কমতে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি, বাড়ছে পানি বাহিত রোগ
- আপডেট সময় : ০১:৩৫:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০
- / ১৫৪২ বার পড়া হয়েছে
কুড়িগ্রাম, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।তবে ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় দুর্ভোগে বেড়েছে বানভাসি মানুষ। পাশাপাশি এ সব এলাকায় দেখা দিয়েছে পানি বাহিত নানা রোগ।
কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমতে শরু করলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি বন্যা দুর্গত মানুষজনের। ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় এখনও ঘরে ফিরতে পারেনি পাকা সড়ক, বাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মানুষেরা। বন্যা কবলিত এলাকায় খাদ্য সংকটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গো-খাদের সংকট বেড়েছে। রাস্তা-ঘাট ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জামালপুরে যমুনার পানি কিছুটা কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি ৩৪ সেন্টিমিটার কমে আজ সকালে বিপদসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন বন্যাত্বদের জন্য নগদ ৩৩ লাখ টাকা, প্রতিদিন ৪ হাজার টি ,গুর,বাতাসা, ১১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার সহ মোট ১০৮৪ মেঃটন চাল ও ৪ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ১২ লাখ টাকার গো খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জে মধুমতি নদী ও কুমার নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল। মধুমতি নদীর মাদারীপুর বিল রুট ক্যানেল পয়েন্টে বিপদ সীমানার ৪০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও বাড়ী ঘরে পানি ওঠায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বিল এলাকার মানুষেরা।
সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি কমা অব্যাহত থাকলেও এখনও বিপদসীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি আরও ১৬ সেন্টিমিটার কমে বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টায় কাজিপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার এখনো ৪৯ সেন্টিমিটার ও সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষাবাঁধের হার্ডপয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা ও আড়িয়াল খা নদে পানি বৃদ্ধি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মহামারী করোনাভাইরাস ও বন্যা দূর্গত এলাকায় কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করেন। সকালে শিবচর উপজেলার সন্যাসীরচর ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে সংস্থার ভাইস-চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন মুন্না ৪ শতাধিক পরিবারের মাঝে ১০ কেজি চাল, ১ প্যাকেট সেমাই ১ কেজি চিনি ও গুড়া দুধ বিতরণ করেন।
ফরিদপুরের পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে গত ২৪ ঘন্টায় পদ্মা নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার কমে তা বিপদসীমার ১০২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।পানি কমলেও বন্যাকবলিত মানষের দূর্ভোগ কমেনি। এদিকে জেলার ৭টি উপজেলার প্রায় ২লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সকালে যমুনার পানি মাকিগঞ্জের শিবালয়ের আরিচা পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার পানি কমে বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে অভ্যন্তরীণ নদ নদীর পানি কিছুটা বাড়লেও আজ নতুন করে কোন এলাকা প্লবিত হয়নি। বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অন্যত্র আশ্রয় নেওয়া পরিবার এখনও বাড়ি ফিরতে পারেনি। ফলে দুর্ভোগ কমেনি জেলার ২ লাখ পানি বন্দি মানুষের।
টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দূর্ভোগ কমেনি বানভাসী মানুষের। গরু ছাগল হাস মুরগী নিয়ে চরম বিপাকে দিন কাটাচ্ছে তারা। এসব বানভাসী মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিলেও ত্রান সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ বানভাসীদের।
গাজীপুরে তুরাগ ও বংশী নদীর পানি এখনও বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কালিয়াকৈর বাজারের পানি উঠায় রাস্তাঘাট তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এবারের বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে তিনটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম। তলিয়ে গেছে গ্রাম অঞ্চলের পাকা ও কাঁচা রাস্তা। তলিয়ে গেছে মাছের খামার।
নেত্রকোনায় পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। ধনু নদীর পানি বিপদসীমার ৯১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে খালিয়াজুরীর উপজেলার হাজারো মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এছাড়া কংস, সোমেশ্বরীসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ।
এদিকে, পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি কমলেও এখনও নগরবাড়ি পয়েন্টে বিপদ সীমার ৫৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর পদ্মা নদীর পানি পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েন্টে বিপদ সীমার ৮২ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি কমলেও এখনও জেলার বন্য পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে । পানি বন্দি হয়ে রয়েছে কয়েক হাজার মানুষ।