গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে পোশাকশিল্প
- আপডেট সময় : ০২:৪২:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ জুন ২০২৩
- / ১৫৮৪ বার পড়া হয়েছে
চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে তৈরী পোশাক খাতে আগের বছরের চেয়ে রপ্তানী কমেছে ২০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। যা করোনার বিপর্যয়কর সময়ের রেকর্ডকেও হার মানিয়েছে । পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, হঠাৎ করে আশংকাজনকভাবে অর্ডার কমে যাওয়ার পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুত সংকটে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে শ্রমঘন শিল্পখাতটি। এদিকে অর্ডারের ধারাবাহিকতা বিশ্লেষন করে, চলতি বছর পরিস্থিতি পরিবর্তনের লক্ষণ দেখছে বিজিএমইএ।
২০১০ সালের পর করোনা মৌসুম ছাড়া প্রতিবছর তৈরী পোষাক রপ্তানী খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ থেকে ৮ শতাংশ। ২০২০ সালে করোনার কারণে, ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ রপ্তানী কমলেও, ২০২১ সালে তা বেড়ে ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ২০২২ সালেও প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকে। কিন্তু চলতি বছর প্রবৃদ্ধি মুখ থুবড়ে পড়েছে।
পরিসংখ্যন বলছে, বছরের প্রথম ৫ মাসে পোশাক খাতের রপ্তানী কমেছে ক্রমাগত। ২০২২ সালের এই সময়ে যেখানে ৩ লাখ ২১ হাজার ৪৮৭ টিউস কন্টেইনার গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানী হয়। এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭৬ টিউস কন্টেইনার।
উদ্যোক্তারা বলছেন, অর্ডার কমার পাশাপাশি পেমেন্ট নিয়েও তৈরী হয়েছে অনিশ্চয়তা। আর মরার ওপর খারার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট। এতে শুধু তৈরী পোশাকই নয়, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট খাতগুলোও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তৈরী পোষাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে রপ্তানীমুখী দেশগুলোর অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমেছে। এই বাস্তবতায় উদ্যোক্তারা নতুন বাজারের সন্ধান করলেও তা সময় সাপেক্ষ। তততোদিন টিকে থাকাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।
বিজিএমইএর হিসেবে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই রপ্তানী আদেশ কমছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেছে সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করা ছোট আকারের কারখানাগুলো। বায়ারের সঙ্গে সরাসরি কাজ করা গার্মেন্টসগুলো এখন সক্ষমতার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারছে না।
এদিকে..মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ থেকে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে যুক্তরাষ্ট্র তৈরি পাশাক আমদানি ২২ শতাংশ কমিয়েছে। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এ ধরনের ঘটনার প্রথম শিকার হয় চীন। চীনের রপ্তানি কমেছে ৩২ শতাংশের বেশি।
একই সঙ্গে মার খেয়েছে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিও। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল এই চার মাসে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের রপ্তানি হয়েছে ২৭০ কোটি ডলারের। ঠিক এক বছর আগে একই সময়ে রপ্তানি ছিল ৩২৮ কোটি ডলারের পোশাক। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব কমার্স মন্ত্রণালয়ের এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের কপালে ভাঁজ ফেলছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এই দেশ এককভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। গত বছর সেখানে প্রায় এক হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। কোভিড মহামারির প্রায় শেষ পর্যায়ে ২০২২ সালে ওই বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। কিন্তু এই সুসময় দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।