টেবিল টেনিসে স্বস্তি খুঁজছেন পারকিনসন রোগীরা
- আপডেট সময় : ১২:৩৮:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অগাস্ট ২০২৩
- / ১৫৫৪ বার পড়া হয়েছে
পারকিনসনে ভোগা রোগীদের জীবনে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে আসার চেষ্টা করে ‘পিং পং পারকিনসন’৷ বিশ্বের অনেক দেশে এর কার্যক্রম বিস্তৃত৷ জার্মানিতেও অনেক পারকিনসন রোগী এই সংস্থার সদস্য হয়েছেন৷
জার্মানির পশ্চিমের ফুলডা শহরে পিং পং পারকিনসন মিট-আপে পারকিনসন থাকা ১০ জন খেলোয়াড় প্রতি সপ্তাহে এতে অংশ নেন৷ তাদের একজন সিলকে কিন্ড৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা একটা রীতি৷ এছাড়া পারকিনসনের দৈনন্দিন চাপ থেকে কিছুটা মুক্তির একটা উপায়ও৷ এই রোগ আপনাকে নিয়মিত মনে করিয়ে দেয় যে, আপনার চলাফেরায় সমস্যা আছে৷ তবে এখানে আপনি সম্পূর্ণ নতুন এক জগতে প্রবেশ করতে পারেন, যেখানে আশেপাশের সবকিছু নগন্য হয়ে যায়৷”
সিলকে কিন্ডের বয়স ৫৬৷ ১০ বছর ধরে তিনি পারকিনসনে ভুগছেন৷
পারকিনসন হলে মস্তিষ্ক ঠিকভাবে শরীরের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না৷ শরীর ধীর ও শক্ত হয়ে আসে৷ আর কাঁপুনি বাসা বাঁধে৷
নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই- তবে অনুশীলন কাজে লাগতে পারে৷
আর ডোপামিন নেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ- কারণ এটি মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষগুলোর মধ্যে সংকেত পাঠায়৷ পারকিনসন হলে এটি খুব কম উৎপাদিত হয়৷ সিলকে কিন্ড বলেন, ‘‘প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর ডোপামিন খাই৷ এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তা না হলে আমার শক্তি ফুরিয়ে যায়৷ জ্বালানি ছাড়াতো গাড়ি চলতে পারে না! ডোপামিন ছাড়া আমি কিছু করতে পারি না৷”
পিং পং পাককিনসনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন সিলকে কিন্ড৷ জার্মানির সব ট্রেনিং গ্রুপের মধ্যে সমন্বয় করেন তিনি৷ অনেক কাজ৷ কারণ, দিন দিন গ্রুপগুলোর সদস্য সংখ্যা বাড়ছে৷
ফল্কার প্রেটিন এখানে দ্বিতীয়বারের মতো এসেছেন৷ তার নিউরোলজিস্ট তাকে এখানে পাঠিয়েছেন৷ প্রেটিন বলেন, ‘‘খেলতে গিয়ে একটা সময় আপনার আর কাঁপুনি অনুভত হয় না৷ মাঝেমধ্যে আমার কাঁপুনি থাকে, যেমন এখনও আছে, কিন্তু দ্বিতীয় বা তৃতীয় ম্যাচের পর এটি চলে যায়৷”
সিলকে বিশ্বাস করেন, পারকিনসনের প্রসার ধীর করতে পারে টেবিল টেনিস৷ কিন্তু এই খেলা মস্তিষ্কের অবস্থা ভালো করতে পারে কিনা, সেটা এখনও বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত হয়নি৷
সিলকে কিন্ড বলেন, ‘‘কীভাবে বলটা ধরবেন, তারপর মারবেন, আর বলটা কোথায় ফেলতে চান সেটা নিয়ে আপনি সারাক্ষণ ভাবতে থাকেন৷ অর্থাৎ মস্তিষ্কে একসঙ্গে অনেককিছু চলতে থাকে- ছোট ছোট অনেক প্রক্রিয়া৷ এটা ট্রেনিংয়ের জন্য ভালো বলে আমার মনে হয়, কারণ এটা মস্তিষ্ককে সারাক্ষণ ব্যস্ত রাখে৷”
প্রতি সপ্তাহে ফিজিওথেরাপিতে ভারসাম্য আর অঙ্গবিন্যাস শেখায়৷
ফিজিওথেরাপিস্ট নাদিয়া সেলার বলেন, ‘‘পারকিনসন রোগীদের জন্য নড়াচড়া খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ শরীর চাঙা রাখতে এবং শরীরের ক্ষয়ে যাওয়া যতদিন সম্ভব বিলম্বিত করতে প্রতি সপ্তাহে কয়েকবার নড়াচড়া করতে হয়৷”
পিং পং পারকিনসন আয়োজিত প্রতিটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেন সিলকে৷ ‘‘খেলা আমাকে সবসময় মনে করিয়ে দেয় যে, রোগ থাকলেও যে কোনো কিছু করা সম্ভব৷ এবং ভালো করা সম্ভব৷ অবশ্যই সবকিছু ঠিকঠাক হতে হবে, আর পারকিনসন মাঝেমধ্যে সমস্যা করে৷ কিন্তু এর সঙ্গেই বসবাস করা আপনার শিখতে হবে৷ হতাশ হওয়া যাবে না৷ রোগ নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে,” বলেন তিনি৷
সিলকের মতো অনেককে নতুন জীবন দিয়েছে পিং পং পারকিনসন৷
ডয়চে ভেলে