০২:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

রেমিট্যান্সের ডলার কোথায় যায়?

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ১০:৩৭:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২
  • / ১৫৯৯ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি নয় মাসে তিনগুণের মত বাড়লেও রেমিট্যান্স কমছে, যা বিস্ময়কর। ডলারের প্রধান দুইটি খাত রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স। রপ্তানি আয় কমছে।

সেই সঙ্গে কমছে রেমিট্যান্স। এই ধারা অব্যাহত থাকলে রিজার্ভ পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন প্রবাসীরা বাড়তি আয় ঠিকই করছেন কিন্তু হুন্ডি চক্রের কারণে বাংলাদেশে টাকা আসছে, ডলার থেকে যাচ্ছে দেশের বাইরে। এর নেপথ্যে দেশ থেকে টাকা পাচারকারী চক্র সক্রিয়। এই সময়ে টাকা পাচার বেড়ে গেছে। এটা বন্ধ করা গেলে বাংলাদেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে এখন যা রেমিট্যান্স আসছে তার প্রায় দুই গুণ আসার সম্ভাবনা আছে।

জনশক্তি রপ্তানি বনাম রেমিট্যান্স:

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)  হিসেবে গত বছরের প্রথম ৯ মাসের তুলনায় এই বছরের একই সময়ে জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে তিনগুণ। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে  আট লাখ ৭৪ হাজার ৭৩৯ জন বাংলাদেশি কাজ নিয়ে বিদেশে যায়। গত বছর একই সময়ে এই সংখ্যা ছিলো তিন লাখ ১৭ হাজার ৭৯৯ জন।  সেই হিসাবে প্রথম ৯ মাসে জনশক্তি রপ্তানি বেশি হয়েছে হয় পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪০ জন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে গত বছরের প্রথম ৯ মাসে রেমিট্যান্স আসে এক লাখ ৭৭ হাজার ৫৮৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা (১৭.২৪ বিলিয়ন ডলার)। আর চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৯৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা (১৬.৪৬  বিলিয়ন ডলার)। জনশক্তি রপ্তানি তিনগুণ বাড়লেও রেমিট্যান্স কম এসেছে সাত হাজার ৯৯০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

অক্টোবরেও রেমিট্যান্স কমে হয়েছে ১.৫২ বিলিয়ন ডলার। যা আগের বছর অক্টোবরে ছিলো ১.৬৪ বিলিয়ন ডলার। গত মে মাস থেকে রেমিট্যান্স কমতে থাকে। জুলাইয়ে কোরবানির ঈদের কারণে রেমিট্যান্স বাড়ে। কিন্তু এরপর আবার তা কমতে শুরু করে।

কিন্তু চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ১১ দিনের যে হিসাব পাওয়া গেছে তাতে রেমিট্যান্স নিয়ে আশঙ্কা আরো বেড়েছে। ১১ দিনে দেশে এসেছে ৬৫৮.৫ মিলিয়ন ডলার। এই গতিতে আসলে চলতি মাস শেষে রেমিট্যান্স-এর পরিমান ১.৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবেনা। যা গত মাসের তুলনায়ও কম হবে।

ডলারের রেট যখন ইস্যু:

সরকার রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে শতকরা ২.৫ টাকা নগদ প্রণোদনা, ব্যাং ফি বাতিল করার পরও রেমিট্যান্সের কেন এই নিম্নগতি? জনশক্তি রপ্তানিও তো বেড়েছে। এর পিছনে বিশ্লেষকেরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোকে দায়ী করছেন। কারণ এখনো হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠালে তাদের লাভ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ডলারের একাধিক রেট বেধে দিয়েছে । রপ্তানির জন্য এক ডলারে দেয়া হয় ৯৯.৫ টাকা। আমদানিতে ১.৪ টাকা। রেমিট্যান্সের জন্য দেয়া হয় ১০৭ টাকা। এর সঙ্গে শতকরা ২.৫ টাকা নগদ প্রণোদনা দেয়ার পরও প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে হুন্ডিতে টাকা পাঠালে তাদের লাভ। কারণ খোলা বাজারে এখন এক ডলারে ১১২ থেকে ১১৫ ডলার টাকা পাওয়া যাচ্ছে। আর দুই-একটি ব্যাংক ১০৭ টাকারও কম দিচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। ফলে দেশ রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

