স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন ১২ জানুয়ারি৷ প্রতি বছর এই মাসেই রাজ্যজুড়ে পালিত হয় বিবেক চেতনা উৎসব৷ বিভিন্ন পুরসভা ও ব্লকে এই উৎসব পালন করা হতো৷ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে থাকতো প্রতিযোগিতা৷
এক দশক ধরে বিবেক চেতনা উৎসব চলছে৷ কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হতো৷ জেলা স্তরে বিভিন্ন ব্লকে এই উৎসব পালনের বিপুল টাকা জোগাতে হতো নবান্নকে৷ এর সঙ্গে বিভিন্ন উৎসবের জন্য অর্থের ব্যবস্থাও করতে হয়৷ বিরোধীদের অভিযোগ, বেহিসেবি খরচে রাজ্যকে দেউলিয়া হওয়ার পথে ঠেলে দিচ্ছে তৃণমূল সরকার৷
রেসপনসিবিলি অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্ট (এফআরবিএম)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যের ঋণের পরিমাণ পাঁচ লক্ষ ৮৬ হাজার কোটি টাকার বেশি৷ রাজ্যের জনসংখ্যা ১০ কোটি ধরলে মাথাপিছু ঋণ ৫৮ হাজার টাকা৷ এক দশক আগে, বাম শাসনের অবসানের সময় যা অনেকটা কম ছিল৷ ২০১০-১১ সালে মাথাপিছু ঋণ ছিল ২০ হাজার টাকার কিছু বেশি৷
উৎসব পালন ছাড়াও একগুচ্ছ জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চালায় রাজ্য৷ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, যুবশ্রী-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয় নবান্নের৷ রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রের কাছ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে মোট এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি বকেয়া রয়েছে৷’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন৷
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য বড় মাপের কোনো উৎসব কার্যত বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় জল্পনা শুরু হয়েছে৷ বিবেকানন্দ স্মরণে শুধু একটিই কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান হবে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে৷ প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি কোষাগার এতটাই বেহাল যে আর উৎসব বা মেলা করার সামর্থ্য রাজ্যের নেই? অথচ গত ডিসেম্বরেই চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শুরু করে সংগীত মেলা হয়েছে৷
বিজেপি নেতা, অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দের দাবি, ‘‘রাজ্যের আয়ের ৩৭-৩৮ শতাংশই ঋণ৷ সেটা আবার কাজে লাগানো হচ্ছে অনুৎপাদক খাতে৷ ফলে আরো ঋণ করতে হচ্ছে৷” বাম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘আগেই খরচ ছাঁটাইয়ের কথা ভাবতে হতো৷ এখন খরচ কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না৷’’ শাসক দলের বিধায়ক তাপস রায়ের বক্তব্য, ‘‘আয় অনুযায়ী ব্যয় করাই উচিত৷ এ নিয়ে রাজনীতি করা অনুচিত৷’’
যদিও এর নেপথ্যে অর্থনীতির সঙ্গে রাজনীতিকেও জুড়ছেন পর্যবেক্ষকদের একাংশ৷ অধ্যাপক শুভময় মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজ্য বাজেটের তুলনায় একটা উৎসবের খরচ নগণ্য৷ সামনে পঞ্চায়েত ভোট৷ এখন শাসক দলের মনোযোগ সেদিকেই৷’’
ভোটের হিসাব মাথায় রেখে তার মন্তব্য, ‘‘বিবেকানন্দকে ঘিরে উৎসবের সঙ্গে সংখ্যাগুরুর আবেগ জড়িত৷ পঞ্চায়েতে সংখ্যালঘুদের ভোটপ্রাপ্তি শাসক দলের পক্ষে জরুরি৷ সেই নিরিখে এ বার বিবেক চেতনা উৎসব হয়ত তাদের কাছে কম