জলবায়ু পরিবর্তন মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে
- আপডেট সময় : ১২:০৭:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ১৭৮০ বার পড়া হয়েছে
খুলনার দাকোপ উপজেলার কামারখোলা ইউনিয়নে রিপন মণ্ডলদের গ্রামের চারপাশে পাঁচটি নদী আছে৷ গতবছরের খরায় তার বাবার তরমুজের ফলন নষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ রিপন তার বাবার কষ্ট বুঝতে পারেন৷
‘‘আমি বাবার মানসিক কষ্টটা বুঝতে পারি৷ তাকে আমাদের পড়ালেখার খরচ দিতে হয়৷ তিনি যে ঋণে ডুবে যাচ্ছেন সেটা বুঝতে পারি,” থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন রিপন৷
তাদের বাড়ি প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত৷ ‘‘সবচেয়ে কাছের হাসপাতালে গিয়ে মানসিক চিকিৎসক দেখাতে অন্তত দুটি নদী পার হতে হয়৷ সময়ও অনেকক্ষণ লাগে” বলে জানান তিনি৷
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হতে পারে বলে বিশ্বব্যাংক সতর্ক করে দিয়েছে৷
এদিকে, এই অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মানসিক স্বাস্থ্যের সম্ভাব্য অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যখাতে কাজ করা পেশাজীবীরা৷ তারা বলছেন, চরম আবহাওয়া এবং জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা বাড়তে পারে৷ প্রশিক্ষিত মনোবিজ্ঞানীর সংখ্যা খুব কম হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের৷
২০১৯ সালে সরকারের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশেরপ্রতি পাঁচজন মানুষের মধ্যে একজনের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা আছে৷ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত ও ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটি বলছে, বন্যার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং বাড়তি তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা মানুষের উদ্বেগ ও বিষণ্ণতায় ভোগার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজির অধ্যাপক সৈয়দ তানভীর রহমান বলছেন, প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা পেশাজীবীর সংখ্যা খুবই কম৷
মানসিক স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে বলে মনে করে বাংলাদেশ সরকার৷ তাই ২০২২ সালের জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনায় বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখার অঙ্গীকার করা হয়েছে- বিশেষ করে নারী ও প্রতিবন্ধীদের উপর৷
পরিস্থিতির উন্নয়নে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা পেশাজীবী, এনজিও ও বিভিন্ন স্টার্ট-আপ চেষ্টা করছে৷ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রত্যন্ত ও বিচ্ছিন্ন এলাকার মানুষকে সহায়তা দিতে স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে৷
যেমন ‘মনের বন্ধু’ নামের একটি সংস্থা জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে মিলে খুলনার দাকোপ এলাকার মানুষদের মানসিক সহায়তা দিচ্ছে৷ ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী তৌহিদা শিরোপা বলেন, দুর্যোগ শুধু ভৌত অবকাঠামোরই ক্ষতি করে না, বিভিন্নভাবে মনেরও ক্ষতি করে৷
মানসিক স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি৷ তাই ‘জলবায়ু উদ্বেগ’ এবং ‘ইকো-শোক’ নামে দুটি বিষয় বিশ্বব্যাপী আলোচিত হচ্ছে৷
এদিকে, মানসিক চিকিৎসা বিষয়টি বাংলাদেশে এখনও ট্যাবু হওয়ায় অনেক মানুষ, বিশেষ করে গ্রামবাসীরা এখনও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে চান না৷ পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের শিশু মনোবিদ দীপন চন্দ্র সরকার বলছেন, ‘একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না গেলে’ মানুষ এখনও মানসিক চিকিৎসা নিতে চায় না৷
দীপন চন্দ্র সরকার জানান, এখনও বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বিশেষ করে দুর্যোগপ্রবণ দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা পেশাজীবীর অভাব রয়েছে৷ সে কারণে সরকার ও এনজিওগুলো মাঝেমধ্যে ঐসব এলাকায় সাইকোথেরাপিস্ট পাঠিয়ে থাকেন৷ কিন্তু এমন স্বল্পমেয়াদী কর্মসূচি খুব একটা ফলপ্রসু হয় না বলে জানান কয়েকজন মনোবিদ৷
তাই বাংলাদেশের জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনায় টেলিহেলথ সেবার পরিধি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷
‘মনের বন্ধু’ সংস্থা তৃণমূলের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, যেন তারা মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রয়োজন এমন মানুষদের কোনো পরামর্শকের সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দিতে পারেন৷
এছাড়া বাগেরহাটের সরকারি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মেহেদী হাসান ‘জুম’ এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মী ও জরুরি সেবা কর্মীদের দুর্গত এলাকার মানুষদের কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিতে হবে, সেই প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন৷
ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