নিভৃতচারী একজন দেশপ্রেমিকের নাম ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
- আপডেট সময় : ০৯:২০:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩
- / ১৬১৫ বার পড়া হয়েছে
নিভৃতচারী একজন দেশপ্রেমিকের নাম ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। চলে গেলেন দেশের জনস্বাস্থ্য চিন্তাবিদ। দীর্ঘদিন কিডনী রোগ ও বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে পৃথিবীর মায়া কাটালেন দেশের ওষুধনীতির অন্যতম কারিগর। অন্যতম সংগঠক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে জাতির ক্রান্তিলগ্নে ছায়া দিয়েছেন বটবৃক্ষের মতো।
জনম ভর যার মননে ছিল একটাই ভাবনা- দেশ ও দশের কল্যাণ। অর্জনের পাল্লা পাহাড়সম না হলেও এ দেশের মানুষ তাকে ভালোবেসেছে অকৃত্রিমভাবে। সাহসী এই মানুষটির শূণ্যতা পূরণ হওয়ার নয়। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী। এ দেশে তিনি একজন, এক ও অনন্য। চিন্তাবিদ, সংগঠক ও জনমানুষের সমস্যা নিয়ে কথা বলতেন তিনি। ছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেলেন জনস্বাস্থ্য চিন্তাবিদ। ১৯৮২ সালের ওষুধনীতি প্রণয়নের অন্যতম কারিগর ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বহির্বিশ্বে তাঁর পরিচয় বিকল্প ধারার স্বাস্থ্য আন্দোলনের সমর্থক ও সংগঠক হিসেবে।
এক সপ্তাহ আগে মুর্মূর্ষ অবস্থায় ভর্তি হন নিজ হাতে গড়ে তোলা হাসপাতাল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। শেষ সময়ে ছিলেন লাইফ সাপোর্টে। রক্তে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আর ফেরানো গেলো না মানুষটিকে।
বিগত ১০ বছর ধরে সেখানেই চলছিলো তার কিডনী রোগের চিকিৎসা। নিরংহকার এই মানুষটি কর্পোরেটের লেবাসে নিজেকে বিকিয়ে দেননি। সাধারণ ও সাদামাটা জীবনের অধিকারী ডা. জাফরউল্লাহ মঙ্গলবার রাত ১১টায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার কোয়েপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবা হুমায়ন মোর্শেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মা হাছিনা বেগম চৌধুরী ছিলেন গৃহিণী। ঢাকায় পড়াশোনা শেষে বিলেতে পাড়ি জমান ডাক্তারী বিদ্যা রপ্ত করতে।
মা–বাবার ১০ জনের মধ্যে বড় সন্তান জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিশেষ ভূমিকা রাখেন ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন। চিকিৎসকদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত করা, হাসপাতালের জন্য ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেও তাঁর ছিল বিরাট ভূমিকা। তাঁর অনুপ্রেরণায় কয়েক দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েই সেসময় অনেক নারী হাসপাতালে সেবার কাজে নেমেছিলেন।
সদালাপী ও হাস্যেজ্জ্বল জাফরুল্লাহ চৌধুরী সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার সময়। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা যে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে দেয়া সম্ভব, তা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রমাণ করে।
শেষ সময়ে রাজনীতি ও তার সংস্কার নিয়ে সোচ্চার থেকেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। অসুস্থ শরীরে হুইল চেয়ারের করে গেছেন কারো জানাজায়, শেষ শ্রদ্ধায়, জাতির ক্রান্তিলগ্নের কর্মসূচিতে। সব সরকারের আমলে তিনি সমালোচক থাকলেও তাঁকে সবাই সমীহ করতেন। সহজ সরল এই মানুষটি সারাক্ষণ সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশ নিয়েই চিন্তিত থাকতেন।
মরেও নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে গেছেন ডাক্তারি পেশার জন্য। নিজের দেহ দান করে গেছেন মানুষের কল্যাণে। পরিবারের সম্মতিতেই মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়েছে। সব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এক অনন্য জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আবারো ফিরে পেতে বাংলাদেশের মানুষকে আরো কত সময় কত যুগ অপেক্ষা করতে হবে সে হিসেব জানা নেই কারো। ওপারে ভালো থাকবেন তিনি এই দোয়াই দেশবাসীর।