বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নকল পোশাক রপ্তানির অভিযোগ
- আপডেট সময় : ০৪:১২:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / ১৬৬৯ বার পড়া হয়েছে
আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক লোগোসহ হুবহু নকল করে রপ্তানির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নজরদারিতে পড়েছে বাংলাদেশের পোশাক পণ্য৷
ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বাণিজ্য সংগঠনের তরফ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর (ইউএসটিআর)৷ মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ ও কার্যকরের দায়িত্বে থাকা ইউএসটিআরের এই পর্যালোচনাকে বলা হচ্ছে ‘স্পেশাল ৩০১ রিভিউ অন আইপিআর (ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস) প্রটেকশন অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট’৷ পর্যালোচনা শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে বাড়তি শুল্ক আরোপ, কোটা বেঁধে দেওয়া, এমনকি নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, যারা একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা৷
বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যালোচনার বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে৷ পাশাপাশি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য সময় চাওয়া হয়েছে ইউএসটিআরের কাছে৷
বাংলাদেশের নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর নেতা মোহাম্মদ হাতেম বলছেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগিতা করবেন ব্যবসায়ীরা৷ অভিযোগের কোনো সত্যতা পেলে সরকারের দেওয়া সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে দুই লাখ ৮২ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকার৷ এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গেছে ৫৯ হাজার ৬২৪ কোটি ১০ লাখ টাকার পোশাক, যা মোট পোশাক রপ্তানির ২১ শতাংশের মত৷
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ) এবং ফ্রান্সের ইউনিয়ন দেস ফাব্রিকান্তস (ইউএনআইএফএবি) অভিযোগ করেছে, তাদের দেশের ক্রেতাদের দেওয়া ক্রয়াদেশে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক হুবহু নকল করে ভিন্ন দেশ ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা, যা মেধাস্বত্ব আইনের পরিপন্থি৷
গত বছরের জানুয়ারিতে ওই অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরে (ইউএসটিআর) জমা দেয় সংগঠন দুটি৷ সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পর্যালোচনা শুরুর বিষয়টি বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে ইউএসটিআর৷
অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে এএএফএ এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও স্টিভ ল্যামার এক ইমেইলে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পোশাক আমদানির উৎস হিসেবে বাংলাদেশ আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু বাংলাদেশে নকল পণ্য তৈরির প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশে তৈরি এসব নকল পণ্য ধরা পড়ার ঘটনাও ক্রমশ বাড়ছে৷
‘‘পোশাক ও পাদুকা শিল্পের উৎপাদন প্রক্রিয়া অবশ্যই বৈধ হতে হবে৷ বৈধ ব্যবসার পরিবেশকে আমরা নষ্ট হতে দিতে পারি না৷ মেধাস্বত্ব যাতে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়, নকলকারীদের বিরুদ্ধে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, আমেরিকায় মানুষের কাজের সুযোগ এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সকল ক্ষেত্রকে যেন সুরক্ষা দেওয়া যায়, তা সবসময়ই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷”
এএএফএ এর অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৫৬টি পণ্য চালান জব্দ করা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশে তৈরি নকল পণ্য পাওয়া গেছে৷ ২০১১ সালের চেয়ে এই পরিমাণ ৫০ শতাংশ বেশি৷
২০২২ সালে ১২টি দেশে বাংলাদেশে তৈরি নকল পণ্য জব্দ করা হয়েছে৷ এসব দেশের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, মালয়েশিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবোগো, জাপান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রোমানিয়া, সৌদি আরব, জার্মানি ও ফিলিপিন্স৷
মালয়েশিয়ায় ২০২২ সালে ১৭টি অভিযানে প্রায় পৌনে দুই লাখ পোশাক জব্দ করা হয়েছে, যার সবই বাংলাদেশে উৎপাদিত নকল পণ্য৷
