‘ভাসমান ভোটারদের প্রভাবিত করে গণমাধ্যম’
- আপডেট সময় : ১১:৩১:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ১৬৮৪ বার পড়া হয়েছে
স্বাধীনতার পর থেকে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে কেমন প্রভাব রেখেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যম? ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সহিদ উল্যাহ৷
সাংবাদিকতার এই শিক্ষক মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনকালীন গণমাধ্যমগুলো কার্যক্রম ভোটে প্রভাব ফেলে৷ ভাসমান ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন প্রভাবক হিসেবে কাজ করে৷ তবে এখন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিভক্ত হয়ে গণমাধ্যমগুলো নিজেদের পক্ষের দলের হয়ে অন্ধভক্তের মতো কার্যক্রম চালাচ্ছে৷
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ছিল ১০টি৷ তখন বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতার সম্প্রচারে ছিল৷ দেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে এসব গণমাধ্যমের প্রভাব কতটা ছিল?
অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদ উল্যাহ: ১৯৭৩ সালে দেশে প্রথম নির্বাচন হয়৷ তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল৷ ওই নির্বাচনে গণমাধ্যমগুলো ঘোরের মধ্যে ছিল, কারণ হচ্ছে কেবলমাত্র বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে৷ তখন বাংলাদেশে থেকে যারা সাংবাদিকতা করতেন, দু’একটি সংবাদপত্র ছাড়া বেশিরভাগই সাংবাদিকই বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করেছেন৷ স্বাধীন দেশ হিসেবে সরকারের নির্বাচনকে সমস্ত পত্রিকা পূর্ণ সমর্থন দিয়ে গেছে৷ আমার ধারণা একটি-দুটি পত্রিকা কিছুটা সমালোচনা করেছে৷ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাংবাদিকেরা বঙ্গবন্ধুর পেছনে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন এবং তারা আওয়ামী লীগের পেছনে দাঁড়িয়ে ওই সরকারকে সমর্থন করেছেন৷ ওই নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ কতটুকু ছিল সেটি প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি বিষয় আছে৷ কিন্তু গণমাধ্যমগুলো ওই সরকারকে সমর্থন দিয়েছে এবং নির্বাচনকে সমর্থন দিয়ে গেছে৷
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই গণমাধ্যমগুলো নির্বাচনে প্রভাব রেখে আসছে কি?
এটি সব সময় হয়৷ যেকোনো সময় জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচনের পরে- এই তিনটি ধাপে সংবাদপত্রগুলো ভূমিকা রাখে৷ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দলের প্রস্তুতি, ভোটারদের অবস্থা এবং ভোটার তালিকা নিয়ে রিপোর্ট করে৷ কোন আসনে কি পরিস্থিতি সেসব নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির পাশাপাশি সম্পাদকীয় লিখে থাকে৷ ভোটের দিনের পরিস্থিতির ওপর প্রতিবেদন হয়, ভোটের পরে বিশ্লেষণ করে৷
নির্বাচনকালীন গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন ভোটারদের মধ্যে প্রভাব ফেলে কি?
অবশ্যই প্রভাব ফেলে৷ গবেষণায়ও দেখা যায় জনগণের কাছে বিশাল প্রভাব বিস্তার করে৷ কারণ মানুষ ভালো সরকার চায়, স্থিতিশীল ও জনবান্ধব সরকার সবসময়ই চায়৷ সেজন্য আমার ধারণা গণমাধ্যম সবসময় জনগণের কাছে একটা প্রভাব বিস্তার করে ভোটে কোন দিকে তারা যাবে এবং কোন দিকে যাওয়া উচিত- এ ধরনের একটা প্রভাব সবসময় থাকে৷ দলীয় সমর্থকদের বাইরেও কিছু লোক থাকেন যারা মার্কা দেখে ভোট দেন না৷ এদের সংখ্যা খুবই কম হলেও ভাসমান ভোটাররা যেদিকে ভোট দেয় তারাই জিতে যায়৷ যারা দলের অন্ধভক্ত নয় তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলো সাংঘাতিকভাবে ভূমিকা রাখে৷
১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইন জারি করে সংবাদপত্রের নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়৷ ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন চারটি পত্রিকা রেখে অন্যগুলো বন্ধ করে দেয় সরকার৷ এই বিষয়টি ওই সময়কার নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলে?
