১২:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

বাজির ‘কেরামতিতে’ পুঁজি নারী ও শিশুশ্রম

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ০৪:৪৪:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩
  • / ১৭২৮ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নারী ও শিশুদের দিয়ে খুব কম টাকায় কাজ করিয়ে তৈরি হয় বাজি। বিস্ফোরণে প্রাণ যায় তাদেরই।

দত্তপুকুরের মেচপোল গ্রামের নারীরা বাজি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিল। এখানকার অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই ব্যবসা। একাধিক পর্যায়ে বাজি বানানোর কাজ হতো। মূলত আলু বোমা তৈরি হতো এখানে। পাথরকুচির সঙ্গে মশলা মিশিয়ে যে পুরিয়া তৈরি করা হতো, তা জরি দিয়ে মুড়তেন গ্রামের নারীরা। এ কাজে মাথাপিছু কমপক্ষে দুইশ টাকা দৈনিক রোজগার হতো। গ্রামবাসী জানিয়েছেন, এই এলাকার ঘরে ঘরে নারীরা এই কাজকে কর্মসংস্থান হিসেবে নিয়েছিলেন। তাই বাজি কারখানার বিপদ আছে জেনেও তেমন জোরদার বিরোধিতা দেখা যায়নি।

সঙ্গে নাবালকরাও

এই গ্রামের ইটভাটায় বাজির কারখানা চলতো। তার সঙ্গে ছিল বিভিন্ন রাসায়নিক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বাজি তৈরির কাজে শিশু ও নারীরাই ছিল প্রধান শ্রমিক। অনেক নাবালক শ্রমিক এই কাজে যুক্ত ছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। নামমাত্র দিনমজুরিতে এরা বিপজ্জনক কাজ করতো দিনের পর দিন। অনেকে স্কুল শেষ করে এই কারখানায় আসতো। কেউ বা এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছিল, পরিবারে রোজগার করার মতো কেউ না থাকায়। এছাড়া মুর্শিদাবাদ থেকে বড় সংখ্যায় শ্রমিক এখানে আসতেন বাজির কাজ করার জন্য। মুর্শিদাবাদের জিরাত শেখ এই ব্যবসার অন্যতম অংশীদার।

জীবনের অধিকার

নারী, শিশু ও অন্যান্যদের সামান্য মজুরিতে কাজ করানোর এই প্রবণতা বিভিন্ন শিল্পের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। বিশেষত কর্মসংস্থানের অভাব তীব্র হয়ে ওঠায় শ্রম অত্যন্ত সুলভ হয়ে উঠেছে। লঙ্ঘিত হচ্ছে জীবন ও জীবিকার অধিকার।

সাধারণ মানুষের অধিকার আন্দোলনের কর্মী, এপিডিআর-এর রাজ্য সম্পাদক রঞ্জিত শূর বলেন, ”দুইশ টাকায় একটা মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের রাজনীতিকরা নিরাপত্তার ঘেরাটোপে ঘুরে বেড়ান। জনতার সুরক্ষা নেই। এতে জীবন ও জীবিকার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। রাজ্য বা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ ব্যাপারে হাত গুটিয়ে রয়েছে। তারা শুধু কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের রাজনৈতিক স্বার্থ দেখতে তৎপর।”

কেরামতের ‘কেরামতি’

দত্তপুকুর বিস্ফোরণে ‘নাটের গুরু’ ধরা হচ্ছে কেরামত আলিকে। এর আগে সে এই থানা এলাকাতেই বাজির কারখানা খুলেছিল। সেখানে একবার বিস্ফোরণও হয়। তাতে দুজন মারা যায়। কিন্তু সেবার পুলিশি ঝামেলার পড়তে হয়নি কেরামতকে। তারপর মেচপোল গ্রামে বাজির কারখানা চালু করে সে। বাজি কারখানায় তল্লাশি চালিয়ে একাধিকবার কেরামতকে পাকড়াও করেছে পুলিশ। যদিও পরে সে ছাড়া পেয়ে যায়।

কেরামতের পাশাপাশি এই বিস্ফোরণের নেপথ্যে আরো বড় এক ব্যবসায়ী নাম উঠে আসছে। তার নাম আব্দুল মহিত। তিনি কেরামতের বাজির ব্যবসায় টাকা ঢেলেছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।

