০১:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নির্বাচনকালীন গণমাধ্যম : আশঙ্কা ও ভিসানীতি

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ১২:০৮:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১৬২৬ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা দূর অতীতে কদাচিৎ প্রত্যাশিত মানের হলেও নিকট অতীত কার্যত হতাশা জাগানিয়া৷ বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, আসন্ন নির্বাচনে পরিবর্তন আনতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি৷ তবে বিরুদ্ধমতও রয়েছে৷

তথ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, সরকারি বিজ্ঞাপন পায় এরকম জাতীয় এবং আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা এখন ৫৭৬টি৷ সারা দেশে এমন সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক এবং ত্রৈমাসিক পত্রিকা আছে ১২৯টি৷ টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারে আছে ৩৯টি৷ আর তথ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল মোট ১৮২টি৷
১৭ কোটি মানুষের এই দেশে বাজার বিবেচনায় গণমাধ্যমের এই আকারকে অনেকেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মনে করেন৷ তারপরও নির্বাচনের আগে আরো কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হতে পারে বলে জানা গেছে৷ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের আবেদনও প্রক্রিয়াধীন আছে৷ নির্বাচনের আগে তারা অনুমোদন পাবে কিনা তা অবশ্য নিশ্চিত নয়৷ এছাড়া অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল আছে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়৷
কিন্তু গণমাধ্যম অনেক বিস্তার লাভ করলেও তারা গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, সুষ্ঠু নির্বাচন, বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় কতটা ভূমিকা রাখছে?
মোটা দাগে স্বৈরশাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশংসনীয়৷ তখন অবশ্য গণমাধ্যম এত বিস্তৃত ছিল না৷ অনলাইন তখনো আসেনি৷ আর টেলিভিশন বলতে একমাত্র বাংলাদেশ টেলিভিশন(বিটিভি)৷ সরকারের পক্ষে একপেশে প্রচারের কারণে তখন অবশ্য বিটিভিকে সাহেব-বিবি-গোলামের বাক্স বলা হতো৷ এখনো তার ‘চরিত্রে’ বিশেষ কোনো পরিবর্তন আসেনি৷ ওয়ান ইলেভেনের সময় সংবাদমাধ্যম যেমন বিরাজনীতিকরণের ভূমিকায় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবকধায়ক সরকারের হয়ে কাজ করেছে, আবার গণতন্ত্র ও নির্বাচনের জন্য ভূমিকা রাখা গনমাধ্যমও ছিল অনেক৷ এরপর থেকে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের বড় ধরনের বাঁক পরিবর্তনের কথা বলেন বিশ্লেষকরা৷
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, “এরশাদের পতনের আগে বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো চারদিন বন্ধ ছিল৷ এটা এরশাদের পতনকে ত্বরান্বিত করে৷ জিয়াউর রহমানের সময় সাংবাদিক সম্পাদকরা গ্রেপ্তার হলেও তারা সত্য প্রকাশ করেছেন৷ কিন্তু এখন গণমাধ্যমের প্যাটার্ন পরিবর্তন হয়ে গেছে৷” তার কথা, “রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনে সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে৷”