সংবাদপত্রগুলো বন্ধ করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অবদান ছিল৷ বঙ্গবন্ধু যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ নিতেন৷ তখন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন৷ তারা দেখলেন যে বাংলাদেশের একটি গঠনমূলক জায়গায় যাওয়া দরকার, বাংলাদেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করা দরকার৷ সেখানে সরকারের সমালোচনা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার একটি প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল৷ ওই সময় জাসদ, গণবাহিনীসহ বিভিন্ন দল ছিল যাদের বঙ্গবন্ধুর সরকারের প্রতি ঈর্ষা ছিল, নেতিবাচক ধারণা ছিল৷ সেই ধারণা থেকেই অনেক সময় কিছু সংবাদপত্র প্রপাগান্ডাধর্মী রিপোর্ট করছিল৷
সরকারের সঙ্গে সাংবাদিকতার একটি সাংঘর্ষিক সম্পর্ক থাকে৷ অর্থাৎ সরকারের খুঁতগুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য গণমাধ্যমের জন্ম, উন্নয়নশীল বিশ্বে ওয়াচডগ ছিল৷ বাংলাদেশে সাংবাদিকতার জায়গায় ওয়াচডগের বদলে ওয়াচটাওয়ার হওয়া দরকার৷ সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে হবে৷ মানুষকে সমস্ত কাজে সম্পৃক্ত করা অর্থাৎ মানুষ যেন জনবিচ্ছিন্ন না হয় সেজন্য সংবাদপত্রের ভূমিকা রাখা দরকার ছিল৷
১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সামরিক শাসনামলে সরকারের সমালোচনা করায় অর্ধশতাধিক দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ সামরিক শাসকের সময় গণমাধ্যমগুলোর অবস্থান কেমন ছিল?
পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পরে অনেকগুলো সংকটের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ গেছে৷ জিয়াউর রহমান ও এরশাদের আমলের পুরো সময়টাই অবরুদ্ধ সাংবাদিকতার যুগ ছিল৷ সেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা একবারেই ছিল না৷ ১৯৮৬ সালে নির্বাচনের সময় আমরা নতুন শব্দ পাই ‘মিডিয়া ক্রু’ অর্থাৎ মিডিয়াকে জিম্মি করে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিয়ে এক ধরনের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছিল৷ ওই সময় প্রেস অ্যাডভাইস বলে একটি টার্ম তৈরি হয়৷ কোন সাংবাদ কীভাবে, কোন পৃষ্ঠায় ছাপাতে হবে তা বলে দেওয়া হতো, কোন সংবাদ ছাপানো যাবে না তাও বলে দেওয়া হত৷ সাংঘাতিকভাবে সেন্সরশিপ তখন ছিল৷
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ অন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমগুলোর কার্যক্রমে কতটা তফাত দেখা যায়?
