সব সঙ্কা উড়িয়ে দিলেন মেসি
- আপডেট সময় : ০৭:৪৫:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২২
- / ১৬৫৬ বার পড়া হয়েছে
রহস্য ঘেরা জীবন মানুষের। পূর্ণতা হাতছানি দিলেও কখনো কখনো অপূর্ণতা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। চাওয়ার থাকে অনেক কিছু। কিন্তু সব স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয় না। তাই মানুষের জীবনের রহস্য খোঁজা যেন আরেক আরেক রহস্য।
লিওনেল মেসিও তো ভিনগ্রহের কেউ নন। তার জীবনটাও এমনই রহস্যে মোড়া।
নিরন্তর অভাবের শিশু বয়সটা পেরিয়ে এসে কতো কিছুই না পেলেন! খ্যাতি, অর্থ, সাফল্য, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুন্দর-সাজানো উপচে উঠা সুখের সংসার। কিন্তু তারপরও যেন চাঁদের কলঙ্কের মতো লেগে আছে একটি কালো দাগ! একটা অপূর্ণতা, একটা দীর্ঘশ্বাস তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাকে। অনেক কিছুই তো নামের পাশে জমা হলো। কিন্তু ওই যে বিশ্বকাপ, সেটি এখনোও অধরাই রয়ে গেল।
২০১৪ সালে সামান্য দূরত্বে থেকে অসহায়ের মতো মেসি দেখেছেন, সোনার ট্রফি চলে যাচ্ছে, আরেকজনের হাতে। জার্মানির বিপক্ষে সেই ফাইনালে হারের পর আরেকটা বিশ্বকাপেও স্বপ্ন ভঙ্গ।
২০১৪ সালের বিশ্বকাপটা ছিল মনের মতো। বল পায়ে কারিকুরিতে মুগ্ধ তো করেছিলেনই সঙ্গে আর্জেন্টিনা দলটাকেও টেনে তুলেছিলেন একা!
সেই বছর ব্রাজিল বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলার হয়েও কান্না ঝরেছে মেসির হৃদয়ে। কিন্তু তখনো তো বয়স ২৭। স্বপ্ন অফুরন্ত। ভেবেছিলেন রাশিয়াতে নিশ্চয়ই স্বপ্নপূরণ হবেই হবে। গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচের একটিতে হার, একটি ড্র দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল মেসিকে। তারপর মেসিই ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলেন সব অনিশ্চয়তা।
নাইজেরিয়ার বিপক্ষে দারুণ খেলে দলকে নিয়ে গেলেন দ্বিতীয় রাউন্ডে। অসাধারণ সব পাস, হঠাৎ গতি, আর সুক্ষ চিন্তার জাল ছড়িয়ে চেনালেন আরও একবার। প্রমাণ দিলেন তিনি শুধু ক্লাব ফুটবলেরই কিংবদন্তি নন, দেশের হয়েও দুর্দান্ত!
নকআউটে সামনে ছিল শক্তিশালী ফ্রান্স। ব্যস, এখানে সর্বনাশ। রক্ষণভাগের ব্যর্থতায় তিন গোল দিয়ে হজম করলেন চারটি! স্বপ্ন ফের ভাঙল মেসির।
কী আশ্চর্য সেই ফ্রান্সের মুখোমুখি হতে হবেবিশ্বমঞ্চে তার শেষ ফাইনালে।
মেসি মাঝখানে কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছেন। এবার বিশ্বকাপ জিতলেই মিলবে জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য। বয়স হয়ে গেছে ৩৫। তবুও নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে উজাড় করে দিচ্ছেন সামনে থেকে। আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ থেকে সেমি-ফাইনাল- অধিনায়কই প্রাণ ভোমরা। ছয় ম্যাচের সবগুলিতে পুরোটা খেলেছেন তিনি। নিজে গোল করেছেন ৫টি, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ৩টি। মানে গোল্ডেন বুটের সঙ্গে হাতছানি দিচ্ছে গোল্ডেন বলও।
এতোসব অর্জন আড়ালেই চলে যাবে সেই ৬ কেজি.১৭৫ গ্রাম ওজনের সোনার ট্রফিটা না পেলে। এই জীবনে কতো কিছুই দেখলেন আর্জেন্টিনার এক অবহেলিত অঞ্চল রোজারিওতে বেড়ে উঠা এই কিশোর। হরমোনজনিত রোগ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে ১’১ বছর বয়সে যে মেসি ফুটবল স্কাউটদের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছিলেন, তার জীবনে এতো চমক অপেক্ষা করছে কে জানতো? কে জানতো ন্যাপকিন পেপারে লেখা সেই চুক্তিবদ্ধ ফুটবলারটিই উঠে বনে যাবেন এই গ্রহের সেরা ফুটবলার। যার নামে স্লোগান উঠবে লাতিন-ইউরোপ ছাড়িয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট কোন একটা প্রান্তিক গ্রামেও!
ক্যারিয়ারে কী না পেয়েছেন। ১০টি লা লিগা, চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, তিনটি ফিফা ক্লাব কাপ ট্রফি! আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে রানার্স আপ, কোপা আমেরিকার শিরোপা। সাতবার ফিফার বর্ষসেরা। অর্জন আর রেকর্ডের এমন তালিকা করতে গেলে দিন ফুরিয়ে যাবে, তালিকার শেষটা দেখা যাবে না।
তারপরও তো আক্ষেপের শেষ নেই। ডিয়েগো ম্যারাডোনা, পেলে এমন কী জিনেদিন জিদানের পাশেও লিওনেল মেসির নামটা অনেকে লিখতে চাইছে না। ইতিহাস বড় নিষ্ঠুর। বিশ্বকাপ না জেতা কাউকে কখনোই যে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় নিয়ে আসতে কার্পণ্য হয়!
অনেক হয়েছে সেই অসহায়, বিধ্বস্ত চে.হারার ছবি। এবার ওই সোনার কাপটাই চাই তার। বিশ্বকাপ ট্রফি ছাড়া মেসির জীবনের গল্পটা অসম্পূর্ণই থেকে যাবে!
আজ রাতেই ফয়সালা, অমরত্বের সন্ধানে জাদুকর লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।