মহেশখালীতে বিষমুক্ত শুটকি উৎপাদনে ১০ লাখ বন্ধ্যা মাছি ছেড়েছে পরমাণু শক্তি কমিশন
- আপডেট সময় : ০৪:৫৫:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২২
- / ১৫৯৮ বার পড়া হয়েছে
শুটকি মাছকে জীবানুযুক্ত মাছির উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন একদল গবেষক। কক্সবাজারের মহেশখালী সোনাদিয়া দ্বীপে বিষমুক্ত শুটকি উৎপাদনের লক্ষে প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ বন্ধ্যা মাছি ছেড়েছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। প্রতিষ্ঠানটির খাদ্য ও বিকিরণ জীববিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের বিকিরণ কীট তত্ত্ব ও মাকর তত্ত্ব বিভাগ প্রথমবারেরমতো এই প্রকল্প হাতে নেয়। এতে নতুন করে আশার আলো দেখছেন বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে ভেসে থাকা এই দ্বীপের মানুষ।
বাইরে আসার জন্য ছটফট করা খাঁচায় বন্দি এসব মাছি স্বাভাবিক মাছির চেয়েও ভিন্ন। কারণ এরা বন্ধ্যা। অর্থ্যাৎ তাদের প্রজনন ক্ষমতা নেই।ছেড়ে দেয়ার পর এসব বন্ধ্যা মাছির সাথে মিলন ঘটবে দ্বীপের প্রাকৃতিক মাছির। এতে ডিম দেয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে প্রাকৃতিক মাছিগুলো। ফলে এক সময় বংশবিস্তার রোধ হয়ে নিধন হয়ে যাবে প্রাকৃতিক মাছি।
কথাগুলো শুনতে অনেকটা গল্পের মত হলেও বাস্তবতা এখানে বড় জানান দেয় আশার খবর।
কমিশনের সিনিয়র এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, বিষযুক্ত শুটকি যেন মানবদেহে ক্ষতির কারণ না হয় সেই লক্ষ্যে পরমাণু শক্তি কমিশনের
ল্যাবে উৎপাদিত এসব বন্ধ্যা মাছি ছাড়া হচ্ছে দ্বীপে।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা আরও বলেন, প্রাকৃতিক মাছি শুটকি মাছের মুখে ডিম দেয়ার কারণে মাছগুলোর গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এসব মাছ বাইরের দেশে রপ্তানি করা কঠিন।
সোনাদিয়া দ্বীপ আইসোলেটেট হওয়ায় বন্ধ্যা মাছি ছাড়ার উপযুক্ত জায়গা বলছেন এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
প্রথমদিকে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে গিয়ে শুটকি উৎপাদনকারীদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে পরমানু শক্তি কমিশনের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের। কারণ এমনিতেই তারা মাছির যন্ত্রণায় অস্থির, সেখানে আবার নতুন করে মাছি ছাড়তে দেখে মারমুখি আচরণ করেন অনেকে। কিন্তু এখন বিষমুক্ত শুটকি উৎপাদনে ব্যতিক্রমী এই পদ্ধতিকে স্বাগত জানিয়েছে শুটকি ব্যবসায়ীরা। বলছেন, এখন পর্যটকদের বিষমুক্ত শুটকি বিক্রি করতে পারবেন তারা।
সোনাদিয়াকে এক সময় শুটকি উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র উল্লেখ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, শুটকিতে বিষ ব্যবহারের কারণে মানুষের মাঝে এক ধরণের নেতিবাচক মনোভাব ছিল। এখন সোনাদিয়াকে বিষমুক্ত শুটকির ব্রান্ড হিসেবে তৈরী করার লক্ষ্যে ব্যতিক্রমী এই পদ্ধতি অত্যন্ত উপযোগী বলে মনে করেন এই জনপ্রতিনিধি।
পাশাপাশি ভবিষ্যতে এই পদ্ধতিতে দ্বীপে শুটকি তৈরীর জন্য আলাদা জোন করতে সংসদে প্রস্তাব দেয়ার কথাও জানান এই সংসদ সদস্য।
বন্ধ্যা মাছি প্রয়োগের মাধ্যমে বিষমুক্ত শুটকি উৎপাদন প্রক্রিয়া বাড়ানো গেলে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত শুটকি রপ্তানী করে বৈদেশিক আয় বাড়ানো সম্ভব বলছেন বিশেষজ্ঞরা।