০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ডিসিদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ২৫ নির্দেশনা

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ০৯:১১:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ১৭৯২ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
জনগণের জন্য কার্যকর হবে কেবল এমন প্রকল্পগুলোই গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ একই সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদও দিয়েছেন তিনি৷

এছাড়া সরকারি তহবিল ব্যবহারে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কৃচ্ছ্রতাসাধনের কথাও বলেন বলে বাসস-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়৷

সরকারের মেয়াদের শেষ বছরের শুরুতে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিক নির্দেশনা দিতে মঙ্গলবার সকালে তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা৷ তেজগাঁওয়ের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তিনি৷

সেখানে তিনি খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন৷ পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যবস্থা নেওয়াসহ ২৫ দফা নির্দেশনা এসেছে সরকার প্রধানের কাছ থেকে৷

শেখ হাসিনা বলেন, “ডিসিদের বিবেচনা করতে হবে, যখনই কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়, সে সেটা ওই এলাকার জন্য কতটুকু কার্যকর৷ এতে মানুষ কতটুকু লাভবান হবে এবং অপচয় কতটুকু বন্ধ করা যায়, সেদিকে আপনাদের নজরদারি থাকা উচিত৷ যেহেতু একটা জেলার দায়িত্ব আপনাদের ওপর৷ স্বাভাবিকভাবে এগুলো আপনারা দেখবেন৷ কারণ, যত্রতত্র শুধু পয়সা খরচের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা আমি পছন্দ করি না৷ “কোভিড মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের যেন সেটা মোকাবেলা করতে না হয় সেজন্যই আমরা কৃচ্ছ্র সাধনের ঘোষণা দিয়েছি৷ আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে ফেলেছি এবং সে ব্যাপারেও আপনারা সচেতন থাকবেন৷”

বৈশ্বিক পরিস্থিতি আর আর্থিক সংকটের বিবেচনায় ২ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার নতুন প্রকল্প আপাতত স্থগিতের কথাও সম্মেলনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা৷

তিনি বলেন, “আর্থিক সংকট অবশ্যই সারা বিশ্বের মত আমাদেরও আছে৷ কিন্তু এমন পর্যায়ে নাই যে আমরা চলতে পারব না৷ আমাদের অগ্রাধিকার আমাদেরই বিবেচনা করতে হবে৷ ”

মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা সরকারে অগ্রাধিকারে আছে বলেও জানান শেখ হাসিনা৷

তিনি বলেন, “মানুষের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে আমাদের কৃষি উৎপাদন যাতে বাড়ে সেজন্য যা খরচ লাগে আমরা করব৷ ” জনকল্যাণমূলক কাজে বিনামূল্য করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দিতে সরকারে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের উদাহরণ দেন শেখ হাসিনা৷

কার্গো বিমান কেনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নিজেদের জন্য কার্গো বিমান কেনার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম কিন্তু অর্থনৈতিক এ অবস্থায় কিনতে পারছি না৷ ভবিষ্যতে কিনব পরিকল্পনা আছে৷”

জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “একটা কথাই বলব, আমি আসার (ক্ষমতায়) পর আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে এই যে জনমুখী বা জনগণের পাশে দাঁড়ানোর বা জনগণকে সেবা দেওয়ার যে একটা আন্তরিকতা থাকা উচিত, সে আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়েছে, এই পরিবর্তন আমি দেখেছি আপনাদের মাঝে৷  আর সেটা যদি না হত.. আমরা জনপ্রতিনিধিরা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই ক্ষমতায় আসি…”

মাঠ প্রশাসনের কর্মকতাদের কাজের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, “মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ, অগ্নিসন্ত্রাস বা গাছকাটা মোকাবিলায় মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন৷”

মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ না বাঁধলে বাংলাদেশ আরও ‘এগিয়ে’ যেত বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী৷

ডিসিদের তিনি নির্দেশনা দেন: “কৃচ্ছ্র সাধন করতে হবে, অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনাকাটা পরিহার করতে হবে৷ আমিদানি নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে নিজেদের চাহিদা নিজেতেরই পূরণ করতে হবে৷”

এ সময় তিনি কোরবানির গরুর উদাহরণ দিয়ে বলেন, “এক সময় তো ভারতীয় গরু ছাড়া আমাদের কোরবানিই হত না৷ এখন হচ্ছে না? হচ্ছে৷ আমরা এখন নিজেদের উৎপাদনে ওপর নির্ভর করছি৷ ”