বিশ্লেষকরা বলছেন ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা সুষ্ঠু ও অংশহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে দৃশ্যত তেমন কার্যকর ছিল না৷ টেলিভিশন চ্যানেলগুলো অনেকটা বিটিভির মতো সরকারের প্রচারযন্ত্রে পরিণত হয়েছে৷ স্বাধীন সাংবাদিকতা সার্বিকভাবে চাপের মুখে আছে৷ জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ মনে করেন,” গত এক যুগ ধরে গণমাধ্যম চাপে আছে৷ সরকারে দিক থেকে বাধা আছে, আবার মালিক পক্ষের দিক ধেকেও বাধা আছে৷ মালিকরা তো পার্টিজান হয়ে গেছে৷ এখন সামনের ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচনের জন্য মিডিয়ার যে ভূমিকা রাখা দরকার, তারা তা পারবে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে৷ ড. ইউনূসের বিপক্ষে যখন ৫০ জন সম্পাদক বিবৃতি দেয়, তখন বুঝতে হবে পরিস্থিতি কেমন৷”
তার কথা, “মুক্ত সাংবাদিকতায় বাধা এরশাদের বা তার আগেও ছিল৷ কিন্তু তখন গণমাধ্যমের মুক্ত সাংবাদিকতার চেষ্টা ছিল৷ এখন চেষ্টাও নেই৷ এর সঙ্গে নানা আইন তো আছেই৷ সম্পাদকরা এখন রাজনীতিবিদ হয়ে গেছেন৷” তবে মার্কিন ভিসা নীতির কারণে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন৷
বাংলাদেশে গণমাধ্যম সংখ্যায় এবং আকারে বড় হলেও তাদের প্রো-পিপল ভূমিকা কমে গেছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক খান৷ বেসরকারি টেলিভিশনগুলো সরকারি প্রচারযন্ত্রে পরিণত হয়েছে৷ আর দুই-একটি ব্যতিক্রম বাদে পত্রিকাগুলোও একই ভূমিকা রাখছে বলে তিনি মনে করেন৷ তার কথা, “সাংবাদিকরাও এখন আর ভালো প্রতিবেদন না করে কেউ কেউ যোগাযোগের মাধ্যমে অর্থ আয়কেই প্রাধান্য দিচ্ছেন৷ বেতনের সঙ্গে মিলিয়ে তাদের বিলাসী জীবন দেখলেই বোঝা যায় সাংবাদিকতা কোন দিকে গেছে৷”
তিনি বলেন, “জিয়া থেকে এরশাদের সময় সাংবাদিকরা চেষ্টা করেছেন বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরতে৷ কিন্তু এখন আর সেরকম হয় না৷ গত দুইটি নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা সবল নয়৷ সামনের নির্বাচনেও এর পরিবর্তন হবে বলে আমার মনে হয় না৷”
“মার্কিন ভিসা নীতিও গণমাধ্যমকে বদলাতে পারবে না৷ কারণ, যারা গণমাধ্যমকে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছেন, তারা অ্যামেরিকায় যাবেন না৷ তাদের সেই প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না,” বলেন এই অধ্যাপক৷
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ১৯৯৪ সালে বিএনপির শাসনামলে মাগুরার উপ-নির্বাচন, এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আওয়ামী লীগের আন্দোলন৷ ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়রির নির্বাচন এবং ২০০৬ রাষ্ট্রপতি সালে ইয়াজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার৷ এই বিষয়গুলো নিয়ে বেসরকারি গণমাধ্যম সঠিক ভূমিকাই রেখেছিল৷ কিন্তু ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা সেরকম নয়৷
অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক খান মনে করেন, “কর্পোরেট মিডিয়ার এখন নানা স্বার্থ৷ আর সেটা সরকারের সঙ্গে যুক্ত৷ ফলে গণমাধ্যম এখন আর আগের ভূমিকায় নেই৷ সামনেও এর পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না৷”
বাংলাদেশের সাংবাদিকরা এখন রাজনৈতিকভাবেও বিভক্ত৷ তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক, নেতা৷ শ্যামল দত্ত বলেন, “রাজনৈতিক আদর্শ গণমাধ্যমের থাকতে পারে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও আছে৷ সেখানেও গণমাধ্যম এখন কর্পোরেটদের দখলে৷ কিন্তু তারপরও সংবাদ পরিবেশনে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হয়৷”
