বিজেপি দপ্তরে কর্মী বিক্ষোভ কি অশনি সঙ্কেত?
- আপডেট সময় : ১২:৩৪:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৩
- / ১৮২৯ বার পড়া হয়েছে
বিজেপির রাজ্য দপ্তরে নজিরবিহীন বিক্ষোভ দলীয় কর্মীদের৷ লোকসভা ভোটের আগে এই ঘটনায় অস্বস্তি গেরুয়া শিবিরে৷
পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল যখন লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করতে চলেছে, সেই সময় অন্দরের ক্ষোভ বিস্ফোরণের আকার নিল৷
দপ্তরে বিক্ষোভ
গত বুধবার বিজেপির বিক্ষুব্ধ কর্মীরা তাণ্ডব চালান সল্টলেকে দলীয় সদর দপ্তরে৷ বাঁশ ও ইট দিয়ে মূল ফটকের তালা ভাঙেন তারা৷ কেউ কেউ গেট ও পাঁচিল টপকে অফিস চত্বরে ঢুকে পড়েন৷
বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তরুণকান্তি ঘোষকে অবিলম্বে পদ থেকে সরানোর দাবি তোলেন বিক্ষুব্ধরা৷ কয়েকজন বিক্ষোভকারী অফিস চত্বরে ঢুকে পড়েন৷ সেখানে থাকা বিজেপি কর্মীরা বাধা দিলে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়৷ বিক্ষুব্ধদের মারধরে আহত হন এক বিজেপি কর্মী৷
এমন বিক্ষোভে হতচকিত বিজেপি দপ্তরের নিরাপত্তারক্ষীরা দোতলায় ওঠার গেট বন্ধ করে দেন৷ রাত পর্যন্ত দপ্তরের সামনে ধরনায় বসে স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধরা৷ নেতাদের কুশপুতুল পোড়ানো হয়৷
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ‘‘রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী ঠান্ডা ঘরে বসে পার্টি চালাচ্ছেন৷ গোষ্ঠী রাজনীতি করছেন৷ টাকার বিনিময়ে দলীয় পদ বিক্রি করছেন৷” কেন্দ্রীয় নেতা ও তথ্যপ্রযুক্তি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অমিত মালব্য, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও তাদের নিশানায় ছিলেন৷
একদিনেই এই বিক্ষোভ শেষ হয়নি৷ বিজেপির সাবেক রাজ্য দপ্তর মুরলীধর সেন লেনের বাইরেও বিক্ষোভ হয় পরের দিন, বৃহস্পতিবার৷ প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা স্লোগান দেন৷ নেতৃত্বের কুশপুতুল পোড়ানোর পাশাপাশি ছবিতে লাথি ও জুতো মারেন তারা৷ একইভাবে অমিতাভ, মালব্যদের বিরুদ্ধে আঙুল তোলা হয়৷
ভিন্ন সুরে নেতৃত্ব
দলীয় কোন্দল বা বিরোধের কথা শোনা গেলেও এ ধরনের বিক্ষোভ নজিরবিহীন৷ এতে রীতিমতো শোরগোল পড়েছে গেরুয়া শিবিরে৷ বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘আমি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না৷ যারা সাংগঠনিক দায়িত্বে আছেন তারা বলবেন৷ তবে এই ধরনের ঘটনা কাম্য নয়৷”
বিক্ষোভ নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যেই ভিন্ন সুর শোনা যাচ্ছে৷ বিক্ষুব্ধদের নিশানায় থাকা সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘দল বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করবে না৷ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ প্রয়োজনে বহিষ্কার করা হবে৷”
সাবেক রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বিক্ষোভের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুললেও বলেন, ‘‘অনেক নেতা-কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ আছে৷ তাদের কথা শোনার কেউ নেই৷”
বিক্ষুব্ধদের সাজার বিধান নিয়ে তার মন্তব্য, ‘‘শাস্তি কোনো সমাধান নয়৷ ওদের ডেকে কথা বলা উচিত৷”
তৃণমূলের হাত?
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এর পিছনে তৃণমূলের হাত দেখছেন৷ তার মন্তব্য, ‘‘কারা বাসে করে সল্টলেক ও মুরলীধর সেন লেনে লোকজন পাঠিয়েছে, তা আমরা জানি৷ এ সব করে লাভ নেই৷ বিজেপির কোনো সমস্যা হবে না৷”
এর পাল্টা তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘শুভেন্দু সব জায়গায় তৃণমূলকে দেখছেন৷ আমাদের কাছে তো খবর, শুভেন্দুই লোক পাঠিয়ে করাচ্ছেন৷ শুভেন্দু রাজ্য বিজেপিকে দখল করতে চাইছেন, তার লক্ষ্য সুকান্তকে সরিয়ে সভাপতি হওয়া৷”
বিজেপি নেতা, অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দের দাবি, ‘‘দলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বক্তব্য থাকতেই পারে, কিন্তু যারা দলের পতাকা পায়ের নীচে ফেলেছেন, তারা বিজেপির কর্মী হতে পারেন না৷”
বিক্ষোভের প্রভাব
বামেদের মতো বিজেপিও রেজিমেন্টেড দল৷ সেখানে এ ধরনের বিক্ষোভ বেমানান৷ প্রবীণ সংবাদিক দেবাশিস দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘পুরনোদের সঙ্গে নতুন যোগ দেয়া কর্মীদের দ্বন্দ্ব আছে বিজেপিতে৷ আদি বিজেপি কর্মীরা কল্কে পাচ্ছেন না, নতুনরা বেশি গুরুত্ব পেলে ক্ষোভ জন্মাবেই৷”
লোকসভা নির্বাচনে এর কী প্রভাব পড়তে পারে? দেবাশিসের বক্তব্য, ‘‘যে বুথভিত্তিক সংগঠন তৈরির কথা ছিল, তা অধিকাংশ জেলায় বিজেপি করতে পারেনি৷ অমিত শাহ বলেছিলেন ৩৫টি আসন পশ্চিমবঙ্গ থেকে চাই৷ এ ধরনের বিশৃঙ্খলা চলতে থাকলে এই রাজ্যে বিজেপির আসন সংখ্যা দুই অঙ্কেও পৌঁছবে না৷”
ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