জেলা প্রশাসকদের জনগণের ‘সেবক’ হওয়ার তাগিদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমরা যতটুকু সুযোগ-সুবিধা পাই, বা আপনারা সরকারি আমলা হিসেবে যে সুযোগ-সুবিধা পান, এগুলোর অবদান কিন্তু জনগণের৷ কারণ, জনগণের অর্থ এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকাতেই সবকিছু চলে৷ এর জন্য আমরা একেবারে তৃণমূল থেকে জনগণকে শক্তিশালী করে আনতে চাই৷

সরকার ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের সুবিধা এনে দিতে চায় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “যাতে করে মানুষের শহরমুখী প্রবণতা কমার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামে অর্থনৈতিক প্রাণ চাঞ্চল্য তৈরি হয়৷”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন৷ অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন৷

বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরুল্লাহ এবং জেলা প্রশাসকদের পক্ষে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু নাঈম মোহাম্মদ মারুফ খান ও বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন তিবরিজি৷

অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসনের সার্বিক উন্নয়নের উপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি দেখানো হয়৷

প্রধানমন্ত্রীর ২৫ দফা নির্দেশনা

১. খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। পতিত জমিতে ফসল ফলাতে হবে৷ কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে সে লক্ষে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে;

২. নিজেরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে এবং জনগণকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে৷

৩. সরকারি অফিসসমূহে সাধারণ মানুষ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বিঘ্নে যথাযথ সেবা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে৷ সেবা প্রত্যাশীদের সন্তুষ্টি অর্জনই যেন হয় সরকারি কর্মচারীদের ব্রত;

৪. সরকারি তহবিল ব্যবহারে কৃচ্ছ্র সাধন করতে হবে৷

৫. এসডিজি স্থানীয়করণের আওতায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে তৎপরতা জোরদার করতে হবে;

৬. দেশে একজনও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না৷ গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ, ভূমিহীনদের কৃষি খাসজমি বন্দোবস্তসহ সকল সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যেন প্রকৃত অসহায়, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে৷ জমি ও ঘর প্রদানের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে;

৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পাঠদান কার্যক্রমের মানোন্নয়নে উদ্যোগী হতে হবে৷ অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে;

৮. কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রসমূহ যেন কার্যকর থাকে তা প্রতিনিয়ত তত্ত্বাবধান করতে হবে;

৯. শিশু-কিশোরদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের লক্ষে তাদের জন্য প্রত্যেক এলাকায় সৃজনশীল চর্চা, সাংস্কৃতিক কর্মকা- ও ক্রীড়া সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে;

১০. নাগরিকদের সুস্থ জীবনাচারের জন্য জেলা ও উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ প্রভৃতির সংরক্ষণ এবং নতুন পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে;

১১. পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে উচ্চ প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে;

১২. সরকারি দপ্তরসমূহের ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে৷ নিজ নিজ জেলার সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সাফল্য ওয়েবসাইটে তুলে ধরতে হবে;

১৩. জনসাধারণের মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কাজ করতে হবে৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার, গুজব ইত্যাদি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে;

১৪. আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন কোনোভাবেই অবনতি না হয়, সেদিকে নজরদারি জোরদার করতে হবে;

১৫. মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে কেউ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে;

১৬. মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দূর করতে হবে৷ নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষ যাতে জঙ্গিবাদে জড়িত না হয় সে জন্য সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে৷ যুব সমাজকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত রাখতে হবে;

১৭. বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, খাদ্যে ভেজাল, নকল পণ্য তৈরি ইত্যাদি অপরাধ প্রতিরোধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে;

১৮. বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে, কৃত্রিম সঙ্কট রোধকল্পে ও পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে;

১৯. সরকারি জমি, নদী, বনভূমি, পাহাড়, প্রাকৃতিক জলাশয় প্রভৃতি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে৷ ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের উদ্দেশে নতুন সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকে প্রাধান্য দিতে হবে;

২০. নিয়মিত নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি করতে হবে৷ স্লুইচগেট বা অন্য কোনো কারণে যেন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতার জন্য যেন উৎপাদন ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে;

২১. বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় তালগাছ রোপণ করতে হবে;

২২. পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে৷ নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তুলতে হবে;

২৩. জেলার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং জেলাভিত্তিক বিখ্যাত পণ্যসমূহের প্রচার, বিপণন এবং ব্রান্ডিং করতে হবে;

২৪. জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে সেবার মনোভাব নিয়ে যেন সরকারি দপ্তরগুলো পরিচালিত হয়, সে লক্ষে মনিটরিং জোরদার করতে হবে;

২৫. জেলার সকল সরকারি দপ্তরের কার্যক্রমসমূহ যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ তথা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে আপনাদের ব্রতী হতে হবে৷

ডয়চে ভেলে

 