প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে প্রথম তত্ত্ববধায়ক সরকার অনেকটা গণমাধ্যমবান্ধব ছিল৷ তিনি ক্ষমতায় আসার পর বিশেষ ক্ষমতা আইনের কয়েকটি ধারা পাল্টে দেন, বাংলাদেশে সংবাদপত্র প্রকাশের একটি জোয়ার তৈরি হয়৷ অবরুদ্ধ সাংবাদিকতা থেকে বেরিয়ে এসে মুক্ত, স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চা শুরু হয়৷ সেক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলো ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দেয়৷ সেসময় বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারও অনেক বেশি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছিল৷
সেনা সমর্থিত তত্ত্ববধায়ক সরকার বাংলাদেশে এক ধরনের বিস্ময়কর বিষয় ছিল৷ ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত লক্ষ্য করলে দেখা যায় বাংলাদেশের গণমাধ্যম বা সাংবাদিকতা কোনো সামরিক আইন, সামরিক শাসন বা অগণতান্ত্রিক শাসনকে সমর্থন দেয়নি৷ ২০০৭ সালেই প্রথম সেনা সমর্থিত সরকারকে গণমাধ্যমগুলো একেবারে নিঃস্বার্থভাবে সমর্থন করেছে৷ ওই সময় বাংলাদেশর রাজনৈতিক সংকট এতটাই জটিল ছিল ওখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ওই সরকারকে সমর্থন করা ছাড়া গণমাধ্যমের কোনো বিকল্প হয়ত ছিল না৷ এ কারণে তারা খুব বেশি ওই সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল৷ নির্বাচনে সরকারের সমালোচনা না করলেও নির্বাচনের নানা বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমগুলো রিপোর্ট করেছিল৷ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কীভাবে হতে পারে সে বিষয়ে গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা ছিল৷
দলীয় সরকারের আমলে নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমগুলো ঘটনার আলোকে প্রতিবেদন তৈরি করে৷ আমার কাছে মনে হয়েছে বিশ্লেষণমূলক সাংবাদিকতা হয়ে উঠেনি৷ সরকারের পক্ষ থেকে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেয়ে মিডিয়াগুলো অনেকটা উপযাচক হয়ে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, সেখানে সেল্ফসেন্সরশিপ অবস্থান থেকে সরকারের বিরোধী জায়গায় না গিয়ে কোনোভাবে টিকে থাকার বিষয় এখানে আছে৷ কারণ সরকারের কাছে তারা বাধা; লাইসেন্সের বিষয় আছে, অনুমোদনের বিষয় আছে- এগুলো তারা কোনোভাবে হারাতে চায় না৷ কারণ এটিকে তারা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিন্তা করে৷ আগে যেমন জনগণের কল্যাণের পক্ষে, উত্তরাধিকারের ওপরে কাজ করতেন, সেই জায়গা থেকে সরে এসে এখানে ব্যবসায়িক স্বার্থ কাজ করছে৷ এরসঙ্গে সরকারে সঙ্গে দেনদরবারের বিষয়টি চলে আসছে, সেটি সম্পাদকের পক্ষ থেকে হোক, মালিকের পক্ষ থেকে হোক অথবা সাংবাদিকতা করার ক্ষেত্রে হোক দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা এখন সরকারের সঙ্গে কোনোমতে টিকে থেকে কাজ করার নতুন ধরনের সাংবাদিকতা, যেটাকে আমরা বলতে চাই অনেকটা তাবেদারি সাংবাকিতার চর্চা শুরু হয়েছে৷
দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের সময় ভাসমান ভোটারদের ওপর গণমাধ্যম প্রভাব রাখতে পারছে কি?
এটি নিয়ে খুব বেশি গবেষণা নেই৷ তবে গাজীপুর বা নারায়ণগঞ্জের মেয়র নির্বাচনের দিকে তাকালে দেখা যায় সেখানে দলের মনোনয়ন পেয়েও তারা জয়ী হতে পারেনি৷ স্থানীয় রাজনীতির একটি প্রভাব অবশ্যই আছে৷ কিন্তু গণমাধ্যমে প্রভাব সাংঘাতিকভাবে ছিল৷ গণমাধ্যমগুলো স্থানীয়দের অনুভূতিগুলোকে তুলে আনার চেষ্টা করেছে৷ এগুলো সাধারণ ভোটারদের কাছে অবশ্যই প্রভাব বিস্তার করেছে৷ জাতীয় নির্বাচনে গণমাধ্যমগুলো যদি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারে প্রভাব ফেলতে পারবে৷
দেশে ৩২২৭টি পত্রিকার সরকারি নিবন্ধন রয়েছে৷ এরমধ্যে ৭০৬টি মিডিয়া তালিকাভুক্ত৷ ৩৬টি বেসরকারি টিভি সম্প্রচারে আছে৷ আগামী জাতীয় নির্বাচনে এসব গণমাধ্যম কি ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে?
