রাজনৈতিক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং নির্বাচনী ফলাফলের মাধ্যমে সেই সরকারই আবার ক্ষমতায় এসেছে৷ উদাহরণস্বরূপ আমরা সবশেষ দুটি নির্বাচনের কথা বলতে পারি৷ এ ধরনের নির্বাচনকালীন সরকারের আচরণ এবং এই নির্বাচনগুলোর গ্রহণযোগ্যতা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ৷ দ্বিতীয়টি হলো ট্রানজিশনাল নির্বাচন, যে নির্বাচনগুলো একটি অস্থায়ী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং নতুন একটি রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করেছিল৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে এই নির্বাচনগুলোর গ্রহণযোগ্যতা বেশি৷ ৯১, ৯৬ (১৫ ফেব্রুয়ারি ছাড়া), ২০০১ ও ২০০৮ সালে এ ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ বাংলাদেশের সাংবাদিকরা অবাধে নির্বাচন কাভার করার ক্ষেত্রে সুখকর স্মৃতি হিসেবে এসব নির্বাচনের কথাই উল্লেখ করে থাকেন ৷ অন্যভাবে বলা যায়, এ নির্বাচনগুলোতে গণমাধ্যমের সত্যিকারের ভূমিকা ও প্রভাব আমরা দেখতে পেয়েছিলাম৷ তবে বিশ্বের অনেক দেশের মতই এসব নির্বাচনেও বাংলাদেশের কিছু কিছু গণমাধ্যমের দলীয় পক্ষপাতমূলক এবং অতিরঞ্জনের চর্চা ছিল৷
নির্বাচনের সময় সংবাদের অবাধ প্রবাহ নির্ভর করে (১) রাষ্ট্র কতটা হস্তক্ষেপ করে (ভীতি প্রদর্শন, সেন্সরশিপ বা অন্যান্য জোরপূর্বক পদক্ষেপের মাধ্যমে), (২) নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা, এবং (৩) আর্থিক, বাণিজ্যিক এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ থেকে সম্পাদকীয় স্বাধীনতার ওপর৷ যখন গণমাধ্যমের জন্য একটি মুক্ত এবং স্বাধীন পরিবেশ নির্বাচনী প্রতিযোগিতার সাথে সহাবস্থান করে, তখন উভয়ই একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে অবদান রাখতে পারে৷ কিন্তু যখন দেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতাই থাকে অধরা তখন গণমাধ্যম হয়ে পড়ে নিপীড়িত ও নীরব৷ আর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যথাযথভাবে রক্ষা না করে জনগণকে শিক্ষিত করা এবং নির্বাচনী ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া রক্ষণাবেক্ষণের আদর্শ গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালন করতে পারে না একটি নিপীড়িত ও নীরব গণমাধ্যম৷ কারণ কাঙ্ক্ষিত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের নির্বাচনী প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে উচ্চ পেশাদারত্ব, সঠিকতা ও বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে হয়৷ গণমাধ্যমের দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করার জন্য তাদের কিছু অধিকার প্রয়োজন হয়৷ এ অধিকারগুলো গণমাধ্যমকে চাপমুক্তভাবে তথ্য সংগ্রহ ও পরিবেশনে সক্ষম করে তুলে৷ চাপের সুনির্দিষ্ট রূপ সম্পর্কে মতামতের ভিন্নতা থাকলেও বিশেষজ্ঞরা একমত যে, নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমের উপর সীমাবদ্ধতা প্রয়োগ করা হয় জনসাধারণের দৃষ্টিসীমা থেকে নির্বাচনী অনিয়ম আড়াল করা, বিরোধী দলকে বাধা দেয়া এবং ক্ষমতাসীন সরকারের স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে৷ গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল এবং সমস্যা-সঙ্কুল নামমাত্র গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি থাকে৷ ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ইলেকটোরাল ডেমোক্রেসি থেকে প্রতিযোগিতামূলক কর্তৃত্ববাদ বা হাইব্রিড শাসনব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে৷ এই রূপান্তরের ফলে ভোটাধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা সহ বিভিন্ন মৌলিক মানবাধিকার উল্লেখযোগ্যভাবে সঙ্কুচিত হয়েছে৷ এর অর্থ বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তর শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতাকেই প্রভাবিত করেনি, বরং বাক স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা এবং গণমাধ্যমকে প্রদত্ত স্বায়ত্তশাসনের স্তরকেও প্রভাবিত করেছে৷ বাংলাদেশে গত এক দশকে যে ধরনের শাসনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার পরিবেশ বিদ্যমান তাকে কোনোভাবে গণতান্ত্রিক বলা যাবে না৷ এই সময়ে ঘন ঘন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা, নাগরিক স্বাধীনতার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন, ব্যাপক দুর্নীতি, রাজনৈতিক বিরোধীদের ভীতি প্রদর্শন এবং জবরদস্তি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অভাব এবং সীমিত রাজনৈতিক অংশগ্রহণের নজির বাংলাদেশকে হাইব্রিড শাসনব্যবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়৷ উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এ ধরনের হাইব্রিড শাসনব্যবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যা ব্যাপক প্রশ্নবিদ্ধ হলেও গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সে নির্বাচনের বৈধতাকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘটনা ঘটে৷ বাংলাদেশের ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা একই ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখেছি৷