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ডিসিদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ২৫ নির্দেশনা

আপডেট সময় : ০৯:১১:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩
জনগণের জন্য কার্যকর হবে কেবল এমন প্রকল্পগুলোই গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ একই সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদও দিয়েছেন তিনি৷

এছাড়া সরকারি তহবিল ব্যবহারে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কৃচ্ছ্রতাসাধনের কথাও বলেন বলে বাসস-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়৷

সরকারের মেয়াদের শেষ বছরের শুরুতে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিক নির্দেশনা দিতে মঙ্গলবার সকালে তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা৷ তেজগাঁওয়ের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তিনি৷

সেখানে তিনি খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন৷ পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যবস্থা নেওয়াসহ ২৫ দফা নির্দেশনা এসেছে সরকার প্রধানের কাছ থেকে৷

শেখ হাসিনা বলেন, “ডিসিদের বিবেচনা করতে হবে, যখনই কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়, সে সেটা ওই এলাকার জন্য কতটুকু কার্যকর৷ এতে মানুষ কতটুকু লাভবান হবে এবং অপচয় কতটুকু বন্ধ করা যায়, সেদিকে আপনাদের নজরদারি থাকা উচিত৷ যেহেতু একটা জেলার দায়িত্ব আপনাদের ওপর৷ স্বাভাবিকভাবে এগুলো আপনারা দেখবেন৷ কারণ, যত্রতত্র শুধু পয়সা খরচের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা আমি পছন্দ করি না৷ “কোভিড মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের যেন সেটা মোকাবেলা করতে না হয় সেজন্যই আমরা কৃচ্ছ্র সাধনের ঘোষণা দিয়েছি৷ আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে ফেলেছি এবং সে ব্যাপারেও আপনারা সচেতন থাকবেন৷”

বৈশ্বিক পরিস্থিতি আর আর্থিক সংকটের বিবেচনায় ২ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার নতুন প্রকল্প আপাতত স্থগিতের কথাও সম্মেলনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা৷

তিনি বলেন, “আর্থিক সংকট অবশ্যই সারা বিশ্বের মত আমাদেরও আছে৷ কিন্তু এমন পর্যায়ে নাই যে আমরা চলতে পারব না৷ আমাদের অগ্রাধিকার আমাদেরই বিবেচনা করতে হবে৷ ”

মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা সরকারে অগ্রাধিকারে আছে বলেও জানান শেখ হাসিনা৷

তিনি বলেন, “মানুষের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে আমাদের কৃষি উৎপাদন যাতে বাড়ে সেজন্য যা খরচ লাগে আমরা করব৷ ” জনকল্যাণমূলক কাজে বিনামূল্য করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দিতে সরকারে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের উদাহরণ দেন শেখ হাসিনা৷

কার্গো বিমান কেনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নিজেদের জন্য কার্গো বিমান কেনার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম কিন্তু অর্থনৈতিক এ অবস্থায় কিনতে পারছি না৷ ভবিষ্যতে কিনব পরিকল্পনা আছে৷”

জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “একটা কথাই বলব, আমি আসার (ক্ষমতায়) পর আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে এই যে জনমুখী বা জনগণের পাশে দাঁড়ানোর বা জনগণকে সেবা দেওয়ার যে একটা আন্তরিকতা থাকা উচিত, সে আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়েছে, এই পরিবর্তন আমি দেখেছি আপনাদের মাঝে৷  আর সেটা যদি না হত.. আমরা জনপ্রতিনিধিরা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই ক্ষমতায় আসি…”

মাঠ প্রশাসনের কর্মকতাদের কাজের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, “মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ, অগ্নিসন্ত্রাস বা গাছকাটা মোকাবিলায় মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন৷”

মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ না বাঁধলে বাংলাদেশ আরও ‘এগিয়ে’ যেত বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী৷

ডিসিদের তিনি নির্দেশনা দেন: “কৃচ্ছ্র সাধন করতে হবে, অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনাকাটা পরিহার করতে হবে৷ আমিদানি নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে নিজেদের চাহিদা নিজেতেরই পূরণ করতে হবে৷”

এ সময় তিনি কোরবানির গরুর উদাহরণ দিয়ে বলেন, “এক সময় তো ভারতীয় গরু ছাড়া আমাদের কোরবানিই হত না৷ এখন হচ্ছে না? হচ্ছে৷ আমরা এখন নিজেদের উৎপাদনে ওপর নির্ভর করছি৷ ”

