সময় থাকতে দাবানল শনাক্ত করার অভিনব প্রযুক্তি
- আপডেট সময় : ১১:৫৬:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ১৫৯৭ বার পড়া হয়েছে
চলতি বছরও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চরম তাপপ্রবাহ জীবন দূর্বিসহ করে তুলেছে৷ দাবানলের প্রকোপে অনেক জঙ্গলের বিশাল ক্ষতি হয়েছে৷ আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে কিছু মানুষ এমন বিপর্যয় এড়ানোর ব্রত নিয়েছেন৷
প্রতি বছর দাবানলের কারণে লাখ লাখ হেক্টর জঙ্গল ধ্বংস হয়ে যায়৷ সেইসঙ্গে প্রায় ৮০০ কোটি টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনও ঘটে, যা বিশ্বব্যাপী সিওটু নির্গমনের প্রায় ২০ শতাংশের সমান৷ বিশাল মাত্রার পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতিও হয়৷ ড্রিয়াড নেটওয়ার্ক্সের কর্ণধার কার্স্টেন ব্রিংকশুল্টে, বলেন, ‘‘২০১৮ সালে আমি প্রথম বার টেলিভিশনের পর্দা, সংবাদমাধ্যমে অ্যামাজন অঞ্চল, অস্ট্রেলিয়ার বিশাল দাবানল দেখেছিলাম৷ ফ্রাইডেস ফর ফিউচার আন্দোলন পথে নেমেছিল, আমার নিজের মেয়েও তাতে শামিল হয়েছিল৷ সেই প্রাথমিক ধাক্কা খেয়ে মনে হয়েছিল, আমাকে কিছু একটা করতেই হবে৷”
যেমন ভাবনা, তেমন কাজ৷ বিজ্ঞানী, সফ্টওয়্যার ও কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদের এক টিম গড়ে তুলে তিনি যতটা আগে সম্ভব দাবানল শনাক্ত করার লক্ষ্যে নতুন এক সিস্টেম সৃষ্টি করেন৷ গন্ধ টের পায় এমন বিশেষ সেন্সর আলট্রা আর্লি ডিটেকশন সম্ভব করে৷ এক অর্থে সেগুলি অত্যন্ত উন্নত যান্ত্রিক নাক৷
কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবে ইয়ুর্গেন ম্যুলার অনেক বছর ধরে একই ধরনের সিস্টেম নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন৷ এক পরীক্ষামূলক জঙ্গলে তিনি নতুন সেন্সরের কার্যকারিতা পরীক্ষা করছেন৷ তিন মিটার উচ্চতায় দক্ষিণ দিকে মুখ করে সৌরশক্তিচালিত সেন্সর বসানো আছে৷ অত্যন্ত কম আলো থাকলেও সেটি কাজ করে৷ ছায়ায় ঢাকা জঙ্গলে সেটা খুব জরুরি৷ কন্ডেন্সরের সাহায্যে সেই ‘ইন্টেলিজেন্ট নোজ’ এমনকি রাতে ও বৃষ্টির সময়েও কাজ করে৷কিন্তু ক্ষুদ্র সবুজ বস্তুটি ঠিক কীসের গন্ধ পায়? ফরেস্ট ইকোলজিস্ট ড. ইয়ুর্গেন ম্যুলার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘বাতাসে নানা ধরনের উপাদান রয়েছে৷ কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মোনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফেট এবং নোবেল গ্যাস৷ সেন্সর সে সব পরিমাপ করে৷ যে মুহূর্তে বাতাস থেকে অক্সিজেন শুষে নেওয়া হয়, সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের মিশ্রণও স্বাভাবিকভাবে বদলে যায়৷ চলে যায়৷ পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ে নির্দিষ্ট অবস্থান জানিয়ে দেয়৷ এই প্রণালী আদর্শভাবে কাজে লাগাতে হলে জঙ্গলজুড়ে একশো মিটার দূরত্বে একটি করে সেন্সর বসাতে হবে৷
নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি এক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ক্লাউড সার্ভারে তথ্য পাঠানো হয়৷ কাগজে কলমে সেই প্রযুক্তি ‘ইন্টারনেট অফ থিংস’ নামে পরিচিত হলেও কার্স্টেন ব্রিংকশুল্টে ভালোবেসে সেটির নাম রেখেছেন ‘ইন্টারনেট অফ ট্রিস’৷ কার্স্টেন ব্রিংকশুল্টে মনে করিয়ে দেন, ‘‘বিশ্বের বড় জঙ্গলগুলিতে সাধারণত টেলিকম কোম্পানিগুলির কোনো টাওয়ার থাকে না৷ অর্থাৎ ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল কোনো প্রযুক্তি সেখানে প্রয়োগের অর্থ নেই৷ আমাদের নিজেদের যোগাযোগের অবকাঠামোর প্রয়োজন৷ সেটি আবার সৌরশক্তিচালিত হতে হবে৷ তাছাড়া বড় এলাকা জুড়ে সেটা কার্যকর হতে হবে৷ এই মেশ-গেটওয়ের মাধ্যমে আমরা ঠিক সেটাই সম্ভব করেছি৷ এর মাধ্যমে আমরা জঙ্গলের মধ্যে দুই কিলোমিটার রেঞ্জে যোগাযোগের ব্যবস্থা করেছি৷ এবার ধাপে ধাপে জঙ্গলের আরো গভীরে প্রবেশ করবো৷”
ছোট ও বুদ্ধিমান যান্ত্রিক নাক লোকবল ছাড়াই অনেক কাজ করতে পারে৷ কাজও বেশ দ্রুত করে৷ ড. ইয়ুর্গেন ম্যুলার বলেন, ‘‘কনট্রোল রুমে সহকর্মীরা এই গন্ধ চিনতে পারেন নি৷ আমি পরীক্ষা চালালে কনট্রোল রুমে জানিয়ে দেই৷ তারপর কিছুটা ধূর্ত হয়ে প্রশ্ন করি, তোমরা কি আগুন দেখেছো? দেখো নি? অর্থাৎ অপটিকাল সিস্টেম তখনই ধোঁয়া চিন্তে পারে, যখন সেই ধোঁয়া গাছের মগডালের উপর উঠে যায়৷”
জঙ্গলের এই বুদ্ধিমান আত্মা কি আধুনিক যুগের রক্ষাকারী দেবদেবি হয়ে উঠবে?
ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