বাংলাদেশে ২০০৮ সালের নির্বাচনে গণমাধ্যম অবাধে তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করতে পেরেছিল৷ রাষ্ট্র, রাষ্ট্রীয় সংস্থা, রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে তেমন উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখীন হয়নি৷ কোথাও বাধা পেলে নির্বাচন কমিশন তার প্রতিকার করেছিল৷ রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে জবাবদিহির মুখোমুখি করে এই নির্বাচনে সংবাদমাধ্যমগুলো নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচনী কাভারেজ পাঠক-দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করতে পেরেছিল৷ দুর্নীতি, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুর মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী ইস্যুগুলোকে প্রাধান্য দিতে পেরেছিল৷ অন্যদিকে সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটের পরদিনের পত্রিকাগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সাংবাদিকরা কিভাবে ভোটকেন্দ্রগুলোতে পদে পদে হেনস্তার শিকার হয়েছিল৷ রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর বাধার মুখে নির্বাচনী অনিয়মের অনেক খবর যেগুলো বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিল সেগুলো দেশীয় গণমাধ্যমগুলো প্রকাশ করতে পারেনি৷ বিগত নির্বাচনগুলোতে গণমাধ্যমের ভূমিকার তুলনামূলক চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে যেখানে রাজনীতির গণমাধ্যমীকরণ ঘটেছিল বা গণমাধ্যম যেখানে রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করে দিত, সেখানে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে গণমাধ্যমের রাজনীতিকীকরণ ঘটেছে৷ শেষ দুটি নির্বাচনে রাজনীতি বা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি গণমাধ্যমের গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছিল৷ এক দশকের মধ্যে নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকার এই রূপান্তর নিঃসন্দেহে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে সমান্তরালে পরিবর্তিত হয়েছে৷ দেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতা যতটা সঙ্কুচিত হয়েছে তার সাথে তাল মিলিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও সঙ্কুচিত হয়েছে৷ যার ফলশ্রুতিতে নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকারও দ্রুত পরিবর্তন ঘটেছে৷ এ সময়ে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে৷ আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এ সময়ে অতিমাত্রায় গণমাধ্যমের মালিকানার রাজনীতিকরণ এবং সাংবাদিকদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, সুনির্দিষ্টভাবে বললে, ক্ষমতাসীন সরকারের সাথে ঘনিষ্টতা বেড়েছে৷ যে কারণে ২০০৮ সালের আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে যখন সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল তখন সাংবাদিকদের এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার প্রবণতা ছিল৷ অর্থাৎ নিজেদের যথাযথ ভূমিকা পালনে অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ আসলে তারা সোচ্চার হতেন৷ কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে ধীরে ধীরে এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের নিশ্চুপ থাকার প্রবণতা বেড়েছে৷ উপরন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে গণমাধ্যমের সংবাদ শিরোনামগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এক ধরনের নমনীয় ও সমঝোতামূলক সংবাদ পরিবেশেনের প্রবণতা বেড়েছে৷
কনসোলিডেট ও ট্রানজিশনাল – দু’ধরনের নির্বাচনে বাংলাদেশি গণমাধ্যমের আচরণ ও ভূমিকা ব্যাপক তারতম্য লক্ষ্য করা যায়৷ বিষয়টিকে অন্যভাবে বলা যায়, যেসব নির্বাচনে দেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিদ্যমান থাকে না সেসব নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ৷ কারণ গণমাধ্যম নির্বস্তুক কোনো সত্তা নয়, এটি মানুষের দ্বারা এবং মানুষের জন্যই পরিচালিত৷ একটি দেশের গণমাধ্যম ব্যবস্থা সেই দেশটির রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও গণমাধ্যম ব্যবস্থার শক্তির সাথে সম্পর্কিত৷ সে কারণে বাংলাদেশের নির্বাচনগুলোতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাগুলো গণমাধ্যম ব্যবস্থার রূপরেখা নির্ধারণ করে দেয় যা নির্বাচনকালীন সময়ে গণমাধ্যম-রাজনীতির সম্পর্ক নির্ধারণ করে৷ গত দুটি নির্বাচন এবং বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলা যায়, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে রাজনীতির এমন চিত্র গা সওয়া হয়ে গেছে৷ অর্থাৎ নিজেদের অধিকারের কতটুকু পেলো আর পেলো না তা নিয়ে তাদের খুব বেশি মাথা ব্যাথা নেই৷ নিজেদের রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে এমন বধির ও মুক জনগণ নিবর্তনমূলক রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা যখন স্বেচ্ছায় মেনে নেয় তখন শুধু গণমাধ্যমের কাছ থেকে নির্বাচনে যথাযথ ভূমিকার আশা করাটা বোকামি এবং নিরর্থক৷
ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