পাচার ও হুন্ডি চক্র:

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান  মনে করেন প্রধানত তিনটি কারণে কাঙ্খিত রেমিট্যান্স আসছে না।

  • শ্রমশক্তি রপ্তানি বাড়লেও তারা হয়তোবা যাওয়ার পর এখনো রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেননি।
  • ডলারের সঙ্গে টাকার যে বিনিময় হার তা প্রবাসীদের জন্য যথেষ্ঠ নয়। অফিসিয়াল রেট এবং শতকরা আড়াই ভাগ প্রণোদনার পরও প্রবাসীদের কাছে হুন্ডির রেট বেশি। তাই তারা হুন্ডির দিকে ঝুঁকছে।
  • তবে সবচেয়ে বড় কারণ হুন্ডি চক্র। তারা প্রবাসীদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে। এর পিছনে আছে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারকারী চক্র। তারা এখানে টাকা পরিশোধ করে বিদেশে ডলার নেয়। এভাবেই তারা পাচার করছে। এখন পাচার আরো বেড়ে গেছে।

তার কথা,” আমাদের নানা গবেষণায় দেখা গেছে, এই হুন্ডি বন্ধ করা গেলে রেমিট্যান্স এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে।  এটা শুধু এখন নয়, আগেও একই  ফল পাওয়া যেত।”

তিনি বলেন,”আসলে শক্ত হাতে টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যদি আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি তাহলে হুন্ডি অনেকটাই বন্ধ হয়ে যেত। টাকা পাচারকারীরা পাচারের জন্য ডলারের অনেক বেশি রেট দেয়। কারণ তারা টাকা পাচার করতে চায়। সেটাই তাদের আসল টার্গেট। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের উল্টো সুবিধা দেয়া হচ্ছে।”

টাকার কাছে দেশপ্রেম মার খায়:

যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন,”এই হুন্ডি বন্ধ করতে পারলে আমার ধারণা মাসে তিন বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসত বৈধ চ্যানেলে । সেটা করতে হলে ডলারের  রেট ঠিক করতে হবে। যেখানে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে বেশি টাকা পাওয়া যায় সেখানে দেশপ্রেম টাকার কাছে মার খায়। তবে নতুন যে কর্মীরা গেছেন তারা হয়তোবা অদক্ষ হওয়ার কারণেও যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠানোর কথা সে পারিমাণ হচ্ছে না। সেটা আলাদা কথা। সেটা বাদ দিলেও হুন্ডি বন্ধ হলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স দ্বিগুণ হয়ে যাবে।”

তার কথা,”এখন হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে এক ডলারে ১১৫-১১৬ টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়। প্রবাসীদের সেটা পুষিয়ে দিতে হবে। এরসঙ্গে আরো কিছু প্রণোদনা থাকতে পারে। যেমন, ব্যাংকিং চ্যানেলে নিয়মতি প্রবাসী আয় পাঠালে এর বিপরীতে কম সুদে ঋণ দেয়া, কোনো কারণে এক মাস পাঠাতে না পরলে সেটা ব্যাংক থেকে অ্যাডভান্স দেয়া, গৃহঋণের সুদ কম করাসহ আরো অনেক সুবিধা দিতে হবে। তাতে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হবে।”

এই দুইজনই মনে করেন, এর বাইরে অর্থ পাচারকারী ও হুন্ডি চক্রের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ যারা টাকা পাচার করে তাদের কাছে অনেক সময় ডলারের রেট কোনো বিষয় নয়। তারা উচ্চ রেটে প্রলুব্ধ করে। সেটা খোলা বাজারের রেটের চেয়েও বেশি হতে পারে। কারণ তারা দেশ থেকে যেকোনো উপায়ে অর্থ সরিয়ে ফেলতে চায়।

ডয়চে ভেলে (ডিডব্লিউ)

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

রেমিট্যান্সের ডলার কোথায় যায়?