শওকত মাহমুদ বলেন, “রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকা এক জিনিস আর বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ খবর পরিবেশন আরেক জিনিস৷ এটা আমরা আগে ফলো করেছি৷ রাজনীতির জায়াগায় রাজনীতি এবং সাংবাদিকতার জায়গায় সাংবাদিকতা রেখেছি৷ কিন্তু এখন একাকার হয়ে গেছে৷”
বাংলাদেশে একসময় দলীয় সংবাদপত্র ছিল৷ বাংলার বাণী ও দিনকাল তার বড় উদাহরণ৷ কিন্তু এখন সেই অর্থে সরাসরি দলীয় মালিকানায় সংবাদমাধ্যম নেই৷ তারপরও কেন এই অবস্থা? আর্টিক্যাল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক প্রধান ফারুক ফয়সাল বলেন, “এখন ভিতর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ নিজেদের লোকদের সংবাদমাধ্যম, পত্রিকা, টেলিভিশনের লাইসেন্স দেয়া হয়৷ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার জন্য আলাদা ব্যবসাও দেয়া হয়৷ দলের মালিকানায় সংবাদমাধ্যম থাকার চেয়ে সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে এই পদ্ধতি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে এই সময়ে৷”
এর বাইরেও আছে সরকারি বিজ্ঞাপনের ভাগ বাটোয়ারার বিষয়৷ আছে নানা কৌশলে চাপ৷ ফারুক ফয়সাল বলেন,”এরসঙ্গে এখন সম্পাদকরা সুবিধা নেয়ার চিন্তায় থাকেন৷ জিয়া এরশাদের আমলে এরকম সুবিধাদী অনেক কম ছিল৷ ফলে সাংবাদিকদের মধ্যে চেষ্টা ছিল স্বাধীন সাংবাকিতার৷ এখন সেটাও নেই৷”
“আমি সামনে ভালো কিছু দেখছি না৷ নির্বাচন নিয়ে আমার সংশয় আছে৷ মার্কিন ভিসানীতিতে সাংবাদিকদের কেউ কেউ ভয় পেতে পারেন৷ কিন্তু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য গণমাধ্যম তেমন কাজ করবে বলে মনে হয় না৷”

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

নির্বাচনকালীন গণমাধ্যম : আশঙ্কা ও ভিসানীতি

আপডেট সময় : ১২:০৮:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা দূর অতীতে কদাচিৎ প্রত্যাশিত মানের হলেও নিকট অতীত কার্যত হতাশা জাগানিয়া৷ বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, আসন্ন নির্বাচনে পরিবর্তন আনতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি৷ তবে বিরুদ্ধমতও রয়েছে৷

তথ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, সরকারি বিজ্ঞাপন পায় এরকম জাতীয় এবং আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা এখন ৫৭৬টি৷ সারা দেশে এমন সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক এবং ত্রৈমাসিক পত্রিকা আছে ১২৯টি৷ টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারে আছে ৩৯টি৷ আর তথ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল মোট ১৮২টি৷
১৭ কোটি মানুষের এই দেশে বাজার বিবেচনায় গণমাধ্যমের এই আকারকে অনেকেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মনে করেন৷ তারপরও নির্বাচনের আগে আরো কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হতে পারে বলে জানা গেছে৷ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের আবেদনও প্রক্রিয়াধীন আছে৷ নির্বাচনের আগে তারা অনুমোদন পাবে কিনা তা অবশ্য নিশ্চিত নয়৷ এছাড়া অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল আছে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়৷
কিন্তু গণমাধ্যম অনেক বিস্তার লাভ করলেও তারা গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, সুষ্ঠু নির্বাচন, বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় কতটা ভূমিকা রাখছে?
