১২:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

পশ্চিমবঙ্গে এখন মানুষ মারার সুপারি নিতে কার্ডবিলি

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ১১:১৮:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১৬০৬ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফুল বা হাফ মার্ডার করতে চাইলে যোগাযোগ করুন। এরকম কার্ড বিলি করলেন এক যুবক। পশ্চিমবঙ্গের ক্যানিংয়ে।

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের পথের কাঁটা বলে একটা কাহিনি আছে। গোয়েন্দা ব্যোমকেশ বক্সীর কাহিনি। সেখানে খুনি কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল এই বলে যে, “যদি কেহ পথের কাঁটা দূর করিতে চান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার সময় হোয়াইটওয়ে লেড্‌ল’র দোকানের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ল্যাম্পপোস্টে হাত রাখিয়া দাঁড়াইয়া থাকিবেন।”

আর ক্যানিংয়ে গত কয়েকদিন ধরে যে ভিজিটিং কার্ড ভাইরাল হয়ে ঘুরেছে, তাতে লেখা ছিল, ‘মানুষ হাফ বা ফুল মার্ডার করা হয়।’

পথের কাঁটা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩৪ সালে। ব্রিটিশ আমল। স্বাধীনতার তখনো ১৩ বছর দেরি আছে। আর ক্যানিংয়ের ঘটনা ঘটলো ২০২৩ সালে। এই ৮৯ বছরে আমরা নিঃসন্দেহে অনেকটাই এগিয়েছি। এখন আর কোনো লুকোছাপার দরকার হয় না। পথের কাঁটা সরাবার জন্য সরাসরি সুপারি কিলারকে দায়িত্ব দিলেই ফুল বা হাফ মার্ডার করার কাজটা সেই নিয়ে নেয়। সেই কথাটা ছাপিয়ে জানানোর সাহসও সে রাখে।

ফলে আমরা এগিয়েছি তো বটেই। এখন এমনই অবস্থা সুপারি কিলাররা পয়সার বিনিময়ে মানুষ মারবে সে কথাটা প্রচার করতেও ভয় পায় না। এই কার্ডটা গত কয়েকদিন ধরে এলাকায় ঘুরছে, তাতে ছবি ও নাম সবই দেয়া ছিল, তবু তো পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। আসলে ব্যবস্থা নেব বললেই তো আর নেয়া য়ায় না। তার জন্য অনেক হিসাব করতে হয়। অনেকটা সেই গেছোদাদাকে খোঁজার মতো। নীল, লাল না সবুজের গল্প আছে, কোন গেছোদাদার সঙ্গে কার যোগাযোগ তা দেখতে হবে। কে আর কেঁচো খুঁড়তে সাপ চায়। তার থেকে কিছু না করা ভালো। সরকারি চাকুরেদের কাজ না করলে কিছু হয় না।

পুলিশ অবশ্য মোরসেলিম মোল্লা ওরফে বুলেটকে গ্রেপ্তার করেছে।  তার বয়স ১৮ বছরের মতো। আগেও সে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। বেআইনি অস্ত্র পাচারের অভিযোগে। নাবালক বলে জামিন পেয়ে যায়। তার বাড়ি থেকে বন্দুক, দুই রাউন্ড গুলি ও ভিজিটিং কার্ড পেয়েছে পুলিশ। পুলিশ তদন্ত করে জানতে পেরেছিল, এলাকায় যাদের পারfবারিক বা অন্য কারো সঙ্গে ঝগড়া ছিল, তাদের কাছে এই কার্ড দিয়ে এসেছিল বুলেট। এলাকায় সবাই তাকে ভয় পেত। কারণ, কিছু হলেই সে খুন করার হুমকি দিত।

তা পশ্চিমবঙ্গে খুন-টুন এখন জলভাত। মানুষের মৃত্যু নিয়ে কেউ বিশেষ আর মাথা ঘামায় না। এতদিনে জানা হয়ে গেছে, ভোট এলে মানুষ মারা যাবে। গুলি, বোমা বা গলায় ফাঁস দিয়ে। ভোট না এলেও মারা যাবে। কারণ, টিকে থাকার জন্য তো কাজ করতে হবে। কাজ মানে তোলাবাজি, সিন্ডিকেট, দাদাগিরি, এলাকা দখল। তা এইসব করতে গেলে দু-চারটে লাশ পড়বে। এ আর এমন কী কথা।

 

পুলিশ জানিয়েছে, তারা এখন দেখছে বুলেট মানসিক দিক থেকে প্রকৃতিস্থ কিনা। সেসব চিকিৎসকরা বলতে পারবেন। কিন্তু সে প্রকৃতিস্থ বা অপ্রকৃতিস্থ সেটা প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হলো পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতিটা এখন কোন জায়গায় পৌঁছেছে? এরকম কার্ড পেয়েও মানুষ হয় চুপ করে থাকে, না হয় সামাজিক মাধ্যমে দিয়ে ভাইরাল করে। তারপর পুলিশ নড়েচড়ে বসে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে অতীতে অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও এই অবস্থা।

