সাগরের লঘুচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা
- আপডেট সময় : ০৫:৫৪:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ মে ২০২৩
- / ১৬৫০ বার পড়া হয়েছে
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে থাকা সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আজই নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে৷ লঘুচাপটি আছে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি দক্ষিণ আন্দামান সাগরে৷এটি আরও ঘণীভূত হতে পারে৷
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুননেছা সমকালকে বলেন, ‘দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগরে দুদিন আগে একটি ঘূর্ণিচক্রের (সাইক্লোনিক সার্কুলেশন) সৃষ্টি হয়, যা লঘুচাপে পরিণত হয়েছে৷ লঘুচাপ তৈরির পর সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ ধাপ পেরিয়ে তবেই ঘূর্ণিঝড় হবে৷ আজ মঙ্গলবার এটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে৷ এর গতি-প্রকৃতি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে৷’
ভারতীয় আবহাওয়া অফিস তাদের পূর্বাভাসে বলেছে, আজ মঙ্গলবার নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর বুধবার ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেতে পারে ওই ঘূর্ণিবায়ুর চক্র৷ প্রথম দিকে উত্তর উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হলেও ১১ মে ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে বাঁক নিয়ে উত্তর উত্তর পূর্ব দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে৷
এদিকে মঙ্গলবারের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- রাজশাহী, নেত্রকোনা, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা এবং কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ এবং দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে৷ আরও দুদিন এমন তাপপ্রবাহ থাকতে পারে৷ শনিবারের পর থেকে তাপমাত্রা কমতে পেতে পারে এবং বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল বিশ্লেষণ করে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা ভোলা থেকে কক্সবাজার জেলার মধ্যবর্তী স্থান নিয়ে উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা আছে৷ ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের অগ্রভাগ উপকূলে আঘাত শুরু করার সম্ভাব্য সময় ১৪ মে (রোববার) দুপুরের পর থেকে মধ্য রাতের মধ্যে৷ ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাব্য সময় ১৪ মে দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা৷ ঘূর্ণিঝড় মোখার পেছনের অর্ধেক অংশ উপকূলে অতিক্রম করার সম্ভাব্য সময় ১৫ মে ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত৷ উপকূলে আঘাত করার সময় এটি অত্যন্ত তীব্র হতে পারে৷’
এদিকে সাগরে যখন ঝড়ের জন্ম হচ্ছে, দেশের অধিকাংশ এলাকায় বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ৷ এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নামজুল হক বলেন, তিনটি কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে৷ এক হচ্ছে এপ্রিল ও মে মাস দেশের উষ্ণ মাস৷ গত এপ্রিলে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে৷ এ দুই মাসের বৈশিষ্ট্যের কারণেই এখন গরম বেশি৷ গরম হওয়ার দ্বিতীয় কারণ হলো কম বৃষ্টি হওয়া৷ মে মাসের শুরুতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু কিছু বৃষ্টি হলেও গত দুই দিন বৃষ্টি একেবারেই কম হওয়ায় গরম বাড়ছে৷ গরম বেড়ে যাওয়ার তৃতীয় কারণ হিসেবে নাজমুল হক সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কথা বলেন৷ তাঁর মতে, এখন সাগর থেকে হাওয়া আসছে না; বরং ভূপৃষ্ঠের হাওয়া সাগরের দিকে ছুটছে৷ আর এ কারণে গরম বেশি৷
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ খন্দকার হাফিজুর রহমান আজ মঙ্গলবার সকালে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হতে পারে৷ আর আজই এটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে৷’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান ২ মে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘৮ থেকে ৯ মের মধ্যে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে৷ এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে৷ ১২ অথবা ১৩ তারিখে লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা আছে৷’
এদিকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, নেত্রকোনা, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর তীব্র তাপপ্রবাহ এবং দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে৷ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে৷
ডয়চে ভেলে