০৪:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

যেভাবে পৃথিবীতে ‘আরামে’ থাকতে পারবে ৮০০ কোটি মানুষ

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ১১:০০:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২
  • / ১৬০২ বার পড়া হয়েছে

বিশ্বের সব মানুষ অ্যামেরিকানদের মতো বিলাসী এবং আধুনিক পণ্যনির্ভর জীবনযাপন করলে অন্তত ৫.১টি বিশ্বের সমান প্রাকৃতিক সম্পদের প্রয়োজন হবে

এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপের কারণে ক্রমশ বাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে বিশ্ব৷ গত ১৫ নভেম্বর বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটি ছাড়িয়েছে৷ জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতাকে মেনে কিভাবে বাসযোগ্য করা যায় এই গ্রহকে?

অনেকে মনে করেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি জনবিস্ফোরণে রূপ নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবও দ্রুত বাড়বে এবং তাতে ৮০০ কোটি মানুষের এই গ্রহ আরো দ্রুত বাসের অযোগ্য হবে৷

তবে আশার কথা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার গত কয়েক দশকে অনেক কমেছে৷ জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সারা হার্টগ মনে করেন, সারা বিশ্বে শিক্ষার প্রসারের ফলে নারীদের মাঝেও সচেতনতা বেড়েছে, পরিবার পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা আগের চেয়ে বেশি উপলব্ধি করছে মানুষ৷ তাই জন্মনিয়ন্ত্রণের নানা ব্যবস্থায় আস্থা এবং জন্মনিয়ন্ত্রণে নানা উপকরণের প্রয়োগ বেড়েছে৷ এসব কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারেও ভাটার টান লক্ষ্য করা গেছে৷ তবে তাতে জনসংখ্যা কমার কথা থাকলেও বাস্তবে কিন্তু বাড়ছে৷এতে চিকিৎসা শাস্ত্রের অগ্রগতি এবং মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন সারা হার্টগ৷ তার মতে, অন্যথায় ১৯৫০ সালের তুলনায় এই ২০২২ সালে সারা বিশ্বের মানুষের গড় আয়ু যে ২৫ বছর বেড়েছে, তা কখনোই সম্ভব হতো না৷

জাতিসংঘের এক হিসেব অনুযায়ী, জনসংখ্যা ও গড় আয়ু বৃদ্ধির এই হার বজায় থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা হবে ৯৭০ কোটি আর ২১০০ নালে গিয়ে সংখ্যাটা বেড়ে হবে ১১০০ কোটি!

৮০০ কোটি মানুষের ক্রমশ বেড়ে চলা চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে প্রকৃতি যেখানে ধুঁকছে, জনসংখ্যা ১১০০ কোটি বা তারও বেশি হলে পরিস্থিতিটা কী দাঁড়াতে পারে?

জাতিসংঘের আরেক প্রতিবেদন বলছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সারা বিশ্বে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ ও প্রাকৃতিক সম্পদহানি বাড়ছে, পরিণামে পরিবেশ দূষণের সার্বিক পরিস্থিতিও দ্রুত ভয়াবহ হচ্ছে৷

তবে সারা হার্টগ মনে করেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি অন্যতম কারণ হলেও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর লাগামহীন চাপ বৃদ্ধির একমাত্র কারণ এটি নয়৷তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় ভাবার ঘোর বিরোধী তিনি৷বরং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং বিলাসী জীবন যাপনের প্রবণতাকে প্রধানত দায়ী হিসেবে উল্লেখ করে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘মানুষের আয় বাড়ছে এবং সে কারণে বাড়ছে নানা ধরনের পণ্য কেনার প্রবণতা৷ জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে এই বিষয়টিই পরিবেশ দূষণে বেশি ভূমিকা রাখছে৷”

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং এশিয়ার এক অংশে বেশি বলে এই দুটি অঞ্চলকে সারা বিশ্বে কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধির জন্য বেশি দায়ী মনে করেন অনেকে৷ তবে সাম্প্রতিক গবেষণা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলছে৷ দেখা গেছে, বিশ্বের সব ধনী দেশে রেফ্রিজারেটর, গাড়ি, টেলিভিশন, এসি ইত্যাদির ব্যবহার অনেক বেশি এবং সে কারণে বস্তুতপক্ষে পরিবেশ দূষণে ওইসব দেশের ‘দায়ও’ অনেক বেশি৷