আসলে পুরো পশ্চিমবঙ্গটাই তো বারুদের স্তুপের উপর দাঁড়িয়ে। পঞ্চায়েত ভোটে মুড়িমুড়কির মতো বোমা ও গুলির কথা ভাবুন। তারপর বাজির কারখানায় একের পর এক বিস্ফোরণের কথা মনে করুন। প্রতিটি বিস্ফোরণের পর স্থানীয় মানুষ অভিযোগ করেছেন, কারখানায় বোমা বানানো হত। এই বোমা, গুলি, মৃত্যু, ঝামেলা, ভয় দেখানো এখন এতটাই গা -সহা হয়ে গেছে যে, কারো কোনো হেলদোল হয় না। এসব নিয়েই তো বেঁচে থাকতে হবে। কারণ, প্রতিবাদ করলে তো উল্টে জীবনের গ্যারান্টিই থাকবে না। তার চেয়ে এই তো ভালো। বরং বলা যাক, জমকালো সত্যটা হলো, সব ঠিক আছে।

কোন ক্ষুধিত পাষাণে কোন মেহের আলি ‘সব ঝুঠ হ্যায়’ বলে চিৎকার করে, ওরকম অপ্রকৃতিস্থের কথায় কান না দিলেই হলো। চোখের সামনে চরমতম অপরাধ করার পর কারো যখন চরম দণ্ড হয়, তার জন্য সহানুভূতির ধারা পর্যন্ত বর্ষার নদীর মতো বইতে থাকে।

তার থেকে সবাইকে সবার মতো থাকতে দেয়াই ভালো। পুলিশ পুলিশের মতোই থাকুক, গুণ্ডারা তাদের মতো, অপরাধীরা তাদের মতো, দাদা-দিদিরা তাদের মতো করেই বাঁচুন। আর সাধারণ মানুষ? তারাও  কলুর ঘানির মতো পিষতে থাকুক। নিরাপত্তা, সুরক্ষার মতো গালভারি শব্দের দরকারটা কী? আমরা সবাইকে তো সবার মতো থাকতে দিচ্ছি। তাদের এই থাকাটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাকিরওা থাকে থাকবে, না থাকলেই বা কার বা কী যায় আসে!

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

পশ্চিমবঙ্গে এখন মানুষ মারার সুপারি নিতে কার্ডবিলি

আপডেট সময় : ১১:১৮:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ফুল বা হাফ মার্ডার করতে চাইলে যোগাযোগ করুন। এরকম কার্ড বিলি করলেন এক যুবক। পশ্চিমবঙ্গের ক্যানিংয়ে।

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের পথের কাঁটা বলে একটা কাহিনি আছে। গোয়েন্দা ব্যোমকেশ বক্সীর কাহিনি। সেখানে খুনি কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল এই বলে যে, “যদি কেহ পথের কাঁটা দূর করিতে চান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার সময় হোয়াইটওয়ে লেড্‌ল’র দোকানের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ল্যাম্পপোস্টে হাত রাখিয়া দাঁড়াইয়া থাকিবেন।”

আর ক্যানিংয়ে গত কয়েকদিন ধরে যে ভিজিটিং কার্ড ভাইরাল হয়ে ঘুরেছে, তাতে লেখা ছিল, ‘মানুষ হাফ বা ফুল মার্ডার করা হয়।’

পথের কাঁটা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩৪ সালে। ব্রিটিশ আমল। স্বাধীনতার তখনো ১৩ বছর দেরি আছে। আর ক্যানিংয়ের ঘটনা ঘটলো ২০২৩ সালে। এই ৮৯ বছরে আমরা নিঃসন্দেহে অনেকটাই এগিয়েছি। এখন আর কোনো লুকোছাপার দরকার হয় না। পথের কাঁটা সরাবার জন্য সরাসরি সুপারি কিলারকে দায়িত্ব দিলেই ফুল বা হাফ মার্ডার করার কাজটা সেই নিয়ে নেয়। সেই কথাটা ছাপিয়ে জানানোর সাহসও সে রাখে।

ফলে আমরা এগিয়েছি তো বটেই। এখন এমনই অবস্থা সুপারি কিলাররা পয়সার বিনিময়ে মানুষ মারবে সে কথাটা প্রচার করতেও ভয় পায় না। এই কার্ডটা গত কয়েকদিন ধরে এলাকায় ঘুরছে, তাতে ছবি ও নাম সবই দেয়া ছিল, তবু তো পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। আসলে ব্যবস্থা নেব বললেই তো আর নেয়া য়ায় না। তার জন্য অনেক হিসাব করতে হয়। অনেকটা সেই গেছোদাদাকে খোঁজার মতো। নীল, লাল না সবুজের গল্প আছে, কোন গেছোদাদার সঙ্গে কার যোগাযোগ তা দেখতে হবে। কে আর কেঁচো খুঁড়তে সাপ চায়। তার থেকে কিছু না করা ভালো। সরকারি চাকুরেদের কাজ না করলে কিছু হয় না।

পুলিশ অবশ্য মোরসেলিম মোল্লা ওরফে বুলেটকে গ্রেপ্তার করেছে।  তার বয়স ১৮ বছরের মতো। আগেও সে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। বেআইনি অস্ত্র পাচারের অভিযোগে। নাবালক বলে জামিন পেয়ে যায়। তার বাড়ি থেকে বন্দুক, দুই রাউন্ড গুলি ও ভিজিটিং কার্ড পেয়েছে পুলিশ। পুলিশ তদন্ত করে জানতে পেরেছিল, এলাকায় যাদের পারfবারিক বা অন্য কারো সঙ্গে ঝগড়া ছিল, তাদের কাছে এই কার্ড দিয়ে এসেছিল বুলেট। এলাকায় সবাই তাকে ভয় পেত। কারণ, কিছু হলেই সে খুন করার হুমকি দিত।

তা পশ্চিমবঙ্গে খুন-টুন এখন জলভাত। মানুষের মৃত্যু নিয়ে কেউ বিশেষ আর মাথা ঘামায় না। এতদিনে জানা হয়ে গেছে, ভোট এলে মানুষ মারা যাবে। গুলি, বোমা বা গলায় ফাঁস দিয়ে। ভোট না এলেও মারা যাবে। কারণ, টিকে থাকার জন্য তো কাজ করতে হবে। কাজ মানে তোলাবাজি, সিন্ডিকেট, দাদাগিরি, এলাকা দখল। তা এইসব করতে গেলে দু-চারটে লাশ পড়বে। এ আর এমন কী কথা।

 

পুলিশ জানিয়েছে, তারা এখন দেখছে বুলেট মানসিক দিক থেকে প্রকৃতিস্থ কিনা। সেসব চিকিৎসকরা বলতে পারবেন। কিন্তু সে প্রকৃতিস্থ বা অপ্রকৃতিস্থ সেটা প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হলো পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতিটা এখন কোন জায়গায় পৌঁছেছে? এরকম কার্ড পেয়েও মানুষ হয় চুপ করে থাকে, না হয় সামাজিক মাধ্যমে দিয়ে ভাইরাল করে। তারপর পুলিশ নড়েচড়ে বসে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে অতীতে অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও এই অবস্থা।

আসলে পুরো পশ্চিমবঙ্গটাই তো বারুদের স্তুপের উপর দাঁড়িয়ে। পঞ্চায়েত ভোটে মুড়িমুড়কির মতো বোমা ও গুলির কথা ভাবুন। তারপর বাজির কারখানায় একের পর এক বিস্ফোরণের কথা মনে করুন। প্রতিটি বিস্ফোরণের পর স্থানীয় মানুষ অভিযোগ করেছেন, কারখানায় বোমা বানানো হত। এই বোমা, গুলি, মৃত্যু, ঝামেলা, ভয় দেখানো এখন এতটাই গা -সহা হয়ে গেছে যে, কারো কোনো হেলদোল হয় না। এসব নিয়েই তো বেঁচে থাকতে হবে। কারণ, প্রতিবাদ করলে তো উল্টে জীবনের গ্যারান্টিই থাকবে না। তার চেয়ে এই তো ভালো। বরং বলা যাক, জমকালো সত্যটা হলো, সব ঠিক আছে।

কোন ক্ষুধিত পাষাণে কোন মেহের আলি ‘সব ঝুঠ হ্যায়’ বলে চিৎকার করে, ওরকম অপ্রকৃতিস্থের কথায় কান না দিলেই হলো। চোখের সামনে চরমতম অপরাধ করার পর কারো যখন চরম দণ্ড হয়, তার জন্য সহানুভূতির ধারা পর্যন্ত বর্ষার নদীর মতো বইতে থাকে।

তার থেকে সবাইকে সবার মতো থাকতে দেয়াই ভালো। পুলিশ পুলিশের মতোই থাকুক, গুণ্ডারা তাদের মতো, অপরাধীরা তাদের মতো, দাদা-দিদিরা তাদের মতো করেই বাঁচুন। আর সাধারণ মানুষ? তারাও  কলুর ঘানির মতো পিষতে থাকুক। নিরাপত্তা, সুরক্ষার মতো গালভারি শব্দের দরকারটা কী? আমরা সবাইকে তো সবার মতো থাকতে দিচ্ছি। তাদের এই থাকাটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাকিরওা থাকে থাকবে, না থাকলেই বা কার বা কী যায় আসে!

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