ডিজিটাল আইনে সাংবাদিক হয়রানি বন্ধের দাবি গণমাধ্যমকর্মীদের
- আপডেট সময় : ১২:৫৯:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুলাই ২০২৩
- / ১৬৪৫ বার পড়া হয়েছে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে৷ এই আইন সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি সৃষ্টি করছে, অন্যায়ের ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে শুক্রবার মন্তব্য করেন সাংবাদিক নেতারা৷
আরটিভির সাংবাদিক অধরা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার প্রতিবাদে কারওয়ান বাজারে সার্ক ফোয়ারা মোড়ে ‘আমরা গণমাধ্যমকর্মী’ আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তারা৷
সম্প্রতি রাজারবাগ দরবার শরিফ ও এর নেতা শাকেরুল কবিরের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারের পর চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালে অধরা ইয়াসমিন ও তার সোর্সের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়৷
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে মুলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে৷ আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, সংশোধন হবে৷ যেদিন আইন সংসদে উত্থাপিত হয়, সেদিন মোস্তাফা জব্বার (ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী) বলেছিলেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনটি করা হয়েছে৷ কিন্তু সরকারের এই দুই মন্ত্রী মিথ্যা কথা বলেছেন৷ এরপর আইনমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, কোথাও যদি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়, তাহলে তিনি সেই মামলা পরিচালনা করবেন৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি মামলাও তাকে পরিচালনা করতে দেখিনি৷
‘‘এছাড়া বলেছিলেন, মামলার আগে তদন্ত হবে, তারপর মামলা হবে৷ কিন্তু অধরার ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি৷”
এই সাংবাদিকনেতা আরও বলেন, ‘‘সরকার বলছে, দেশের গণমাধ্যম সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছে৷ দেশের গণমাধ্যম এই অর্থে স্বাধীনতা ভোগ করছে যে আগে চ্যানেল ছিল একটি বা দুইটি, সেখানে এখন ৪০টি চ্যানেল এবং সংবাদপত্র এক হাজার ২০০–এর বেশি৷ সংখ্যার দিক থেকে স্বাধীনতা ভোগ করছে৷ কিন্তু গুণ ও মানের দিক থেকে এখনো সংকোচন নীতি চলছে৷”
সাংবাদিকদের সব সময় নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে উল্লেখ করে সোহেল হায়দার বলেন, ‘‘আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশোধনের কথা বলা হচ্ছে৷”
কিন্তু সংশোধনের জন্য অংশীজনদের কাউকে ডাকা হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন তুলে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনটি সংশোধনের জন্য আহ্বান জানান তিনি৷
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালিন নোমানী জানান, রাজারবাগের পীর ধারাবাহিকভাবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে যাচ্ছেন৷ এ পর্যন্ত অন্তত ১০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেছেন৷ এই পীরের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল৷
তিনি সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মধ্যে এই পীরের অপকর্ম তুলে ধরতে৷
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে ডিআরইউ সভাপতি বলেন, ‘‘আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা সংশোধন করে আরও শক্তিশালী আকারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে৷ সরকার বারবার দাবি করছে, এ আইনে সাংবাদিকদের কোনো অসুবিধা হবে না৷ কিন্তু সাংবাদিকদের আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে৷ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনটি দিয়ে মামলা করে পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি সৃষ্টি করা হয়েছে, হয়রানি করা হচ্ছে৷”
‘‘যারা ক্ষমতায় থাকেন, তারাই গণমাধ্যমের বেলায় ও সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেএক ও অভিন্ন৷ আর বিরোধী দলে থাকলে স্বাধীনতার কথা বলেন৷” তিনি এ আইন বাতিলের দাবি জানান৷
মানববন্ধনে বক্তারা সাংবাদিকদের হয়রানিমূলক সব কালাকানুন বাতিলও অধরা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান৷ এ ছাড়া বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিক ও মতপ্রকাশের জন্য আতঙ্ক৷ অন্যায়ের ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন৷
রাজারবাগের পীর ও তার মুরিদদের নানা অপকর্মের সংবাদ সামনে এলেও তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না এবং প্রশাসন কেন তার ব্যাপারে নীরব, সে প্রশ্ন তোলা হয় মানববন্ধনে৷ পাশাপাশি শেষ পর্যন্ত অধরা ইয়াসমিনের পাশে থাকার জন্য আরটিভির প্রতি আহ্বান জানানো হয়৷
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি নাসিমা আক্তার সোমা, ডিআরইউর সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব, ল রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাবেদ, রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র্যাক), আরটিভি, বাংলাভিশনসহ বিভিন্ন সংগঠন ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকেরা৷
ডয়চে ভেলে