পরিবেশবিষয়ক বেসরকারি সংস্থা গ্লোবাল ফুটপ্রিন্ট এক সমীক্ষায় জানিয়েছে, বিশ্বের সব মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের মানুষদের মতো জীবনযাপন করলে বিশ্বে বর্তমানে যতটুকু প্রাকৃতিক সম্পদ আছে তা অল্প দিনেই শেষ হয়ে যেতো৷ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বের সব মানুষ অ্যামেরিকানদের মতো বিলাসী এবং আধুনিক পণ্যনির্ভর জীবনযাপন করলে অন্তত ৫.১টি বিশ্বের সমান প্রাকৃতিক সম্পদের প্রয়োজন হবে৷ আর অস্ট্রেলিয়ানদের মতো জীবনে বিশ্বের সব মানুষ অভ্যস্ত হলে প্রয়োজন হবে ৪.৫টি বিশ্বের সম পরিমাণ প্রাকৃতি সম্পদ,  রাশিয়ার নাগরিকদের মতো সবাই হলে ৩.৪টি, জার্মানদের মতো সবাই হলে ৩টি, জাপানি এবং পর্তুগিজদের মতো সবাই হলে ২.৯টি করে এবং ফ্রান্স, স্পেন এবং সুইজারল্যান্ডের নাগরিকদের মতো সবাই হলে ৮০০ কোটি মানুষের জন্য কমপক্ষে ২.৮টি বিশ্বের সমান প্রাকৃতিক সম্পদ লাগতো৷

অথচ আফ্রিকার ২১ কোটিরও বেশি মানুষের দেশ নাইজেরিয়ার আম জনতার মতো বিশ্বের সবার জীবন হলে বছরে বর্তমান বিশ্বের কেবল ৭০% প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহৃত হতো৷ এশিয়া এবং বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতেরও খুব কম মানুষেরই নিজের রেফ্রিজারেটর, নিজের গাড়ি, নিজের টেলিভিশন ও এসি ইত্যাদি আছে৷ তাই বিশ্বের ৮০০ কোটি মানুষ গড়পড়তা ভারতীয়দের মতো জীবনযাপন করলে বছরে বিশ্বের সর্বোচ্চ ৮০% প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করা হতো৷

তাই জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সারা হার্টগের মতো অনেকেই মনে করছেন পরিবেশ দূষণ কাঙ্খিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিলাসী পণ্য ব্যবহারে রাশ টানাও খুব জরুরি৷ ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইন্সটিটিউটের বৈশ্বিক অর্থনীতি বিষয়ক পরিচালক ভ্যানেসা পেরেজ-চিয়েরাও সারা হার্টগের মতানুসারী৷ মিশরে অনুষ্ঠানরত কপ২৭ শীর্ষ সম্মেলনে ডয়চে ভেলকে তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের এখনো (প্রাকৃতিক) সম্পদ আছে৷ কিন্তু সেই সম্পদের প্রকৃত অর্থে যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য রাজনীতিবিদদের অর্থনীতি এবং ভূরাজনীতিকে ঠিক পথে নেয়ায় উদ্যোগী হওয়া জরুরি৷”

ইউনিভার্সিটি অব হেলসিঙ্কির অধ্যাপক এবং জার্মানির সাস্টেইনেবল ইউরোপ রিসার্চ ইন্সটিটিউটের চেয়ারপার্সন সিলভিয়া লোরেক খুব সহজ একটা উপায় বাতলে দিয়েছেন৷তিনি এবং তার সহকর্মী গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছেন বিশ্বকে ৮০০ কোটি মানুষের জন্য আদর্শ বাসভূমি করে তুলতে হলে মাত্র তিনটি বিষয়ে মনযোগী হতে হবে- খাওয়াদাওয়া, বসবাস এবং যাতায়াত৷ লোরেক এবং তার গবেষক দল মনে করেন, প্রাণিজ খাবার বাদ দিয়ে নিরামিষ খেলে, বিমান এবং ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার বাদ দিলে এবং এক ব্যক্তি বা এক পরিবারের জন্য আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থা বর্জন করে যতটা সম্ভব সমবেতভাবে বসবাসের দিকে ঝুঁকলেই প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ অনেকখানি কমবে, পৃথিবীও অনেক বাসযোগ্য হবে৷

ডয়চে ভেলে (ডিডব্লিউ)

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

যেভাবে পৃথিবীতে ‘আরামে’ থাকতে পারবে ৮০০ কোটি মানুষ

আপডেট সময় : ১১:০০:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২

প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপের কারণে ক্রমশ বাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে বিশ্ব৷ গত ১৫ নভেম্বর বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটি ছাড়িয়েছে৷ জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতাকে মেনে কিভাবে বাসযোগ্য করা যায় এই গ্রহকে?

