ধরমশালার মাঠ থেকে দূরে হিমালয়ের গিরি শৃংগের দেখা মেলে। দূর থেকে দেখে মনে হয় অলংঘনীয়, যদিও হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃংগ হয়েছে মানুষের পদানত। এক বাঙ্গালী সার্ভেয়ার রাধানাথ শিকদার অংক কষে বের করেছিলেন, পিক-১৫ই হচ্ছে পৃথিবীর উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ, তার নাম রাখা হয় ব্রিটিশ সার্ভেয়র জেনারেল জর্জ এভারেস্ট এর নামে। নেপথ্যে সেই মাউন্ট এভারেস্টকে রেখেই ধরমশালায় রানের হিমালয় গড়ল ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় ম্যাচেও টস জিতলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আগের ম্যাচের অভিজ্ঞতা থেকেই টস জিতে নিলেন ফিল্ডিং। দুই দলই একাদশে এনেছে একটি করে পরিবর্তন। বাংলাদেশ দলে মাহমুদউল্লাহ’র বদলে শেখ মেহেদি হাসান আর ইংল্যান্ড মঈন আলীকে বসিয়ে খেলিয়েছে রিস টপলিকে। বাংলাদেশ তিন স্পিনার আর তিন স্পিনার, ইংল্যান্ডের চার পেসার।
আহত সিংহ থাবা বসাবে, জানাই ছিল। বিশ্বকাপের শিরোপাজয়ী, সাদা বলে দুটো বৈশ্বিক ট্রফিই যাদের কাছে সেই ইংল্যান্ড হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর পর ধরমশালায় দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চাইবে, সেটা আঁচ করতে জ্যোতিষী হতে হয় না। হয়েছেও তাই। আগে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে মালান আর বেয়ারস্টো সেভাবেই ব্যাট করেছেন, যেভাবে ইংল্যান্ড ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হারের পর থেকে ব্যাট করছে।প্রথম পাওয়ার প্লে-তে ৬১ রান, বিনা উইকেটে। ১৮ ওভার স্থায়ী উদ্বোধনী জুটিতে উঠেছে ১১৫ রান। আগের ম্যাচের মত এবারও ব্রেক থ্রু দিলেন সাকিবই। সোজা বলে টার্ন হবে মনে করে খেলতে গিয়ে বোল্ড বেয়ারস্টো। ওয়ানডাউনে এলেন জো রুট। স্পিনটা ভাল খেলেন, মাঝের ওভারগুলো তিনিই সামাল দিলেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে মালানকে নিয়ে গড়লেন ১৫১ রানের জুটি, স্রেফ ১১৭ বলে। মালানকে বোল্ড করে শেখ মেহেদি সেই জুটিটা যখন ভাংলেন, তখন মালানের কাজ সারা। ১০৭ বলে ১৪০ রানের ইনিংস খেলে গেছেন মালান, ১৬ বাউন্ডারি আর ৫ ছক্কায়।
মালানের বিদায়ে উইকেট পতনের ধারাটা শুরু হয়, রানের গতিও কমে। ১০ বলে ২০ রান করে জস বাটলার বোল্ড শরিফুল ইসলামের বলে। এই বামহাতি পেসার পরপর দুই বলে বিদায় করেছেন রুট (৮২) এবং লিয়াম লিভিংস্টোন (০)কেও। উইকেটে জমতে পারেননি হ্যারি ব্রকও। তিনিও ২০ রান করে মেহেদির শিকার। বলা যায় শেষ ১০ ওভারে বেশ ভালভাবেই ম্যাচে ফেরেন বাংলাদেশের বোলাররা। উইকেট নিয়েছেন নিয়মিত বিরতিতে। তাতে ইংল্যান্ডের সংগ্রহটা বড় থেকে আর বিশাল হয়নি! যদিও টেলএন্ডারদের খুচরো ইনিংসগুলোর যোগফল কম নয়! স্যাম কারান আর আদিল রশিদের ১১ করে রান,ক্রিস ওকসের ১৪ আর মার্ক উডের ৬*; সব মিলিয়ে ৫০ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ৩৬৪ রান।
নতুন বলে শুরু করেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান আর তাসকিন আহমেদ। দুজনের কেউই ছিলেন না ছন্দে। রান দিয়েছেন বেশ। পুরানো বলে সফল হয়েছেন শরিফুল। শেষ করেছেন ১০ ওভারে ৭৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে। ৭১ রানে ৪ উইকেট মেহেদির। সাকিব শুরুতে আর শেষ ওভারে তাসকিন পেয়েছেন ১টি করে উইকেট।
৫০ ওভারে ৩৬৫ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশের। দূর থেকে হয়তো হিমালয়ের মতই দুর্গম। এর আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ৩২১, ২০১৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। জিততে হলে ইংল্যান্ডের রানের হিমালয়টা জয় করতে হবে বাংলাদেশকে। কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। দূরের ঐ শৈলচুড়া তো সেটাই বলে।
ডয়চে ভেলে