মোটা দাগে স্বৈরশাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশংসনীয়৷ তখন অবশ্য গণমাধ্যম এত বিস্তৃত ছিল না৷ অনলাইন তখনো আসেনি৷ আর টেলিভিশন বলতে একমাত্র বাংলাদেশ টেলিভিশন(বিটিভি)৷ সরকারের পক্ষে একপেশে প্রচারের কারণে তখন অবশ্য বিটিভিকে সাহেব-বিবি-গোলামের বাক্স বলা হতো৷ এখনো তার ‘চরিত্রে’ বিশেষ কোনো পরিবর্তন আসেনি৷ ওয়ান ইলেভেনের সময় সংবাদমাধ্যম যেমন বিরাজনীতিকরণের ভূমিকায় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবকধায়ক সরকারের হয়ে কাজ করেছে, আবার গণতন্ত্র ও নির্বাচনের জন্য ভূমিকা রাখা গনমাধ্যমও ছিল অনেক৷ এরপর থেকে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের বড় ধরনের বাঁক পরিবর্তনের কথা বলেন বিশ্লেষকরা৷
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, “এরশাদের পতনের আগে বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো চারদিন বন্ধ ছিল৷ এটা এরশাদের পতনকে ত্বরান্বিত করে৷ জিয়াউর রহমানের সময় সাংবাদিক সম্পাদকরা গ্রেপ্তার হলেও তারা সত্য প্রকাশ করেছেন৷ কিন্তু এখন গণমাধ্যমের প্যাটার্ন পরিবর্তন হয়ে গেছে৷” তার কথা, “রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনে সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে৷”
বিশ্লেষকরা বলছেন ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা সুষ্ঠু ও অংশহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে দৃশ্যত তেমন কার্যকর ছিল না৷ টেলিভিশন চ্যানেলগুলো অনেকটা বিটিভির মতো সরকারের প্রচারযন্ত্রে পরিণত হয়েছে৷ স্বাধীন সাংবাদিকতা সার্বিকভাবে চাপের মুখে আছে৷ জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ মনে করেন,” গত এক যুগ ধরে গণমাধ্যম চাপে আছে৷ সরকারে দিক থেকে বাধা আছে, আবার মালিক পক্ষের দিক ধেকেও বাধা আছে৷ মালিকরা তো পার্টিজান হয়ে গেছে৷ এখন সামনের ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচনের জন্য মিডিয়ার যে ভূমিকা রাখা দরকার, তারা তা পারবে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে৷ ড. ইউনূসের বিপক্ষে যখন ৫০ জন সম্পাদক বিবৃতি দেয়, তখন বুঝতে হবে পরিস্থিতি কেমন৷”
তার কথা, “মুক্ত সাংবাদিকতায় বাধা এরশাদের বা তার আগেও ছিল৷ কিন্তু তখন গণমাধ্যমের মুক্ত সাংবাদিকতার চেষ্টা ছিল৷ এখন চেষ্টাও নেই৷ এর সঙ্গে নানা আইন তো আছেই৷ সম্পাদকরা এখন রাজনীতিবিদ হয়ে গেছেন৷” তবে মার্কিন ভিসা নীতির কারণে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন৷
বাংলাদেশে গণমাধ্যম সংখ্যায় এবং আকারে বড় হলেও তাদের প্রো-পিপল ভূমিকা কমে গেছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক খান৷ বেসরকারি টেলিভিশনগুলো সরকারি প্রচারযন্ত্রে পরিণত হয়েছে৷ আর দুই-একটি ব্যতিক্রম বাদে পত্রিকাগুলোও একই ভূমিকা রাখছে বলে তিনি মনে করেন৷ তার কথা, “সাংবাদিকরাও এখন আর ভালো প্রতিবেদন না করে কেউ কেউ যোগাযোগের মাধ্যমে অর্থ আয়কেই প্রাধান্য দিচ্ছেন৷ বেতনের সঙ্গে মিলিয়ে তাদের বিলাসী জীবন দেখলেই বোঝা যায় সাংবাদিকতা কোন দিকে গেছে৷”
তিনি বলেন, “জিয়া থেকে এরশাদের সময় সাংবাদিকরা চেষ্টা করেছেন বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরতে৷ কিন্তু এখন আর সেরকম হয় না৷ গত দুইটি নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা সবল নয়৷ সামনের নির্বাচনেও এর পরিবর্তন হবে বলে আমার মনে হয় না৷”
