দুদকের চিঠির প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে নারাজ স্বাস্থ্যখাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা
- আপডেট সময় : ০১:৩৩:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জুন ২০২০
- / ১৭১০ বার পড়া হয়েছে
মাস্ক পিপিইসহ, করোনার সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ে, দুর্নীতিবাজরা যত রথি মহারথী হউক না কেন, কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। ২৪শ’ ৮২ কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতির অনুসন্ধানে, সরকারি ৩ সংস্থাকে দুদকের দেয়া চিঠির প্রতিক্রিয়ায় তিনি এই হুশিয়ারি দেন। দুদকের ওই চিঠির প্রতিক্রিয়ায়, গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে নারাজ, স্বাস্থ্যখাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা তথ্য দিয়ে সহায়তা না করলেও, দুদক আইনে দেয়া ক্ষমতার আলোকেই, অর্থ লোপাটের অনুসন্ধান করা সম্ভব বলে জানান দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
মহামারী করোনার আতঙ্কে বিশ্ব যখন তোলপাড়, তখন রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে আসল মোড়কে নকল এন ৯৫ মাস্ক সরবরাহকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উঠে সমালোচনার ঝড়। অনুসন্ধানে জানা যায়, কোন আনুষ্ঠানিক দরপত্র ছাড়াই শুধুমাত্র মৌখিক কার্যাদেশের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ওষুধাগার কর্তৃপক্ষ জেএমআই নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এই কার্যাদেশ দেয়। সেই ধারাবাহিকতায় সিএমএসডিকে দফায় দফায় করোনা সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে সাধারণ মাস্ককে এন ৯৫ বলে চালাবার অভিযোগে আটকে যায় জিএমআই-র বিল। (জিএফএক্স) সিএমএসডিকে দেয়া আর্থিক বরাদ্দের স্বচ্ছ প্রয়োগ হয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠে সবখানে।
৩ মার্চ প্রথম চালানে ৪০ হাজার পিস হ্যান্ড গ্লাভস,
১১ মার্চ ২০ হাজার পিস হ্যান্ড গ্লাভস ও ২ হাজার পিস মাস্ক
১৫ মার্চ ২০ হাজার পিস হ্যান্ড গ্লাভস ও ১ হাজার পিস মাস্ক সরবরাহ করে।
১৬ মার্চ ও ২৭ মার্চ মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস সরবরাহ করে জিএমআই।
প্রশ্ন উঠে স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের কোভিড ১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যাণ্ড পেনডামিক প্রিপেয়ার্ডনেসে প্রকল্প বরাদ্দকৃত ১ হাজার ১শ ১৭ কোটি টাকা এবং টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স প্রজেক্ট অন কোভিড ১৯ প্রকল্পে বরাদ্দকৃত ১ হাজার ৩শ’ ৬৫ কোটি টাকা নিয়ে।
এমন বাস্তবতায় স্বাস্থ্য খাতের লাগামহীন দুর্নীতি খুঁজে বের করতে কঠোর অবস্থান নেয় দুদক। সিএমএসডি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ ৩ সংস্থাকে ৩০ জুনের মধ্যে করোনা মোকাবেলায় বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যায়ের হিসেব চেয়ে চিঠি দেয় কমিশন। মুঠোফোনে এসএ টিভিকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় দুর্নীতিবাজদের উদ্দেশ্যে হুশিয়ারি দেন দুদক চেয়ারম্যান।
সময়মত তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে সরকারি সংস্থাগুলোর ভাল হবে, তবে না করলেও অনুসন্ধানে সমস্যা হবে না বলে জানান দুদক আইনজীবী। সরকারি ৩ সংস্থার কাছে দুদকের দেয়া ওই চিঠির প্রতিক্রিয়া জানতে মুঠোফোনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং সিএমএসডির পরিচালকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের পরও ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে অনুসন্ধানে নামে এসএ টিভি।
প্রথমেই যাওয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় অধিদপ্তরের সামনেই দুর্নীতি বিরোধী শ্লোগান দিচ্ছেন খোদ স্বাস্থ্যকর্মীরা। এবার সব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানার পালা। তৃতীয় তলায় নিজকক্ষে তখন অনুপস্থিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। এসময় অধিদপ্তরের গণসংযোগ কর্মকর্তা আক্কাস আলী শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান কোন কর্মকর্তাই এখন আর কথা বলতে চান না।
এরপর কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের উদ্দেশ্যে যাত্রা। সেখানে গিয়ে সদ্য নিয়োগ পাওয়া সিএমএসডি-র পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও পাওয়া যায় না ইতিবাচক সাড়া। এর আগে গণমাধ্যমের কাছে প্রতিষ্ঠানটির বিদায়ী পরিচালক অভিযোগ করে বলেছিলেন করোনা কেন্দ্রিক আর্থিক বানিজ্যে গোপন সিণ্ডিকেটকে সহায়তা করা হয়নি বলেই সরে যেতে হয়েছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদউল্লাকে। এতকিছুর মাঝেও কেন্দ্রীয় ওষুধাগারে দুর্নীতি বিরোধী শ্লোগানটি অনেকটাই হতাশা জাগায় সচেতন মানুষদের মনে।