এএএফএ এর অভিযোগে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি নকল পণ্য রপ্তানিককারক পাঁচ দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে রেখেছে ওইসিডি৷ নকল জুতা, হাতব্যাগ ও গয়নার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ রয়েছে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশের তালিকায়৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অফিসের বিচারে চীন ও তুরস্কের পর বাংলাদেশ হল নকল তৈরি পোশাকের বৃহত্তম উৎস৷
অথচ যথাযথ নীতি কাঠামোর অভাব, এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনাগ্রহ এবং সর্বব্যাপী দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশে যথাযথ মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের কাজটি ‘একপ্রকার অসম্ভব’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে এএএফএ এর অভিযোগে৷
তাদের মতামতে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা জানি, এলসিডি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উন্নয়ন ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহায়তা পায়৷ কিন্তু নকল পণ্যের উৎপাদক হিসেবে বাংলাদেশকে বাড়তে দিলে তার যে প্রভাব আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পড়বে, সেটা সংশোধন করার উপায় থাকবে না৷
‘‘এই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের জন্য একটি মজবুত ভিত্তি তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষককে সহায়তা করা গেলে বৈধ বাণিজ্য পরিবেশের টেকসেই উন্নয়ন ঘটবে এবং তখন বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকির চেয়ে সম্ভাবনা বেশি দেখবেন বলে নতুন কর্মসংস্থান তৈরির পথ খুলবে৷ মৌলিক এ সমস্যাগুলোর সুরাহা করা হলে তা বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথকে মসৃণ করবে৷”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ইমেইলের জবাবে ফ্রান্সের ইউনিয়ন দেস ফাব্রিকান্তস (ইউএনআইএফএবি) বলেছে, তারা অভিযোগের বিষয়ে জানাতে চায়, তবে সেজন্য একটু সময় দিতে হবে৷
বাংলাদেশ যা করছে
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর (ইউএসটিআর) বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পর্যালোচনা শুরুর বিষয়টি জানিয়ে বলেছিল, এ বিষয়ে উন্মুক্ত শুনানির আয়োজন করা হবে৷ তার আগে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ যেন অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়৷
বাংলাদেশ ওই চিঠি দেরিতে পাওয়ায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমই, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কাস্টমস ও শুল্ক অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়৷
সেই বৈঠকে অংশ নেওয়া বিকেএমইএ এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘কোনো ক্রেতা সংগঠন আমাদের কাছে এখনও অভিযোগ করেনি৷ তবে মার্কিন দপ্তরে কয়েকটি সংগঠন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের বিষয়ে অভিযোগ করেছে৷ ওই দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র এলডিসি রাষ্ট্র৷”
অভিযোগ প্রমাণিত হলে বাংলাদেশ কী ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘তারা তিনটি শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷ প্রথমত মার্কিন বাজারে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক বাড়বে, দ্বিতীয়ত তারা বাংলাদেশের রপ্তানিতে কোটা দিয়ে দিতে পারে আর তৃতীয়ত বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের উপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে৷ তবে বাংলাদেশ এ ধরনের শাস্তির মুখে পড়ারা সম্ভাবনা নেই বলেই আমি মনে করি৷”
১৩ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে বৈঠক করার পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া উদ্যোগের বিষয়ে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন৷
এ বিষয়ে কথা বলতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রী বিদেশে আছেন৷ আগামী সপ্তাহে তিনি অফিস করবেন৷
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘সময় স্বল্পতার জন্য গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আমরা ইএসটিআর এর অভিযোগের বিষয়ে একটি লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছি৷ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়েছি বিস্তারিত জানাতে৷ সময় পেলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া যাবে- বিষয়টি সেখানে উল্লেখ করেছি৷”
