ভোট প্রত্যাখ্যানের কারণ
- আপডেট সময় : ১১:৪৫:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩
- / ১৮৩৪ বার পড়া হয়েছে
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে শতকরা সাড়ে ১১ শতাংশ। উপনির্বাচন হলেও এত কম ভোট পড়ায় এটাকে ”একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান” বলে মনে কছেন বিশ্লেষকেরা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যদি শুধু শাসক দল আওয়ামী লীগের ভোটাররাও ভোট দিতেন তাহলে ভোটের হার এরচেয়ে কমপক্ষে তিন গুণ বেশি হওয়ার কথা। তাই এটা নিশ্চিত যে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও ভোট দিতে যাননি।
ঢাকা-১৭ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন। মোট বৈধ ভোট পড়েছে ৩৭ হাজার সাতটি। ভোটের শতকরা হার ১১.৫১ শতাংশ। আটজন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২৮ হাজার ৮১৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম একতারা প্রতীকে পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৬০৯ ভোট। অন্য ছয়জনের কেউই দেড় হাজারের বেশি ভোট পাননি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন প্রধানত তিনটি কারণে ভোটের এই করুণ অবস্থা। ১. মাত্র চার-পাঁচ মাসের জন্য এই নির্বাচন ২. বিএনপি এবং সমমনাদের ভোট বর্জন ৩. আওয়ামী লীগের প্রার্থী তৃণমূলের কোনো জনপ্রিয় নেতা নন।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের ( জানিপপ) চেয়ারম্যন অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, “এই নির্বাচনে অনেক কম ভোট পড়েছে। তবে আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তাতে কিছু জাল ভোট পড়েছে। সেটা না হলে ভোটের হার আরো কম হতো।”
তার কথা, “এই নির্বাচনে ভোটারদের অনাগ্রহের একটি কারণ হলো মাত্র চার-পাঁচ মাসের জন্য এমপি নির্বাচন। আর বিএনপি ও তাদের সমমনারা এই ভোট বর্জন করেছে। ফলে তাদের ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাননি। আরেকটি বড় কারণ হলো আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাঠের কোনো পোড় খাওয়া নেতা নন। তিনি মূলত আওয়ামী লীগের থিংকট্যাংক। মাত্র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছেন। মাঠের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার কোনো কোনো যোগাযোগ নাই। ফলে আওয়ামী লীগেরও অধিকাংশ ভোটার ভোট কেন্দ্রে যাননি।”
তিনি বলেন, “খেয়াল করবেন তিনি কয়েকবার বলেছেন ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গেলেও নৌকা জিতবে, না গেলেও জিতবে। ফলে ভোট দেয়ার আর আগ্রহ থাকার কথা না ভোটারদের। তার সঙ্গে যারা ঘুরেছেন তাদের বড় একটি অংশ ওই এলাকার না অথবা ভোটার না।”
আর সুশাসনের জন্য জন্য নগারিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মনে করেন, “এই সামান্য ভোট প্রমাণ করে মানুষ একতরফা ভোট প্রত্যাখ্যান করেছে। বিরোধী দল নির্বাচনে নেই এটা নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা। তারা আস্থা অর্জন করতে পারেনি।”
তিনি বলেন,”জাতীয় নির্বাচনে যদি বিরোধী দল না যায় তাহলে সেই নির্বাচনও নির্বাচন হবে না। যেখানে বিকল্প কোনো প্রার্থী থাকে না, পছন্দের কোনো সুযোগ থাকেনা সেটাকে নির্বাচন বলা যায় না।”
নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন,”বিএনপি আগামী নির্বাচনে না গেলে সেই নির্বাচনও একরতরফা নির্বাচন হবে। ২০১৪ সালের মতো ভোট ছাড়াই অনেক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন। এখানে সুবিধা হলো যদি নির্বাচনে একটি ভোটও পড়ে সেই ভোট যে প্রার্থী পাবেন তিনি নির্বাচিত হবেন। কিন্তু এটা পরিবর্তন হওয়া দরকার। পৃথিবীর অনেক দেশে আছে ৫০ ভাগ ভোট না পড়লে আবার নির্বাচন হবে। আমাদের দেশেও এমন কোনো আইন করা দরকার। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার নিয়ম থাকা উচিত না। তাহলে এই একতরফা নির্বাচনের প্রবণতা বন্ধ হবে।”
সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, “একতরফা নির্বাচন বা সব দল নির্বাচনে না গেলেও কখনো কনো ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যান তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে। ১৯৮৬ সালে আমি যখন মনিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলাম তখন একজন মানসিক ভারসাম্যহীন প্রার্থীকে ভোট দিয়ে এমপি বানিয়েছিলেন ভোটাররা। হিরো আলম যে ভোট পান তা মানুষের সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ।”
তার কথা,”চার-পাঁচ মাসের জন্য ভোট, বিএনপি নির্বাচনে নেই সবই বুঝলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগের ভোট কোথায় গেল। তারাও তো ভোট দেয়নি। এটা প্রমাণ করে ভোটের প্রতি ভোটারদের আস্থাহীনতা বাড়ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন একতরফা হলে এই আস্থাহীনতা আরো বড়ভাবে প্রকাশ পাবে।”
নিজে সোমবার দুপুরের পর মহাখালী ডিওএইচএস-এর একটি ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অব.) এম সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, “দুপুরের পর গিয়ে দেখি ছয়-সাত পার্সেন্ট ভোট পড়েছে। ভোটের এই করুণ পরিণতি আমাকে বিস্মিত করেছে। ভোটের প্রতি মানুষ আস্থা প্রায় হারিয়ে ফেলেছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা নেই।”
ডয়চে ভেলে