আপডেট সময় : ১০:৩৭:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২
বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি নয় মাসে তিনগুণের মত বাড়লেও রেমিট্যান্স কমছে, যা বিস্ময়কর। ডলারের প্রধান দুইটি খাত রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স। রপ্তানি আয় কমছে।

সেই সঙ্গে কমছে রেমিট্যান্স। এই ধারা অব্যাহত থাকলে রিজার্ভ পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন প্রবাসীরা বাড়তি আয় ঠিকই করছেন কিন্তু হুন্ডি চক্রের কারণে বাংলাদেশে টাকা আসছে, ডলার থেকে যাচ্ছে দেশের বাইরে। এর নেপথ্যে দেশ থেকে টাকা পাচারকারী চক্র সক্রিয়। এই সময়ে টাকা পাচার বেড়ে গেছে। এটা বন্ধ করা গেলে বাংলাদেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে এখন যা রেমিট্যান্স আসছে তার প্রায় দুই গুণ আসার সম্ভাবনা আছে।

জনশক্তি রপ্তানি বনাম রেমিট্যান্স:

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)  হিসেবে গত বছরের প্রথম ৯ মাসের তুলনায় এই বছরের একই সময়ে জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে তিনগুণ। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে  আট লাখ ৭৪ হাজার ৭৩৯ জন বাংলাদেশি কাজ নিয়ে বিদেশে যায়। গত বছর একই সময়ে এই সংখ্যা ছিলো তিন লাখ ১৭ হাজার ৭৯৯ জন।  সেই হিসাবে প্রথম ৯ মাসে জনশক্তি রপ্তানি বেশি হয়েছে হয় পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪০ জন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে গত বছরের প্রথম ৯ মাসে রেমিট্যান্স আসে এক লাখ ৭৭ হাজার ৫৮৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা (১৭.২৪ বিলিয়ন ডলার)। আর চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৯৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা (১৬.৪৬  বিলিয়ন ডলার)। জনশক্তি রপ্তানি তিনগুণ বাড়লেও রেমিট্যান্স কম এসেছে সাত হাজার ৯৯০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

অক্টোবরেও রেমিট্যান্স কমে হয়েছে ১.৫২ বিলিয়ন ডলার। যা আগের বছর অক্টোবরে ছিলো ১.৬৪ বিলিয়ন ডলার। গত মে মাস থেকে রেমিট্যান্স কমতে থাকে। জুলাইয়ে কোরবানির ঈদের কারণে রেমিট্যান্স বাড়ে। কিন্তু এরপর আবার তা কমতে শুরু করে।

কিন্তু চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ১১ দিনের যে হিসাব পাওয়া গেছে তাতে রেমিট্যান্স নিয়ে আশঙ্কা আরো বেড়েছে। ১১ দিনে দেশে এসেছে ৬৫৮.৫ মিলিয়ন ডলার। এই গতিতে আসলে চলতি মাস শেষে রেমিট্যান্স-এর পরিমান ১.৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবেনা। যা গত মাসের তুলনায়ও কম হবে।

ডলারের রেট যখন ইস্যু:

সরকার রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে শতকরা ২.৫ টাকা নগদ প্রণোদনা, ব্যাং ফি বাতিল করার পরও রেমিট্যান্সের কেন এই নিম্নগতি? জনশক্তি রপ্তানিও তো বেড়েছে। এর পিছনে বিশ্লেষকেরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোকে দায়ী করছেন। কারণ এখনো হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠালে তাদের লাভ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ডলারের একাধিক রেট বেধে দিয়েছে । রপ্তানির জন্য এক ডলারে দেয়া হয় ৯৯.৫ টাকা। আমদানিতে ১.৪ টাকা। রেমিট্যান্সের জন্য দেয়া হয় ১০৭ টাকা। এর সঙ্গে শতকরা ২.৫ টাকা নগদ প্রণোদনা দেয়ার পরও প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে হুন্ডিতে টাকা পাঠালে তাদের লাভ। কারণ খোলা বাজারে এখন এক ডলারে ১১২ থেকে ১১৫ ডলার টাকা পাওয়া যাচ্ছে। আর দুই-একটি ব্যাংক ১০৭ টাকারও কম দিচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। ফলে দেশ রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