ভিন্নমত দুই স্ত্রী-র

বিস্ফোরণে নিহত কেরামতের দুই স্ত্রীর মুখ থেকে ভিন্ন ধরনের বয়ান উঠে আসছে। বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে কেরামতের সঙ্গে তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সন্তান রবিউল আলিও মারা গিয়েছে। প্রথম পক্ষের স্ত্রীর দাবি, “আগে মাটি কাটার কাজ করতো তার স্বামী। পরে বাজি ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সে তার বড় ছেলেকেও এই কাজে যুক্ত করে।”

যদিও কেরামতের দ্বিতীয় স্ত্রীর বক্তব্য ভিন্ন। তিনি বলেছেন, “বাজি কারখানা সঙ্গে কেরামতের কোনো যোগ ছিল না। সে পুকুরে মাছ চাষ করতো।” তা হলে বিস্ফোরণের সময় ঘটনাস্থলে কী করছিল কেরামত? দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী বলেছেন, “রবিউলকে টাকা দিতে সেখানে যায় আমার স্বামী। তখন বিস্ফোরণে দুজনেই মারা গিয়েছে।”

জোরালো বিস্ফোরক?

তবে শুধু আলু বোমা নয়, নীলগঞ্জে বেশি তীব্রতার বোমাও তৈরি হতো বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এনআইএ এবং ফরেনসিক ল্যাবরেটরির প্রতিনিধিরা আলাদা আলাদা ভাবে এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এনআইএ-র তদন্তকারীরা কথা বলেছেন গ্রামবাসীর সঙ্গে। সূত্রের খবর, কম তীব্রতার বিস্ফোরক মজুত ছিল এখানকার বাজি কারখানায়। কিন্তু বিভিন্ন রাসায়নিকের উপস্থিতি ও অস্থায়ী ‘গবেষণাগার’ খুঁজে পাওয়ায় সন্দেহ বেড়েছে। এখানে কি উচ্চ তীব্রতার বিস্ফোরকও তৈরি হতো? ফরেনসিক রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু নিশ্চিত করে বলছেন না তদন্তকারীরা।

ডয়চে ভেলে

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

বাজির ‘কেরামতিতে’ পুঁজি নারী ও শিশুশ্রম

আপডেট সময় : ০৪:৪৪:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩

নারী ও শিশুদের দিয়ে খুব কম টাকায় কাজ করিয়ে তৈরি হয় বাজি। বিস্ফোরণে প্রাণ যায় তাদেরই।

দত্তপুকুরের মেচপোল গ্রামের নারীরা বাজি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিল। এখানকার অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই ব্যবসা। একাধিক পর্যায়ে বাজি বানানোর কাজ হতো। মূলত আলু বোমা তৈরি হতো এখানে। পাথরকুচির সঙ্গে মশলা মিশিয়ে যে পুরিয়া তৈরি করা হতো, তা জরি দিয়ে মুড়তেন গ্রামের নারীরা। এ কাজে মাথাপিছু কমপক্ষে দুইশ টাকা দৈনিক রোজগার হতো। গ্রামবাসী জানিয়েছেন, এই এলাকার ঘরে ঘরে নারীরা এই কাজকে কর্মসংস্থান হিসেবে নিয়েছিলেন। তাই বাজি কারখানার বিপদ আছে জেনেও তেমন জোরদার বিরোধিতা দেখা যায়নি।

সঙ্গে নাবালকরাও

এই গ্রামের ইটভাটায় বাজির কারখানা চলতো। তার সঙ্গে ছিল বিভিন্ন রাসায়নিক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বাজি তৈরির কাজে শিশু ও নারীরাই ছিল প্রধান শ্রমিক। অনেক নাবালক শ্রমিক এই কাজে যুক্ত ছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। নামমাত্র দিনমজুরিতে এরা বিপজ্জনক কাজ করতো দিনের পর দিন। অনেকে স্কুল শেষ করে এই কারখানায় আসতো। কেউ বা এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছিল, পরিবারে রোজগার করার মতো কেউ না থাকায়। এছাড়া মুর্শিদাবাদ থেকে বড় সংখ্যায় শ্রমিক এখানে আসতেন বাজির কাজ করার জন্য। মুর্শিদাবাদের জিরাত শেখ এই ব্যবসার অন্যতম অংশীদার।

