সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান অস্ত্রের বদলে হাতে তুলে নিয়েছিলেন ক্যামেরা
- আপডেট সময় : ০৫:২২:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২২
- / ১৫৪১ বার পড়া হয়েছে
সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরের পর শখের পেশায় ব্যস্ত ছিলেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। প্রিয় মাতৃভূমির অমিত সম্ভাবনাকে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দিতে অস্ত্রের বদলে হাতে তুলে নিয়েছিলেন ক্যামেরা। খুঁজে খুঁজে রুপসী বাংলার মনমুগ্ধকর দৃশ্য সংগ্রহ করতেন তিনি। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রাণ হারান তরুণ সিনহা।
২০২০ সালের জুলাই মাস। সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান ‘জাস্ট গো’ নামে একটি ডকুমেন্টারি বানাতে কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন স্পট এবং মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশের পাহাড় ও সমুদ্রের প্রাকৃতিক দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করতে এসেছিলেন। এ সময় তার দুই সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং শিপ্রা দেবনাথ সঙ্গে ছিলেন।
এরই অংশ হিসেবে টেকনাফের মুইন্যা পাহাড়ের ভিডিও চিত্র ধারণ শেষে ৩১ জুলাই কক্সবাজার ফিরছিলেন তিনি। রাত সাড়ে ৯টার দিকে শামলাপুর বাজারের কাছে এপিবিএন চেকপোস্টে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকতের গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ সময় আটক করা হয় সিফাতকে। তল্লাশি চালিয়ে হোটেল থেকে আটক করা হয় অন্য সহযোগী শিপ্রাকে। ঘটনাটি নিয়ে সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
পুলিশের দাবি, …. সিনহা মেজর পরিচয় দিয়ে তল্লাশিতে বাধা দেন। একপর্যায়ে পিস্তল বের করলে চেকপোস্টের পুলিশ তাকে গুলি করে। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে পুলিশ বাদি হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি ও রামু থানায় একটি মামলা করে। টেকনাফ থানার দুই মামলায় সিফাত ও রামু থানার মামলায় শিপ্রাকে আসামি করা হয়।
ঘটনার চার দিন পর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদি হয়ে নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতে মামলা করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে দুই ও তিন নম্বর আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশের এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতকে। আদালত মামলাটির তদন্তভার দেয় কক্সবাজার রেবকে।
২০২০ সালের ৬ আগস্ট ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তদন্তের সময় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, এপিবিএন’র তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাত জনকে গ্রেফতার হয়। এরপর মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত ওই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে।
সিনহা নিহতের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে অতিরিক্ত ডিআইজি ও একজন সেনা কর্মকর্তাকে সদস্য করে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়।
চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়া হয়। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০২১ সালের ২৭ জুন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারকাজ শুরু হয়। করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ সময় আদালত বন্ধ থাকার পরও মামলাটি দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হয়। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে চার্জশিটভুক্ত ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। দীর্ঘ শুনানি, সাক্ষীদের জবানবন্দী, জেরা ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য ৩১ জানুয়ারি দিন ঠিক করেন বিচারক।