ভয় থেকে আইএমএফ এর ঋণ নেওয়া হয়েছে:অর্থমন্ত্রী
- আপডেট সময় : ০৫:২৭:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুলাই ২০২৩
- / ১৬৬৩ বার পড়া হয়েছে
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সংকট বেড়েই চলছিল৷ কতদিনে তা থামবে, সেটি অনিশ্চিত ছিল৷ এই ভয় থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে৷ একথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল৷
বৃহস্পতিবার দাতা সংস্থা জাইকার নির্বাহী সিনিয়র প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কিন্তু ঋণের অঙ্ক আমাদের দুমাসের রেমিট্যান্সের সমান৷ এটি খুব সহজে পরিশোধ করা সম্ভব৷
বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাইকার অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে বলেছে সংস্থাটি৷ পাশাপাশি প্রকল্পের অগ্রগতিও জানতে চেয়েছে৷ আমরা বলেছি, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ হয়েছে৷ বাকি ৫ শতাংশ দ্রুত শেষ হবে৷ এরপর সেটি চালু করা হবে৷
জাইকার অর্থায়নে ৩৩টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার৷ এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা৷ এর মধ্যে জাইকা দিচ্ছে ২ লাখ ১ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা৷ অর্থাৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয়ের ৭৪ শতাংশের বেশি দিচ্ছে জাইকা৷ আর ২০২২ সালের জুন নাগাদ বাংলাদেশকে দেওয়া জাইকার মোট ঋণের পরিমাণ ৯ বিলিয়ন ডলার৷ এই ঋণের প্রকল্প কাজের অগ্রগতি দেখতে জাইকার নির্বাহী সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়ামাদা জুনিছিরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করছে৷ অন্য সদস্যরা হলেন জাইকা বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি তামহিদ ইছিগুছি, জাইকার প্রধান কার্যালয়ের উপমহাপরিচালক শুনসুকি সাকুদো, প্রিন্সিপাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার সুমন দাস গুপ্ত, জাইকা বাংলাদেশ অফিসের প্রতিনিধি ওকামতো তাকাহিরো৷
যুগান্তর জানায়, বৃহষ্পতিবার দুপুর ২টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাইকার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী৷ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি