ফ্রান্সে ঐতিহ্যবাহি পাউরুটি আবার চালু করার উদ্যোগ
- আপডেট সময় : ০৫:০৭:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০২৩
- / ১৬০৩ বার পড়া হয়েছে
ইউরোপের অনেক দেশের পাউরুটির সুনাম রয়েছে৷ ফ্রান্সে হাতে গোনা কিছু ‘অরিজিনাল বেকার’ ঐতিহ্যবাহী কৌশল ও যতটা সম্ভব মৌলিক ধ্যানধারণা আঁকড়ে ধরে গ্রাম্য পাউরুটি প্রস্তুত করছেন৷
প্যারিসের মাঝে ক্ষুদ্র বেকারির দোকানে প্রায় কোনো যন্ত্রই নেই৷ দাদা-নানার যুগের মতো সব কাজ হাতে করে করাই সর্বোচ্চ প্রাধান্য পায়৷ যে সব রুটি প্রস্তুতকারক নতুন করে ফ্রান্সের ঐতিহ্য তুলে ধরছেন, ৪১ বছর বয়সি মাক্সিম বুসি তাঁদের মধ্যেও শুদ্ধবাদী হিসেবে পরিচিত৷ এমনকি তার কাজের সরঞ্জামগুলিও হাতে তৈরি৷ মাক্সিম বলন, ‘‘কিছুকাল আগে আমি ময়দা মাখার এই সরঞ্জাম তৈরি করেছি৷ সঠিক উচ্চতার তাগিদে গামলাটি এক ম্যাসাজ টেবিলের উপর বসিয়েছি৷”
বেকিং-এর ক্ষেত্রে ফরাসিদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে৷ সবচেয়ে পরিচিত পদ মাখনের ক্রোয়াসঁ, চকোলেট-ভরা পাউরুটি এবং অবশ্যই বাগেট৷ বুসি অবশ্য সে সব রুটি তৈরি করেন না৷ তার মতে, সেগুলির বেকিং প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল৷ তার উপর সুস্বাদু হলেও সেগুলির মধ্যে রাসায়নিক অ্যাডিটিভ রয়েছে৷
বুসির দাবি, তার ওভেন থেকে শুধু খাঁটি রুটি বের হয়৷ খাঁটি ‘সাওয়ার ডো’ পাউরুটি আজকাল ফ্রান্সে বিরল হয়ে গেছে৷ বুসির মতে, এই রুটির স্বাদ অসাধারণ৷ তাছাড়া অ্যালার্জির আশঙ্কাও থাকে না৷ তিনি অবশ্য আরও এক ধাপ এগোতে চান৷ তার মতো বেকার আবার প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে চান৷ যাদের সঙ্গে কাজ করেন, তাদের সঙ্গেও নিবিড় সম্পর্ক চান তিনি৷ মাক্সিম বলেন, ‘‘প্রায়ই বিভিন্ন মিস্ত্রী বা কারিগরদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক থাকে না৷ আমি কিন্তু সেই ব্যক্তিকে চিনি, যিনি ময়দা পেষেন৷ যে চাষি গমের চাষ করেন, তাকেও চিনি৷ এমন নিবিড় মানবিক বন্ধন আবার জাগিয়ে তোলা জরুরি৷ আমরা আবার জীবনের মৌলিক নির্যাসে ফিরে যেতে চাই, যা আমাদের শক্তি দেয়৷’’
প্যারিস শহরে মাক্সিম বুসির মতো বেকারির এখনো নতুনত্ব রয়েছে৷ তবে রাজধানীর বাইরে এমন পাউরুটি প্রস্তুতকারক আছেন, যারা আরো মৌলিক, প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে নিজেদের কাজ করেন৷ যেমন বঁজাম্যাঁ পেলেতিয়ে রুটির জন্য নিজেই গম চাষ করেন৷ পরিমাণের তুলনায় উচ্চ মান তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ বঁজাম্যাঁ বলেন, ‘‘আমি এমন গম চাষ করি, যেগুলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আর কিনতে পাওয়া যায় না৷ আমি আজকের প্রচলিত আধুনিক ময়দার থেকে ভিন্ন ধরনের ময়দা চাই৷’’
নিজের খামারে তিনি শুধু চাষি নন, সেই গমও নিজেই পেষেন এবং ময়দা দিয়ে পাউরুটি প্রস্তুত করেন৷ ফ্রান্সের প্রায় ৩৫ হাজার বেকারদের মধ্যে তথাকথিত ‘অরিজিনাল বেকার’ এখনো এক ছোট ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠী৷ কিন্তু তাঁদের প্রাচীন কৌশল আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ বঁজাম্যাঁ পেলেতিয়ে বলেন, ‘‘এখানে একটি পর্যায়েই ময়দা পেষা হয়৷ ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিলে গম প্রায় ১২-১৩ বার সিলিন্ডারের মধ্যে পেষা হয়৷ এই কল অনেক সহজ এবং একেবারে প্রাচীন পদ্ধতিতে কাজ করে৷’’
মৌলিক ও জীবনমুখী দর্শন পিজেন্ট বেকারদের মূলমন্ত্র৷ সে কারণে বুসি দিনে মাত্র চার ঘণ্টার জন্য নিজের দোকান খোলেন৷ পাড়ার ক্রেতাদের মনে কৌতূহল জন্মাচ্ছে৷ তাদের কাছে এমন ধ্যানধারণা বেশ ইন্টারেস্টিং৷
অরিজিনাল বেকার হিসেবে বুসি হয়তো ধনী হতে পারবেন না৷ তবে নিজের পেশা ও জীবন সম্পর্কে তিনি নাকি খুবই সন্তুষ্ট৷
ডয়চে ভেলে