“মার্কিন ভিসা নীতিও গণমাধ্যমকে বদলাতে পারবে না৷ কারণ, যারা গণমাধ্যমকে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছেন, তারা অ্যামেরিকায় যাবেন না৷ তাদের সেই প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না,” বলেন এই অধ্যাপক৷
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ১৯৯৪ সালে বিএনপির শাসনামলে মাগুরার উপ-নির্বাচন, এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আওয়ামী লীগের আন্দোলন৷ ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়রির নির্বাচন এবং ২০০৬ রাষ্ট্রপতি সালে ইয়াজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার৷ এই বিষয়গুলো নিয়ে বেসরকারি গণমাধ্যম সঠিক ভূমিকাই রেখেছিল৷ কিন্তু ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা সেরকম নয়৷
অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক খান মনে করেন, “কর্পোরেট মিডিয়ার এখন নানা স্বার্থ৷ আর সেটা সরকারের সঙ্গে যুক্ত৷ ফলে গণমাধ্যম এখন আর আগের ভূমিকায় নেই৷ সামনেও এর পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না৷”
বাংলাদেশের সাংবাদিকরা এখন রাজনৈতিকভাবেও বিভক্ত৷ তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক, নেতা৷ শ্যামল দত্ত বলেন, “রাজনৈতিক আদর্শ গণমাধ্যমের থাকতে পারে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও আছে৷ সেখানেও গণমাধ্যম এখন কর্পোরেটদের দখলে৷ কিন্তু তারপরও সংবাদ পরিবেশনে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হয়৷”
শওকত মাহমুদ বলেন, “রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকা এক জিনিস আর বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ খবর পরিবেশন আরেক জিনিস৷ এটা আমরা আগে ফলো করেছি৷ রাজনীতির জায়াগায় রাজনীতি এবং সাংবাদিকতার জায়গায় সাংবাদিকতা রেখেছি৷ কিন্তু এখন একাকার হয়ে গেছে৷”
বাংলাদেশে একসময় দলীয় সংবাদপত্র ছিল৷ বাংলার বাণী ও দিনকাল তার বড় উদাহরণ৷ কিন্তু এখন সেই অর্থে সরাসরি দলীয় মালিকানায় সংবাদমাধ্যম নেই৷ তারপরও কেন এই অবস্থা? আর্টিক্যাল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক প্রধান ফারুক ফয়সাল বলেন, “এখন ভিতর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ নিজেদের লোকদের সংবাদমাধ্যম, পত্রিকা, টেলিভিশনের লাইসেন্স দেয়া হয়৷ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার জন্য আলাদা ব্যবসাও দেয়া হয়৷ দলের মালিকানায় সংবাদমাধ্যম থাকার চেয়ে সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে এই পদ্ধতি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে এই সময়ে৷”
এর বাইরেও আছে সরকারি বিজ্ঞাপনের ভাগ বাটোয়ারার বিষয়৷ আছে নানা কৌশলে চাপ৷ ফারুক ফয়সাল বলেন,”এরসঙ্গে এখন সম্পাদকরা সুবিধা নেয়ার চিন্তায় থাকেন৷ জিয়া এরশাদের আমলে এরকম সুবিধাদী অনেক কম ছিল৷ ফলে সাংবাদিকদের মধ্যে চেষ্টা ছিল স্বাধীন সাংবাকিতার৷ এখন সেটাও নেই৷”
“আমি সামনে ভালো কিছু দেখছি না৷ নির্বাচন নিয়ে আমার সংশয় আছে৷ মার্কিন ভিসানীতিতে সাংবাদিকদের কেউ কেউ ভয় পেতে পারেন৷ কিন্তু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য গণমাধ্যম তেমন কাজ করবে বলে মনে হয় না৷”

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