ইসরায়েল থেকে বাংলাদেশ নজরদারির প্রযুক্তি কেনেনি: এনটিএমসি
- আপডেট সময় : ১১:৩৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৩
- / ১৬৩৪ বার পড়া হয়েছে
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের দাবি- সাইপ্রাসে নিবন্ধিত ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশের ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটিরং সেন্টারের জন্য নজারদারির প্রযুক্তি কেনা হয়েছে। তবে এনটিএমসির মহাপরিচালক বলছেন এমন কিছু কেনা হয়নি৷
এনটিএমরিস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।
‘স্পিয়ারহেড সিস্টেম’ নামে পরিচিত সরঞ্জামটি বিক্রি করে সাইপ্রাসে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান পাসিতোরা। ওপেন কর্পোরেটসের তথ্য অনুযায়ী, পাসিতোরা আগে ‘উইস্পিয়ার’ নামে পরিচিত ছিল, যা একটি ইসরায়েলভিত্তিক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি হারেৎসের খবরে বলা হয়েছে “স্পিয়ারহেড সিস্টেমের” সঙ্গে নজরদারির সরঞ্জাম ও ট্র্যাকিং সফটওয়্যারযুক্ত একটি ভ্যান সরবরাহ করা হয়। এটি মোবাইল অথবা ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মোবাইল ফোনে অনুপ্রবেশ করে এবং সেখান থেকে এনক্রিপ্ট করা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ, ফেসবুক চ্যাট, কন্টাক্ট লিস্ট, কল ও এসএমএস’সহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এটি আধা কিলোমিটার আওতার মধ্যে কাজ করতে সক্ষম।”
সরবরাহাকীর প্রতিষ্ঠান পাসিতোরার পরিচালনা করেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সাবেক সদস্য তাল জনাথান দিলিয়ান। দিলিয়ানের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, তিনি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ২৫ বছর কাজ করেছেন। তিনি একটি বিশেষায়িত যোদ্ধা দলের নেতৃস্থানীয় পদে ছিলেন এবং একটি প্রযুক্তিভিত্তিক দলের প্রধান কমান্ডারের ভূমিকাও পালন করেছেন।
বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিক হারেৎজের খবরের সূত্রের বরাতে আরো জানিয়েছে, এনটিএমসির ২০২১-২২-এর বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা নথিতে অন্যান্য উপকরণের পাশাপাশি ১৯১ কোটি টাকা খরচে ‘ভেহিকল মাউন্টেড ডেটা ইন্টারসেপ্টর-২’ কেনার কথা আছে। ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তা কেনার কথা ছিল।
২০২১-২২ অর্থবছরে ওই সরঞ্জামসহ অন্যান্য সরঞ্জামের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২৬ কোটি টাকা আলাদা রাখা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাতে আরো ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
২০১৯ সালের মে মাসে এনটিএমসি সরাসরি ওই ধরনের সরঞ্জাম কেনার জন্য ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে আবেদন করে।
২০২১ সালের ৯ জুন অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান তরু গ্রুপের কাছ থেকে ৬৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা খরচে নজরদারি সরঞ্জাম কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করে।
হারেৎজ বলছে, বাংলাদেশ ও পাসিতোরার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে তরু। তরুর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসাফ ইলিয়াস একজন ইসরায়েলি নাগরিক।
বাংলাদেশের অন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আরেকটি ইসরায়েলভিত্তিক সংস্থা ‘প্রিলাইসিস কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন’ ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের ওপর আড়িপাতার যন্ত্র বিক্রি করেছে বলে খবরে বলা হয়েছে। হারেৎজ ২০১৯ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া একটি অর্ডারকে ওই খবরের সূত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে। গত ১০ জানুয়ারি খবরটি প্রকাশ করে হারেৎজ।
মানবাধিকার কর্মীর প্রতিক্রিয়া
মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক নূর খান ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আড়ি পাতার প্রযুক্তি কেনার খবর প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা কোনো যুদ্ধাবস্থার মধ্যে নেই যে গোয়েন্দাদের এই ধরনের প্রযুক্তি কিনতে হবে, এই লেভেলের কথাবার্তা প্রযুক্তি দিয়ে শুনতে হবে। আর সেটা যদি দেশের নাগরিকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় বা তাদের কথাবার্তা রেকর্ড করা হয়, তারও কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা। কারণ, বাংলাদেশের নাগরিকরা স্বাধীনতায় এবং দেশপ্রেমিক।”
তার কথা, “ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। সেই দেশ বা সেই দেশের অরিজিন তৃতীয় কোনো দেশ থেকে এই যন্ত্রপাতি কেনা হয়ে থাকলে সেটা অনৈতিক। এটাকে চালাকি মনে করি।”
“জনগণের কথা বলার স্বাধীনতাকে সংকুচিত করার জন্য আড়ি পাতার যন্ত্র বা যেকোনো ধরনের পদক্ষেপকে অগ্রহণযোগ্য মনে করি,” বলেন এই মানবাধিকার কর্মী।
‘ডিজিটাল সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে আমরা যে-কোনো ইকুইপমেন্ট কিনতে পারি’
এনটিএমসির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “ইসরায়েল থেকে কোনো সরঞ্জাম কেনা হয়নি। ইসরায়েলের সঙ্গে আমাদের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তাই তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু কেনার প্রশ্নই ওঠে না। কোনার সুযোগও নেই।”
তার কথা, “আমাদের (এনটিএমসি) কাজ হলো ডিজিটাল সিকিউরিটি নিশ্চিত করা। সেটা নিশ্চিত করতে আমাদের যা প্রয়োজন আমরা তাই করি। যেখানে যা কেনার প্রয়োজন, আমরা তাই কিনবো। আমরা প্রয়োজনে সার্ভিলেন্সসহ যে-কোনো ইকুইপমেন্ট কিনতে পারি ডিজিটাল সিকিউরিটি নিশ্চিতের জন্য। এটা যৌক্তিক এবং আইনে বাধা নেই। কিন্তু সেই ইকুইপমেন্ট যদি কোনো মানবতাবিরোধী কাজে ব্যবহার করা হয়, তাহলে অবশ্যই সেই ব্যবহারকারীকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। একজন পুলিশকে অস্ত্র দেয়া হয় নিজের নিরাপত্তা ও অপরাধীদের ধরার জন্য। সে যদি একজন সাধারণ মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলে তার শাস্তি হবে না? অবশ্যই শাস্তি হবে।”