জীবনের অধিকার

নারী, শিশু ও অন্যান্যদের সামান্য মজুরিতে কাজ করানোর এই প্রবণতা বিভিন্ন শিল্পের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। বিশেষত কর্মসংস্থানের অভাব তীব্র হয়ে ওঠায় শ্রম অত্যন্ত সুলভ হয়ে উঠেছে। লঙ্ঘিত হচ্ছে জীবন ও জীবিকার অধিকার।

সাধারণ মানুষের অধিকার আন্দোলনের কর্মী, এপিডিআর-এর রাজ্য সম্পাদক রঞ্জিত শূর বলেন, ”দুইশ টাকায় একটা মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের রাজনীতিকরা নিরাপত্তার ঘেরাটোপে ঘুরে বেড়ান। জনতার সুরক্ষা নেই। এতে জীবন ও জীবিকার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। রাজ্য বা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ ব্যাপারে হাত গুটিয়ে রয়েছে। তারা শুধু কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের রাজনৈতিক স্বার্থ দেখতে তৎপর।”

কেরামতের ‘কেরামতি’

দত্তপুকুর বিস্ফোরণে ‘নাটের গুরু’ ধরা হচ্ছে কেরামত আলিকে। এর আগে সে এই থানা এলাকাতেই বাজির কারখানা খুলেছিল। সেখানে একবার বিস্ফোরণও হয়। তাতে দুজন মারা যায়। কিন্তু সেবার পুলিশি ঝামেলার পড়তে হয়নি কেরামতকে। তারপর মেচপোল গ্রামে বাজির কারখানা চালু করে সে। বাজি কারখানায় তল্লাশি চালিয়ে একাধিকবার কেরামতকে পাকড়াও করেছে পুলিশ। যদিও পরে সে ছাড়া পেয়ে যায়।

কেরামতের পাশাপাশি এই বিস্ফোরণের নেপথ্যে আরো বড় এক ব্যবসায়ী নাম উঠে আসছে। তার নাম আব্দুল মহিত। তিনি কেরামতের বাজির ব্যবসায় টাকা ঢেলেছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।

ভিন্নমত দুই স্ত্রী-র

বিস্ফোরণে নিহত কেরামতের দুই স্ত্রীর মুখ থেকে ভিন্ন ধরনের বয়ান উঠে আসছে। বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে কেরামতের সঙ্গে তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সন্তান রবিউল আলিও মারা গিয়েছে। প্রথম পক্ষের স্ত্রীর দাবি, “আগে মাটি কাটার কাজ করতো তার স্বামী। পরে বাজি ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সে তার বড় ছেলেকেও এই কাজে যুক্ত করে।”

যদিও কেরামতের দ্বিতীয় স্ত্রীর বক্তব্য ভিন্ন। তিনি বলেছেন, “বাজি কারখানা সঙ্গে কেরামতের কোনো যোগ ছিল না। সে পুকুরে মাছ চাষ করতো।” তা হলে বিস্ফোরণের সময় ঘটনাস্থলে কী করছিল কেরামত? দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী বলেছেন, “রবিউলকে টাকা দিতে সেখানে যায় আমার স্বামী। তখন বিস্ফোরণে দুজনেই মারা গিয়েছে।”

জোরালো বিস্ফোরক?

তবে শুধু আলু বোমা নয়, নীলগঞ্জে বেশি তীব্রতার বোমাও তৈরি হতো বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এনআইএ এবং ফরেনসিক ল্যাবরেটরির প্রতিনিধিরা আলাদা আলাদা ভাবে এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এনআইএ-র তদন্তকারীরা কথা বলেছেন গ্রামবাসীর সঙ্গে। সূত্রের খবর, কম তীব্রতার বিস্ফোরক মজুত ছিল এখানকার বাজি কারখানায়। কিন্তু বিভিন্ন রাসায়নিকের উপস্থিতি ও অস্থায়ী ‘গবেষণাগার’ খুঁজে পাওয়ায় সন্দেহ বেড়েছে। এখানে কি উচ্চ তীব্রতার বিস্ফোরকও তৈরি হতো? ফরেনসিক রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু নিশ্চিত করে বলছেন না তদন্তকারীরা।

ডয়চে ভেলে