অনেকে মনে করেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি জনবিস্ফোরণে রূপ নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবও দ্রুত বাড়বে এবং তাতে ৮০০ কোটি মানুষের এই গ্রহ আরো দ্রুত বাসের অযোগ্য হবে৷

তবে আশার কথা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার গত কয়েক দশকে অনেক কমেছে৷ জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সারা হার্টগ মনে করেন, সারা বিশ্বে শিক্ষার প্রসারের ফলে নারীদের মাঝেও সচেতনতা বেড়েছে, পরিবার পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা আগের চেয়ে বেশি উপলব্ধি করছে মানুষ৷ তাই জন্মনিয়ন্ত্রণের নানা ব্যবস্থায় আস্থা এবং জন্মনিয়ন্ত্রণে নানা উপকরণের প্রয়োগ বেড়েছে৷ এসব কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারেও ভাটার টান লক্ষ্য করা গেছে৷ তবে তাতে জনসংখ্যা কমার কথা থাকলেও বাস্তবে কিন্তু বাড়ছে৷এতে চিকিৎসা শাস্ত্রের অগ্রগতি এবং মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন সারা হার্টগ৷ তার মতে, অন্যথায় ১৯৫০ সালের তুলনায় এই ২০২২ সালে সারা বিশ্বের মানুষের গড় আয়ু যে ২৫ বছর বেড়েছে, তা কখনোই সম্ভব হতো না৷

জাতিসংঘের এক হিসেব অনুযায়ী, জনসংখ্যা ও গড় আয়ু বৃদ্ধির এই হার বজায় থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা হবে ৯৭০ কোটি আর ২১০০ নালে গিয়ে সংখ্যাটা বেড়ে হবে ১১০০ কোটি!

৮০০ কোটি মানুষের ক্রমশ বেড়ে চলা চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে প্রকৃতি যেখানে ধুঁকছে, জনসংখ্যা ১১০০ কোটি বা তারও বেশি হলে পরিস্থিতিটা কী দাঁড়াতে পারে?

জাতিসংঘের আরেক প্রতিবেদন বলছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সারা বিশ্বে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ ও প্রাকৃতিক সম্পদহানি বাড়ছে, পরিণামে পরিবেশ দূষণের সার্বিক পরিস্থিতিও দ্রুত ভয়াবহ হচ্ছে৷

তবে সারা হার্টগ মনে করেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি অন্যতম কারণ হলেও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর লাগামহীন চাপ বৃদ্ধির একমাত্র কারণ এটি নয়৷তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় ভাবার ঘোর বিরোধী তিনি৷বরং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং বিলাসী জীবন যাপনের প্রবণতাকে প্রধানত দায়ী হিসেবে উল্লেখ করে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘মানুষের আয় বাড়ছে এবং সে কারণে বাড়ছে নানা ধরনের পণ্য কেনার প্রবণতা৷ জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে এই বিষয়টিই পরিবেশ দূষণে বেশি ভূমিকা রাখছে৷”

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং এশিয়ার এক অংশে বেশি বলে এই দুটি অঞ্চলকে সারা বিশ্বে কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধির জন্য বেশি দায়ী মনে করেন অনেকে৷ তবে সাম্প্রতিক গবেষণা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলছে৷ দেখা গেছে, বিশ্বের সব ধনী দেশে রেফ্রিজারেটর, গাড়ি, টেলিভিশন, এসি ইত্যাদির ব্যবহার অনেক বেশি এবং সে কারণে বস্তুতপক্ষে পরিবেশ দূষণে ওইসব দেশের ‘দায়ও’ অনেক বেশি৷

