পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রার অদ্ভুত খেলা
- আপডেট সময় : ০৫:০২:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুলাই ২০২৩
- / ১৭০৭ বার পড়া হয়েছে
আশেপাশের মহাকাশের তুলনায় এক্সোস্ফিয়ার কেন এত গরম? পৃথিবীর বাতাসের আবরণ আসলে ভিন্ন তাপমাত্রার একাধিক স্তর দিয়ে তৈরি৷ সবচেয়ে নীচের স্তর হিসেবে ট্রোপোস্ফিয়ারে আবহাওয়ার খেলা চলে৷ উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যায়৷
তার ঠিক উপরের স্তর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি টেনে নেয়৷ ফলে সেখানকার তাপমাত্রা বেড়ে প্রায় শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে ফেলে৷ মেসোস্ফিয়ার মহাজাগতিক রশ্মি প্রতিরোধ করে৷ সেখানকার উচ্চতম অংশে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের শীতলতম পরিবেশ বিরাজ করে, যা হলো মাইনাস ১৮০ ডিগ্রি৷ যেখানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বিরাজ করছে, সেই থার্মোস্ফিয়ারে আবার তাপমাত্রা দেড় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যায়৷
তারও উপরে রয়েছে এক্সোস্ফিয়ার৷ সেটাই মহাকাশের সীমানা৷ সেখানকার তাপমাত্রা এক হাজার ডিগ্রি৷ ১৯৭২ সালে অ্যামেরিকার অ্যাপোলো মিশনের মহাকাশচারীরা চাঁদ থেকে পৃথিবী ও তার বায়ুমণ্ডলের আলট্রাভায়োলেট ছবি তোলেন৷ সেই ছবিতে এক্সোস্ফিয়ার উজ্জ্বল ছায়ার মতো দেখাচ্ছে৷
এর প্রায় ৫০ বছর পর সূর্য গবেষণার জন্য তৈরি সোহো নামের মহাকাশযান দেখিয়ে দিয়েছিল, যে আমাদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে বাইরের স্তর আসলে মহাকাশের আরো ভেতর পর্যন্ত বিস্তৃত৷ পৃথিবীর ব্যাসের ৫০ গুণ বড় সেই স্তর এমনকি চাঁদও পেরিয়ে গেছে৷
কিন্তু এক্সোস্ফিয়ারের তাপমাত্রা কীভাবে এক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে? তার ঠিক উপরে মহাকাশে মাইনাস ২৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকা সত্ত্বেও এমনটা কীভাবে ঘটে? কণার গতির ভিত্তিতে সেখানকার তাপমাত্রা স্থির হয় বলেই এমনটা দেখা যায়৷ কণার ঘূর্ণনের গতি যত ধীর হবে, ঠাণ্ডাও তেমনই হবে৷ গতি বাড়লে তাপমাত্রাও বাড়বে৷ এক্সোস্ফিয়ারের মধ্যে মূলত হাইড্রোজেন থাকে, যা সব কণার মধ্যে সবচেয়ে হালকা৷
বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরগুলিতে আরও ভারি পরমাণু এবং অণু বিরাজ করে৷ সেগুলি এক্সোস্ফিয়ারের ক্ষুদ্র হাইড্রোজেনের কণার তুলনায় অনেক ধীর গতিতে চলাচল করে৷ হাইড্রোজেন এত দ্রুত সঞ্চালন করে, যে এমনকি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানও সেগুলিকে বশে আনতে পারে না৷ প্রচলিত থার্মোমিটার দিয়ে অবশ্য এক্সোস্ফিয়ারে এক হাজার ডিগ্রি তাপমাত্রা পরিমাপ করা সম্ভব নয়৷ কারণ গ্যাসের ঘনত্ব অত্যন্ত কম হবার কারণে পরিমাপযোগ্য তাপ পরিবহণ সম্ভব হয় না৷ যেমন চাঁদের উপর মাত্র পাঁচ ঘন সেন্টিমিটার জায়গায় একটি মাত্র হাইড্রোজেন পরমাণু পাওয়া যায়, যা প্রায় না থাকারই মতো৷
ডয়চে ভেলে