১৩ ফেব্রুয়ারির চিঠিতে বাংলাদেশ কী বলেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানিয়েছি, মেধাস্বত্ব আইনসহ কপি রাইট ও ট্রেড সংশ্লিষ্ট সব ধরনের আইন বাংলাদেশে রয়েছে৷ আইনগুলোর নামসহ এখানে প্রতিকারের কী কী সুযোগ রয়েছে তার সংক্ষিপ্তসারও দেওয়া হয়েছে৷ দেশের আদালতে যে কেউ এ বিষয়ে প্রতিকার চাইতে পারে৷ এখন পর্যন্ত অভিযোগকারী কোনো ব্র্যান্ড সেখানে পণ্য নকল বা জালিয়াতির মামলা করেনি৷
‘‘আমরা এসব আইনের বাস্তবায়ন করছি, তবে এলডিসি রাষ্ট্র হওয়ায় তা পুরোটা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি এখনো৷ পর্যায়ক্রমে পুরোটাই বাস্তবায়ন হবে৷ আগামী ২০২৬ সালের পর যেন এ বিষয়ে কোনো ইস্যু তৈরি না হয়, সেজন্য বাণিজ্য সংগঠনসহ সব পর্যায়ে তৎপরতা বাড়ানো শুরু করেছে সরকার৷”
অভিযোগের বিষয়ে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে ইউএসটিআরের উন্মুক্ত শুনানি হবে৷ হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, সেখানে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকলে বাংলাদেশ শুনানিতে অংশ নেবে৷
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সর্বোচ্চ সংগঠন বিজিএমইএ এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও এইচকেসি অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘অভিযোগের বিষয়টি উদ্বেগের৷ বিজিএমইএ বিষয়টি নিয়ে সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করবে৷ এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করবে৷ আমরা বিস্তারিত জেনে দ্রুতই বৈঠক করব৷”
আর মোহাম্মদ হাতেম বলেন, অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সরকারকে সহযোগিতা করবে৷ কোনো কারখানা বা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে যাবে সরকার৷ সেসব কারকানার বিষয়ে সরকারের যে কোনো সিদ্ধান্ত বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ মেনে নেবে৷
বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইএবি) সভাপতি ও তৈরি পোশাক নির্মাতা এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম মুর্শেদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তৈরি পোশাকের একটি নির্ভযোগ্য উৎস হচ্ছে বাংলাদেশ৷ ক্রয়াদেশ দেওয়া ও সরবরাহ করা দুটি পক্ষের মধ্যে ব্যবসাটা হয়৷ এক্ষেত্রে দুই পক্ষকেই চুক্তি অনুসরণ করতে হয়৷ অভিযোগ যদি এসে থাকে, তাহলে ক্রেতা ও রপ্তানিকারকের মধ্যে আলোচনা করেই তার সমাধান সম্ভব৷”
তাছাড়া নকল পণ্য তৈরির কাজ ব্যবসায়িক দিক দিয়েও ‘লাভজনক নয়’ বলে মন্তব্য করেন তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম উদ্যোক্তা সালাম মুর্শেদী৷
তিনি বলেন, ‘‘মান নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে কোনো সময় কিছু পণ্যে ত্রুটি দেখা দেয়৷ সেই ঘাটতি পূরণে বর্তমানে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ অতিরিক্ত পণ্য তৈরি করা হয়৷ এই অতিরিক্ত পণ্য কোনো ক্রেতাই নেন না৷ পরিমাণে কম হওয়ায় তা অন্য কোনো দেশে রপ্তানিও সম্ভব না৷
‘‘এখন কেউ কোনো কোম্পানির লোগো হুবহু নকল করে পণ্য তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করলে তা লোকসান হবে৷ কারণ যারা কিনবে তারা তো মূল কোম্পানির দাম দেবে না৷”
তৈরি পোশাক খাতে যে অতিরিক্ত পণ্য বেঁচে যায়, তা লট আকারে বিক্রি করা হয় দেশের ভেতরেই৷ আর সেটা বিক্রি হয় উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে৷
বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারির সময় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়ে যায়৷ পশ্চিমা বিভিন্ন ক্রেতা দেশে মহামারির প্রভাব বেশি দেখা দেওয়ায় তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দেয়৷ তাতে এইচএনএম, ওয়ালমার্ট, গ্যাপ এর মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো তাদের ক্রয়াদেশ স্থগিত করে৷
মহামারির প্রকোপ কমলে অনেকেই পুরনো ক্রয়াদেশে উৎপাদিত পোশাক বাংলাদেশ থেকে নেয়নি৷ অনেকে মূল্য কমিয়েছে, আবার কেউ পণ্য নিলেও পুরো দাম দেয়নি৷
যেসব পণ্য বাংলাদেশ থেকে ক্রেতারা বুঝে নেননি; সেই পণ্যর একটি অংশই অন্য দেশে রপ্তানি হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ৷ কারণ, পণ্য রপ্তানির জন্য আনা কাঁচামালে শুল্ক নেই৷ কিন্তু এই সুবিধা নিয়ে কাঁচামাল এনে পণ্য রপ্তানি না করলে কাঁচামালের ওপর ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷
এই জরিমানা এড়াতে কেউ কেউ লোকসান দিয়ে হলেও ভিন্ন দেশে পোশাক রপ্তানি করে থাকতে পারে বলে ব্যবসায়ীদের ভাষ্য৷
ডয়চে ভেলে