আমার কাছে এক ধররে উন্মাদনা মনে হয়৷ গ্রামে-গঞ্জে সংবাদপত্র কতজন পড়েন? সব জায়গায় টিভি পৌঁছে গেছে, টিভির একটি প্রভাব আছে৷ কিন্তু ৩৬টি চ্যানেলের মধ্যে মানুষ কতটি গ্রহণ করেছে? এতগুলো সংবাদপত্রের মধ্যে কয়টি মানুষ গ্রহণ করেছে? প্রধান কয়েকটি সংবাদপত্রের প্রভাব রয়েছে৷ অনলাইন পত্রিকা আছে, সেগুলোর আসলে খুব প্রভাব আমার মনে হয় নেই৷ তরুণ প্রজন্মের বিশাল অংশ ভোটার, তারা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে৷ নগরকেন্দ্রিক ৮/১০টি সংবাদপত্র প্রভাব বিস্তার করতে পারবে৷ নগরের প্রভাব গ্রামে-গঞ্জে পড়ে৷ গণমাধ্যমের সব তথ্য মানুষ বিশ্বাস করে না৷ ফেসবুকের বিশাল প্রভাব রয়েছে৷ সংবাদপত্র প্রকাশের সংখ্যার সঙ্গে প্রভাবের খুব বেশি জায়গা নেই৷ সংবাদপত্রের দলীয়করণ ও বাণিজ্যিকিকরণ মিলিয়ে আস্থাহীনতার জায়গা তৈরি হয়েছে৷
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্রস প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক বৈশ্বিক গণমাধ্যম সূচকে এ বছর ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৩তম৷ এই সূচকে গত ১৪ বছরে ৪২ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ৷ এটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
দায়িত্বশীল ও স্বাধীন সাংবাদিকতার অবনমন হয়েছে৷ আগের মতো নিরপেক্ষভাবে লেখার জায়গাটি দুর্বল হয়েছে৷ দায়িত্বশীল সাংবাদিকতায়ও আমরা অনেক পিছিয়ে আছি৷ সাংবাদিকরা দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারছেন না৷ রাজনৈতিক উত্থান-পতনের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংবাকিতারও উত্থান-পতন হয়েছে৷ ফলে আস্থাহীনতার জায়গা তৈরি হওয়ায় সাংবিাদিকতাকে আমরা গ্রহণযোগ্য জায়গায় নিয়ে যেতে পারছি না৷
স্বচ্ছতার সঙ্গে সাংবাদিকতা করলে সরকারের নতুন নতুন আইন–কানুন তাতে কতটুকু বাধা হয়ে দাঁড়ায়?
সততা ও সত্য সবসময়ই জয়ী হয়৷ যদি সবাই সৎ সাংবাদিকতা করে আইন কোনো বাধা নয়৷ সব দেশেই দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করার জন্য আইন করা হয়৷ কিন্তু আইন কারা, কীভাবে প্রয়োগ করছে সেটি দেখার বিষয়৷ দায়িত্বশীল আচরণ করার পরেও আইনের দোহাই দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করলে সেটি অবশ্যই আশঙ্কার ও ভয়ের৷ এখানে আইনের অপপ্রয়োগ বেশি হয়৷ সবাই একত্রিত হয়ে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার জায়গা থেকে কাজ করলে আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ হবে৷ ১৯৯০ সালে সব সংবাদপত্র কয়েক দিন বন্ধ রাখা হয়৷ এটি এরশাদ সরকারের প্রতি বড় ধরনের চপেটাঘাত ছিল৷ বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় নজিরবিহীন ঘটনা ছিল এটি৷ পরে সরকার বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে৷ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন দুই ভাগে বিভক্ত৷ একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে যে রকম বিষেদগার করেন, কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, সরকার সমর্থিত পত্রিকার মালিক সরকারের স্তুতি করেন আর যারা বিরোধী শিবিরে রয়েছেন তারা সরকারের সমালোচনা করতে থাকেন এবং তা কোনো গঠনমূলক সমালোচনা নয়, যারা সরকারের জায়গায় থাকেন তারা অন্ধভাবে সরকারকে সমর্থন করেন, এসবের কোনোটিই দায়িত্বশীল আচরণ নয়৷ এ কারণেই হয়ত সংকট তৈরি হচ্ছে৷ সরকার আইনের অপপ্রয়োগ না করলে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার জায়গাটি আস্তে আস্তে উঠে আসবে৷ এজন্য সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর ঐক্য লাগবে৷
ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