টিকটকে মেতে থাকা তরুণ প্রজন্ম
- আপডেট সময় : ১১:২৫:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ জুন ২০২৩
- / ১৫৭৪ বার পড়া হয়েছে
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলির মধ্যে টিকটকের রমরমা যেমন বাড়ছে, তেমন বিতর্কও কম হচ্ছে না৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এই প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তার কারণে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷
টিকটকের ফিড সত্যি অসাধারণ, বৈচিত্র্যপূর্ণ ও মনোরঞ্জক৷ ‘ফর ইউ’ পেজে কোন কোন ভিডিও দেখা যাবে, অ্যালগোরিদম তা বাছাই করে৷ তার মধ্যে ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে অখ্যাত মানুষের ভিডিওও থাকে৷ গোটা বিশ্বের মানুষ সেখানে ভিডিও আপলোড করেন বলে বৈচিত্র্যের শেষ নেই৷ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্কট গ্যালোওয়ে সেই সাফল্য ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘প্রতি ঘণ্টায় টিকটক কয়েকশো করে সিগনাল পায়৷ যে ধরনের কনটেন্ট আপনাকে টিকটকে আকৃষ্ট রাখে, মনোযোগ ধরে রাখে, প্ল্যাটফর্ম সেই সব ভিডিও বাছাই করতে থাকে৷ যে ব্যক্তি কয়েক ঘণ্টার বেশি টিকটকে সময় কাটিয়েছে, সে বলতে পারবে যে আপনার টিকটক আমার তুলনায় একেবারে আলাদা৷ সেটাই হলো জাদু৷’’
‘ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্ট’ দিয়ে নজর কাড়তে হলে প্রোডাকশন মোটেই নিখুঁত হবার প্রয়োজন নেই৷ চলতি প্রবণতা অনুযায়ী কম সময়ের কন্টেন্ট তৈরি করলে এবং সঠিক সংগীত ব্যবহার করলেই সাফল্য আসে৷ সৃজনশীল ও মৌলিক আইডিয়ারও কদর করা হয়৷ যে কেউ রাতারাতি টিকটকে ভাইরাল হতে পারে৷ গ্যালোওয়ে বলেন, ‘‘অ্যালগোরিদমের সিগনাল, নমনীয়তা ও শক্তি আপনার জন্য সেরা স্ট্রিমিং নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করতে পারছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটি পরিবার গড়ে ১১ থেকে ১৫ মিনিট ধরে কী দেখা যায়, সেই সিদ্ধান্ত নেয়৷ টিকটকে আপনাকে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় না৷ চ্যানেল একটাই, অ্যালগোরিদমের দৌলতে আপনি কোন ধরনের কন্টেট দেখতে পছন্দ করেছেন, প্ল্যাটফর্ম তা পুরোপুরি জানে৷ ইতিহাসে অন্য কোনো পরিষেবা এমন অসাধারণ, সবচেয়ে আনন্দদায়ক, সবচেয়ে ফলপ্রসূ স্ট্রিমিং কনটেন্ট দিতে পারেনি৷’’
যতটা সম্ভব সময় ধরে আমাদের প্ল্যাটফর্মে ধরে রাখাই হলো লক্ষ্য৷ টিকটক সেই সাফল্যকে নিখুঁত পর্যায়ে নিয়ে গেছে৷ ব্যবহারকারীরা গড়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা এই প্ল্যাটফর্মে সময় কাটান, বাকি সব পরিষেবার তুলনায় যা অনেক বেশি৷ যেমন ফেসবুকের ইউজাররা এর অর্ধেক সময় ব্যয় করেন৷ টিকটকের অ্যালগোরিদম এক পরিসংখ্যানগত নীতি অনুসরণ করে৷ ইন্টারনেট সোসাইটি হংকং-এর ওয়ং হো ওয়া বলেন, ‘‘তারা নির্দিষ্ট কিছু মানুষের স্যাম্পেল নিয়ে দেখার চেষ্টা করে, তারা কোনো ভিডিও পছন্দ করছে কিনা৷ উত্তর ইতিবাচক হলে তারা পছন্দের মাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে৷ ফল খারাপ হলে তারা সেই সংখ্যা সীমিত রাখার চেষ্টা করে৷ তাই অ্যালগোরিদমে দেখা যায়, যে কিছু ভিডিও এভাবে ভাইরাল হয়ে ওঠে৷’’
অন্যদিকে টিকটক স্ট্রিম বাকি প্ল্যাটফর্মের তুলনায় অনেক বেশি নেশার কারণ হতে পারে৷ প্রত্যেকটি ইন্টারেস্টিং ভিডিও মস্তিষ্কে ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটায়৷ সেটা আমাদের মনে আনন্দ জাগিয়ে তোলে এবং বার বার সেই অভিজ্ঞতার ইচ্ছা জাগে৷ পর্যায়ক্রমে এমন শক্তিশালী ভিডিও দেখানো হয়, যা ইউজারদের প্ল্যাটফর্মে আটকে রাখে৷ এমন শক্তিশালী টুলের পেছনে কি শুধু এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অবদান রয়েছে? ওয়ং হো ওয়া মনে করেন, ‘‘কোনো কারচুপি আছে কিনা, সেটা এখনো বলা যায় না৷ কারণ আমাদের অ্যালগোরিদম ও তথ্যের ব্ল্যাক বক্সের আড়ালে রাখা হয়৷”
অন্য কোনো প্ল্যাটফর্ম এতটা অস্বচ্ছ নয়৷ আবার অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মের এত তরুণ ব্যবহারকারী নেই৷ সেটাই এর আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়৷ ‘জেনারেশন জেড’ বলে পরিচিত এই প্রজন্ম টিকটক কনটেন্ট সৃষ্টি করে এবং দেখে৷ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ স্কট গ্যালোওয়ে বলেন, ‘‘এক জনমত সমীক্ষায় ৩০ বছরের কম বয়সি মানুষদের হয় টিকটক অথবা অন্যদিকে নেটফ্লিক্স, এইচবিও ইত্যাদি স্ট্রিমিং মিডিয়ার গুচ্ছ বেছে নেবার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল৷ সিংহভাগই টিকটক বেছে নিয়েছিলেন৷ অর্থাৎ ৩০ বছরের কম বয়সিরা অন্যান্য মিডিয়ার তুলনায় টিকটকেই বেশি সময় কাটাচ্ছেন৷ একদিকে বাকি সব মিডিয়া, অন্যদিকে টিকটক৷ তরুণদের মধ্যে টিকটকেরই রমরমা বেশি৷’’
সত্যি চমকপ্রদ সাফল্য বটে৷
ডয়চে ভেলে