দুই ভাই বিশ্বকাপ খেলবেন দুই দেশের হয়ে
- আপডেট সময় : ০৮:৫১:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ নভেম্বর ২০২২
- / ১৬০৩ বার পড়া হয়েছে
বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হতে বাকি আর দুই সপ্তাহেরও কম সময়। সব ফুটবলপ্রেমীর কাছেই বিশ্বকাপের এই সময়টা দারুণ স্পেশাল। তবে এবারের কাতার বিশ্বকাপটা সম্ভবত সবচেয়ে স্পেশাল হতে যাচ্ছে উইলিয়ামস পরিবারের জন্য। এই পরিবারের আপন দুই ভাই- ইনাকি উইলিয়ামস ও নিকো উইলিয়ামস প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন। দুই ভাই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন দুটি ভিন্ন দেশ স্পেন ও ঘানার হয়ে। যদিও এই ঘটনা এবারই প্রথম নয়। জার্মানি ও ঘানার হয়ে বিশ্বকাপ খেলা দুই বোয়েটাং ভাই- জেরোম বোয়েটাং ও প্রিন্স বোয়েটাংয়ের গল্প তো সবার জানা। তবে এই ইনাকি উইলিয়ামস ও নিকো উইলিয়ামসের বেড়ে ওঠা ও ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্পটা দারুণ রোমাঞ্চকর।
ইনাকি ও নিকো দু’জনেরই জন্ম স্পেনে। দু’জনেই খেলেন একই ক্লাব অ্যাতলেটিক বিলবাওয়ের হয়ে। ২০১৩ সালে ইনাকি উইলিয়ামসকে দলে ভেড়ায় অ্যাতলেটিক বিলবাও। ছোট ভাই নিকোর বয়স তখন মাত্র ১১। ১১ বছর বয়সে নিকো যোগ দেয় অ্যাতলেটিক বিলবাওয়ের ইয়াং দলে। অ্যাতলেটিক বিলবাওয়ের হয়ে ইনাকির অভিষেক হয় ২০১৪ সালে।
২০২১ এ এই ফরোয়ার্ডের গোলেই বার্সেলোনাকে হারিয়ে সুপার কোপা জেতে অ্যাতলেটিক বিলবাও। আর ২০২১ এই রিয়াল ভায়াদোলিদের বিপক্ষে মাঠে নামার মাধ্যমে অ্যাতলেটিক বিলবাওয়ের হয়ে অভিষেক হয় ছোট ভাই নিকো উইলিয়ামসের।
ছোট ভাই নিকো কাতার বিশ্বকাপে খেলবেন স্পেনের হয়ে। সেপ্টেম্বরে উয়েফা নেশন্স লিগে স্পেন জাতীয় দলে প্রথমবারের মতো ডাক পান নিকো উইলিয়ামস। নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই বদলি হিসেবে মাঠে নেমে মোরাতাকে দিয়ে গোল করান নিকো উইলিয়ামস। আর সেই গোলেই স্পেনের উয়েফা নেশন্স লিগের সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত হয়।
অন্যদিকে ইনাকি উইলিয়ামস বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন তাঁর বাবার দেশ ঘানার হয়ে। নিজের জন্মস্থান স্পেনের নাগরিকত্ব পরিবর্তন করে ইতোমধ্যেই বাবার দেশ ঘানার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। ঘানার হয়ে ব্রাজিলের বিপক্ষেও খেলেছেন তিনি।
উইলিয়ামস ভাইদের বেড়ে ওঠার গল্প রীতিমতো সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। উন্নত জীবনের আশায় মারিয়া ও ফ্লেক্স দম্পতি ঘানা ছেড়ে ৪ হাজার কিলোমিটার দূরের স্পেনের উদ্দেশে যাত্রা করেন। বিশাল এই পথের কিছুটা তাঁরা ছাদ খোলা ট্রাকে করে পাড়ি দেন অন্য শরণার্থীদের সঙ্গে গাদাগাদি করে। বাকি পথ তাঁরা পার করেন পায়ে হেঁটেই। ৪০-৫০ ডিগ্রির উত্তপ্ত গরমে সাহারা মরুভূমির তপ্ত বালু মারিয়া ও ফ্লেক্স দম্পতি পায়ে হেঁটেই পার করেন। সে সময় মারিয়ার গর্ভে বেড়ে উঠছিল বড় সন্তান ইনাকি। মরুভূমির তপ্ত বালুতে হাঁটার ফলে ফ্লেক্সের পায়ে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়, যার ফলে আজও ফ্লেক্স খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন। ভয়ংকর এই ৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এই দম্পতি এক সময় স্পেনের মেলিলায় পৌঁছান। কিন্তু সেখানেও বাধে বিপত্তি। অবৈধ অভিবাসনের দায়ে মেলিলার পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁরা ছাড়া পান এবং স্পেনে রাজনৈতিক আশ্রয় ও নাগরিকত্ব পান।
স্পেনের বিলবাও শহরে জন্ম হয় ইনাকি উইলিয়ামসের। পরে ৮ বছর পর নিকোরও জন্ম হয় স্পেনেই। জীবিকার তাড়নায় ইনাকি ও নিকোর বাবা ফ্লেক্সকে বেশিরভাগ সময়ই বাইরে থাকতে হতো। ইনাকিই ছিল ছোট ভাই নিকোর অভিভাবক। নিকোকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, টিফিন রেডি করে দেওয়া, এমনকি ফুটবল প্র?্যাকটিসে নিয়ে যাওয়া; যাবতীয় দায়িত্ব ইনাকিই পালন করতেন। মা-বাবার এই সংগ্রামের জীবন সম্পর্কে দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইনাকি বলেন, ‘আমি জানি আমি কখনোই তাঁদের প্রতিদান দিতে পারব না। আমাদের জন্য তাঁরা তাঁদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে। কিন্তু আমি অবশ্যই সর্বোচ্চ চেষ্টা করব তাঁদের এমন একটা জীবন উপহার দিতে, যে রকম জীবন তাঁরা আমাদের দিতে চাইত।’
ইনাকি এবং নিকো নিঃসন্দেহেই সঠিক পথেই আছেন। অ্যাতলেটিক বিলবাওয়ে দু’জনই রয়েছেন দারুণ ছন্দে। সামনে কী হতে যাচ্ছে, তা ভবিষ্যতের হাতেই তোলা থাকুক। তবে কাতার বিশ্বকাপে মারিয়া-ফ্লেক্স দম্পতি যে একটি মুহূর্তের জন্যও তাঁদের দুই সন্তানের খেলা মিস করতে চাইবেন না, তা নিঃসন্দেহে বলে দেওয়াই যায়। উইলিয়ামস ভাইদের জন্য রইল শুভকামনা।