পাচার ও হুন্ডি চক্র:

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান  মনে করেন প্রধানত তিনটি কারণে কাঙ্খিত রেমিট্যান্স আসছে না।

  • শ্রমশক্তি রপ্তানি বাড়লেও তারা হয়তোবা যাওয়ার পর এখনো রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেননি।
  • ডলারের সঙ্গে টাকার যে বিনিময় হার তা প্রবাসীদের জন্য যথেষ্ঠ নয়। অফিসিয়াল রেট এবং শতকরা আড়াই ভাগ প্রণোদনার পরও প্রবাসীদের কাছে হুন্ডির রেট বেশি। তাই তারা হুন্ডির দিকে ঝুঁকছে।
  • তবে সবচেয়ে বড় কারণ হুন্ডি চক্র। তারা প্রবাসীদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে। এর পিছনে আছে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারকারী চক্র। তারা এখানে টাকা পরিশোধ করে বিদেশে ডলার নেয়। এভাবেই তারা পাচার করছে। এখন পাচার আরো বেড়ে গেছে।

তার কথা,” আমাদের নানা গবেষণায় দেখা গেছে, এই হুন্ডি বন্ধ করা গেলে রেমিট্যান্স এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে।  এটা শুধু এখন নয়, আগেও একই  ফল পাওয়া যেত।”

তিনি বলেন,”আসলে শক্ত হাতে টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যদি আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি তাহলে হুন্ডি অনেকটাই বন্ধ হয়ে যেত। টাকা পাচারকারীরা পাচারের জন্য ডলারের অনেক বেশি রেট দেয়। কারণ তারা টাকা পাচার করতে চায়। সেটাই তাদের আসল টার্গেট। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের উল্টো সুবিধা দেয়া হচ্ছে।”

টাকার কাছে দেশপ্রেম মার খায়:

যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন,”এই হুন্ডি বন্ধ করতে পারলে আমার ধারণা মাসে তিন বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসত বৈধ চ্যানেলে । সেটা করতে হলে ডলারের  রেট ঠিক করতে হবে। যেখানে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে বেশি টাকা পাওয়া যায় সেখানে দেশপ্রেম টাকার কাছে মার খায়। তবে নতুন যে কর্মীরা গেছেন তারা হয়তোবা অদক্ষ হওয়ার কারণেও যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠানোর কথা সে পারিমাণ হচ্ছে না। সেটা আলাদা কথা। সেটা বাদ দিলেও হুন্ডি বন্ধ হলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স দ্বিগুণ হয়ে যাবে।”

তার কথা,”এখন হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে এক ডলারে ১১৫-১১৬ টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়। প্রবাসীদের সেটা পুষিয়ে দিতে হবে। এরসঙ্গে আরো কিছু প্রণোদনা থাকতে পারে। যেমন, ব্যাংকিং চ্যানেলে নিয়মতি প্রবাসী আয় পাঠালে এর বিপরীতে কম সুদে ঋণ দেয়া, কোনো কারণে এক মাস পাঠাতে না পরলে সেটা ব্যাংক থেকে অ্যাডভান্স দেয়া, গৃহঋণের সুদ কম করাসহ আরো অনেক সুবিধা দিতে হবে। তাতে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হবে।”

এই দুইজনই মনে করেন, এর বাইরে অর্থ পাচারকারী ও হুন্ডি চক্রের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ যারা টাকা পাচার করে তাদের কাছে অনেক সময় ডলারের রেট কোনো বিষয় নয়। তারা উচ্চ রেটে প্রলুব্ধ করে। সেটা খোলা বাজারের রেটের চেয়েও বেশি হতে পারে। কারণ তারা দেশ থেকে যেকোনো উপায়ে অর্থ সরিয়ে ফেলতে চায়।

ডয়চে ভেলে (ডিডব্লিউ)