জেলা প্রশাসকদের জনগণের ‘সেবক’ হওয়ার তাগিদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমরা যতটুকু সুযোগ-সুবিধা পাই, বা আপনারা সরকারি আমলা হিসেবে যে সুযোগ-সুবিধা পান, এগুলোর অবদান কিন্তু জনগণের৷ কারণ, জনগণের অর্থ এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকাতেই সবকিছু চলে৷ এর জন্য আমরা একেবারে তৃণমূল থেকে জনগণকে শক্তিশালী করে আনতে চাই৷

সরকার ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের সুবিধা এনে দিতে চায় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “যাতে করে মানুষের শহরমুখী প্রবণতা কমার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামে অর্থনৈতিক প্রাণ চাঞ্চল্য তৈরি হয়৷”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন৷ অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন৷

বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরুল্লাহ এবং জেলা প্রশাসকদের পক্ষে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু নাঈম মোহাম্মদ মারুফ খান ও বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন তিবরিজি৷

অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসনের সার্বিক উন্নয়নের উপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি দেখানো হয়৷

প্রধানমন্ত্রীর ২৫ দফা নির্দেশনা

১. খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। পতিত জমিতে ফসল ফলাতে হবে৷ কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে সে লক্ষে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে;

২. নিজেরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে এবং জনগণকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে৷

৩. সরকারি অফিসসমূহে সাধারণ মানুষ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বিঘ্নে যথাযথ সেবা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে৷ সেবা প্রত্যাশীদের সন্তুষ্টি অর্জনই যেন হয় সরকারি কর্মচারীদের ব্রত;

৪. সরকারি তহবিল ব্যবহারে কৃচ্ছ্র সাধন করতে হবে৷

৫. এসডিজি স্থানীয়করণের আওতায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে তৎপরতা জোরদার করতে হবে;

৬. দেশে একজনও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না৷ গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ, ভূমিহীনদের কৃষি খাসজমি বন্দোবস্তসহ সকল সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যেন প্রকৃত অসহায়, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে৷ জমি ও ঘর প্রদানের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে;

৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পাঠদান কার্যক্রমের মানোন্নয়নে উদ্যোগী হতে হবে৷ অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে;

৮. কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রসমূহ যেন কার্যকর থাকে তা প্রতিনিয়ত তত্ত্বাবধান করতে হবে;

৯. শিশু-কিশোরদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের লক্ষে তাদের জন্য প্রত্যেক এলাকায় সৃজনশীল চর্চা, সাংস্কৃতিক কর্মকা- ও ক্রীড়া সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে;

১০. নাগরিকদের সুস্থ জীবনাচারের জন্য জেলা ও উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ প্রভৃতির সংরক্ষণ এবং নতুন পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে;

১১. পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে উচ্চ প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে;

১২. সরকারি দপ্তরসমূহের ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে৷ নিজ নিজ জেলার সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সাফল্য ওয়েবসাইটে তুলে ধরতে হবে;

১৩. জনসাধারণের মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কাজ করতে হবে৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার, গুজব ইত্যাদি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে;

১৪. আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন কোনোভাবেই অবনতি না হয়, সেদিকে নজরদারি জোরদার করতে হবে;

১৫. মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে কেউ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে;

১৬. মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দূর করতে হবে৷ নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষ যাতে জঙ্গিবাদে জড়িত না হয় সে জন্য সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে৷ যুব সমাজকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত রাখতে হবে;

১৭. বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, খাদ্যে ভেজাল, নকল পণ্য তৈরি ইত্যাদি অপরাধ প্রতিরোধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে;

১৮. বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে, কৃত্রিম সঙ্কট রোধকল্পে ও পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে;

১৯. সরকারি জমি, নদী, বনভূমি, পাহাড়, প্রাকৃতিক জলাশয় প্রভৃতি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে৷ ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের উদ্দেশে নতুন সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকে প্রাধান্য দিতে হবে;

২০. নিয়মিত নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি করতে হবে৷ স্লুইচগেট বা অন্য কোনো কারণে যেন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতার জন্য যেন উৎপাদন ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে;

২১. বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় তালগাছ রোপণ করতে হবে;

২২. পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে৷ নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তুলতে হবে;

২৩. জেলার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং জেলাভিত্তিক বিখ্যাত পণ্যসমূহের প্রচার, বিপণন এবং ব্রান্ডিং করতে হবে;

২৪. জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে সেবার মনোভাব নিয়ে যেন সরকারি দপ্তরগুলো পরিচালিত হয়, সে লক্ষে মনিটরিং জোরদার করতে হবে;

২৫. জেলার সকল সরকারি দপ্তরের কার্যক্রমসমূহ যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ তথা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে আপনাদের ব্রতী হতে হবে৷

ডয়চে ভেলে