পরিবেশবিষয়ক বেসরকারি সংস্থা গ্লোবাল ফুটপ্রিন্ট এক সমীক্ষায় জানিয়েছে, বিশ্বের সব মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের মানুষদের মতো জীবনযাপন করলে বিশ্বে বর্তমানে যতটুকু প্রাকৃতিক সম্পদ আছে তা অল্প দিনেই শেষ হয়ে যেতো৷ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বের সব মানুষ অ্যামেরিকানদের মতো বিলাসী এবং আধুনিক পণ্যনির্ভর জীবনযাপন করলে অন্তত ৫.১টি বিশ্বের সমান প্রাকৃতিক সম্পদের প্রয়োজন হবে৷ আর অস্ট্রেলিয়ানদের মতো জীবনে বিশ্বের সব মানুষ অভ্যস্ত হলে প্রয়োজন হবে ৪.৫টি বিশ্বের সম পরিমাণ প্রাকৃতি সম্পদ,  রাশিয়ার নাগরিকদের মতো সবাই হলে ৩.৪টি, জার্মানদের মতো সবাই হলে ৩টি, জাপানি এবং পর্তুগিজদের মতো সবাই হলে ২.৯টি করে এবং ফ্রান্স, স্পেন এবং সুইজারল্যান্ডের নাগরিকদের মতো সবাই হলে ৮০০ কোটি মানুষের জন্য কমপক্ষে ২.৮টি বিশ্বের সমান প্রাকৃতিক সম্পদ লাগতো৷

অথচ আফ্রিকার ২১ কোটিরও বেশি মানুষের দেশ নাইজেরিয়ার আম জনতার মতো বিশ্বের সবার জীবন হলে বছরে বর্তমান বিশ্বের কেবল ৭০% প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহৃত হতো৷ এশিয়া এবং বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতেরও খুব কম মানুষেরই নিজের রেফ্রিজারেটর, নিজের গাড়ি, নিজের টেলিভিশন ও এসি ইত্যাদি আছে৷ তাই বিশ্বের ৮০০ কোটি মানুষ গড়পড়তা ভারতীয়দের মতো জীবনযাপন করলে বছরে বিশ্বের সর্বোচ্চ ৮০% প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করা হতো৷

তাই জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সারা হার্টগের মতো অনেকেই মনে করছেন পরিবেশ দূষণ কাঙ্খিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিলাসী পণ্য ব্যবহারে রাশ টানাও খুব জরুরি৷ ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইন্সটিটিউটের বৈশ্বিক অর্থনীতি বিষয়ক পরিচালক ভ্যানেসা পেরেজ-চিয়েরাও সারা হার্টগের মতানুসারী৷ মিশরে অনুষ্ঠানরত কপ২৭ শীর্ষ সম্মেলনে ডয়চে ভেলকে তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের এখনো (প্রাকৃতিক) সম্পদ আছে৷ কিন্তু সেই সম্পদের প্রকৃত অর্থে যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য রাজনীতিবিদদের অর্থনীতি এবং ভূরাজনীতিকে ঠিক পথে নেয়ায় উদ্যোগী হওয়া জরুরি৷”

ইউনিভার্সিটি অব হেলসিঙ্কির অধ্যাপক এবং জার্মানির সাস্টেইনেবল ইউরোপ রিসার্চ ইন্সটিটিউটের চেয়ারপার্সন সিলভিয়া লোরেক খুব সহজ একটা উপায় বাতলে দিয়েছেন৷তিনি এবং তার সহকর্মী গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছেন বিশ্বকে ৮০০ কোটি মানুষের জন্য আদর্শ বাসভূমি করে তুলতে হলে মাত্র তিনটি বিষয়ে মনযোগী হতে হবে- খাওয়াদাওয়া, বসবাস এবং যাতায়াত৷ লোরেক এবং তার গবেষক দল মনে করেন, প্রাণিজ খাবার বাদ দিয়ে নিরামিষ খেলে, বিমান এবং ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার বাদ দিলে এবং এক ব্যক্তি বা এক পরিবারের জন্য আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থা বর্জন করে যতটা সম্ভব সমবেতভাবে বসবাসের দিকে ঝুঁকলেই প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ অনেকখানি কমবে, পৃথিবীও অনেক বাসযোগ্য হবে৷

ডয়চে ভেলে (ডিডব্লিউ)