ধর্ষণ-খুন রুখতে ‘এনকাউন্টার’ দাওয়াই!
- আপডেট সময় : ১২:১১:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৩
- / ১৬৮৩ বার পড়া হয়েছে
মাটিগাড়ায় গত সোমবার বিকেলে এক স্কুল ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়জঙ্গলে ঘেরা পরিত্যক্ত ঘরে। তার মাথা থেঁতলানো ছিল। সেই সময় একাদশ শ্রেণির ছাত্রীর পরনে ছিল ইউনিফর্ম। পাশে স্কুলের ব্যাগ। যে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়, সেটিও ছিল দেহের পাশে।
স্কুল থেকে ফিরছিল কিশোরী। সেই সময় ঘটনাটি ঘটে। চিৎকার শুনে স্থানীয় এক বাসিন্দা ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় ছাত্রীকে পড়ে থাকতে দেখে অন্যান্যদের ডেকে আনেন।
এই ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়।পুলিশ ছয় ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে স্থানীয় এক যুবককে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাকে পাকড়াও করা হয়। কিশোরীকে যৌন নিগ্রহের পর খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। মৃতের পরিবার মূল অভিযুক্তের ফাঁসির দাবি তুলেছে। রাজনৈতিক দল থেকে বিভিন্ন সংগঠন কড়া শাস্তির দাবিতে মিছিল করেছে।
প্রতিবাদে বনধ
কিশোরীকে নিগ্রহ ও হত্যার প্রতিবাদে শনিবার ১২ ঘণ্টার বনধ পালিত হয় দার্জিলিং ও কালিম্পঙে। বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ডাকে এই বনধ। হামরো পার্টি, সিপিআরএম-সহ পাহাড়ের অন্যান্য কয়েকটি দল বনধ সমর্থন করেছে। রাজ্যের শাসক দল বনধের পক্ষে না থাকলেও ঘটনার নিন্দা করে কঠোর পুলিশি ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে।
সকাল থেকে বনধের ভালোই প্রভাব দেখা যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দোকানপাট বন্ধ ছিল। রাস্তাঘাট শুনশান। পথে গাড়িঘোড়া ছিল না বললেই চলে। এরই মধ্যে প্রবল বৃষ্টি চলায় যেন স্তব্ধ হয়ে আছে পাহাড়ের জনজীবন। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পর্যটক সকলেই কার্যত ঘরবন্দি। গাড়ির অভাবে পর্যটকরা বিপাকে পড়েছেন।
উত্তরবঙ্গের ঘটনার আঁচ পৌঁছেছে রাজ্যের রাজধানী কলকাতাতেও। বিধানসভায় বিজেপি বিধায়করা এই বিষয়টি তুলে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছেন। তাদের বক্তব্য, উত্তরবঙ্গে একের পর এক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা হচ্ছে। এর দায় নিতে হবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। তার পদত্যাগ দাবি করেছে বিজেপি।
শুভেন্দুর দাওয়াই
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ধর্ষণ বন্ধের দাওয়াই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিধানসভার বাইরে তিনি বলেন, “বাংলায় মহিলাদের সুরক্ষা বলে কিছু নেই। দুদিনের মধ্যে তিনটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অপরাধীদের মন থেকে ভয় চলে গিয়েছে। তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
এর প্রতিকারে শুভেন্দুর দাওয়াই, “এ রাজ্যে যোগী আদিত্যনাথের মতো কড়া প্রশাসকদরকার। এই অপরাধ যারা করছে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। প্রয়োজনে এদের এনকাউন্টার করে দেয়া উচিত।”
শাসক শিবির এই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিধানসভায় তৃণমূলের উপ মুখ্য সচেতক তাপস রায় বলেন, “শুভেন্দু বিজেপির শাসনে অনুপ্রাণিত। কিন্তু এ রাজ্যের মানুষ এনকাউন্টার বা বুলডোজারের দমনকে মেনে নেবে না। এখানে নির্বাচিত সরকার রয়েছে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে।”
শুভেন্দুরএই দাওয়াইয়ের সমালোচনা করেছেননারী ও মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মীরা। এপিডিআর বা গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি এর প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর ইমেলে লিখেছেন, ‘‘এই বক্তব্যে শুধু বিচারাধীন বন্দিদেরই নয়, রাজ্যের সমস্ত মানুষের জীবন ও বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়ার হুমকি। বিচার ব্যবস্থাকে অস্বীকার করা হয়েছে। পুলিশকে ও সাধারণ মানুষকে আইন হাতে নিয়ে খুন করতে প্ররোচনা দিয়েছে। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন।”
প্রয়োজন দ্রুত বিচার
দ্রুত বিচারের উপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ বলেন, “এনকাউন্টারের মাধ্যমে কোনো বার্তা দেয়া সম্ভব বলে মনে করি না। দ্রুত বিচার হওয়া দরকার। শাস্তিও দ্রুত দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এর সঙ্গে প্রয়োজন নিগৃহীতা বা তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া। তবে এর কিছুটা সুরাহা করা যাবে।”
পশ্চিমবঙ্গ নারী কমিশনের সাবেক চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় বলেন, আইনের যে সংস্থান আছে, “সেগুলির ব্যবহার করা হোক। ফরেনসিক পরীক্ষা করা হোক। দ্রুত বিচারের জন্য আদালতের শূন্যপদ পূরণ করুক সরকার। থানায় গেলে পুলিশ অভিযোগ নিক, এটার নিশ্চয়তা দরকার। এসবের দাবি না তুলে এনকাউন্টারের কথা বলা সভ্যতার বিরোধী।”
ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