খুলনার ‘ট্যাঙ্ক ব্যাটল অব শিরোমনি’
![](https://www.satv.tv/wp-content/uploads/2023/10/lazy-Copy.jpg)
- আপডেট সময় : ০২:৪১:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২১
- / ১৫৭৯ বার পড়া হয়েছে
খুলনার ‘ট্যাঙ্ক ব্যাটল অব শিরোমনি’। ১৯৭১ সালে দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ ট্যাংক যুদ্ধে বাঙ্গালীর বীর সন্তান মুক্তিবাহিনীর পাশাপাশি ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সেনাদের আত্মত্যাগের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। স্বাধীনতা যুদ্ধ বিজয়ের প্রাক্কালে ১৪ ডিসেম্বর সম্মুখ প্রতিরোধ যুদ্ধে তিন শতাধিক ভারতীয় সেনার আত্মত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতার স্বাদ পায় খুলনা। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন দেয়া মিত্রবাহিনীর সেনাদের মনে রাখেনি কেউ।
১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমণে ৭ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হওয়ার পর পাক বাহিনী কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার হায়াত খানের নেতৃত্বে যশোর সেনানিবাস থেকে পিছুহটে খুলনার শিরোমনি এলাকায় ঘাটি স্থাপন করে।সেখানে পাকবাহিনী ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও ট্যাংক নিয়ে শিরোমনি ক্যাবল ফ্যাক্টরী, টিএন্ডটি ভবন, নসু খানের ভাটাসহ হাসপাতাল ও স্থানীয় লোকজনের বাড়ী দখল করে ২/৩ কিমি.এলাকাজুড়ে প্রতিরক্ষা তৈরী করে।
১৪ ডিসেম্বর খুলনা বিজয়ের লক্ষ্যে মেজর গানি ও মেজর মহেন্দ্র সিংয়ের নেতৃত্বে ট্যাঙ্কসহ ২৮টি সাজোয়া যান নিয়ে চুড়ান্ত অভিযান শুরু করে যৌথবাহিনী। মিত্র বাহিনীর ইষ্টার্ন, আলীম ও আফিল জুটমিল অতিক্রম করে শিরোমনিতে পাকবাহিনীর অবস্থানের মধ্যে পৌঁছালে চর্তুদিক থেকে মিত্রবাহিনীর ওপর অতর্কিতে হামলা করলে শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। প্রায় চারঘন্টাব্যাপী যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ২৬টি সাজোয়া ট্যাংক ধ্বংস ও তিন শতাধিক ভারতীয় সেনা ও মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়।পরে শক্তি সঞ্চয় করে মিত্রবাহিনীর রাজপুত ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দলবির সিং ও সেক্টর কমান্ডার মেজর মঞ্জুরের নেতৃত্বে চর্তুমুখী যুদ্ধে ১৭ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় খুলনা।ঐতিহাসিক এ যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে “ট্যাঙ্ক ব্যাটল অব শিরোমনি”নামে পরিচিত।সে দিনের ভয়াবহ যুদ্ধের স্মৃতি আজও শিহরিত করে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের।
শিরোমনির যুদ্ধের মাধ্যমে পাকবাহিনীর সবর্শেষ দূর্গের পতন হলেও স্বাধীনতার সাড়ে চার দশকেও মিত্রবাহিনীর সদস্যদের আত্মদানের স্বীকৃতি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ।শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং আগামী প্রজন্মের কাছে এ যুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে শিরোমনিতে নামফলকসহ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের দাবী তাদের।
বাঙালীর স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের মধ্যে শুধু খুলনা জেলাতেই দেড় লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন,যা দেশের আর কোনও জেলাতে হয়নি। ঐতিহাসিক যুদ্ধ “ট্যাঙ্ক ব্যাটল অব শিরোমনি”র যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে দ্রুত পদক্ষেপের দাবী খুলনাবাসীর।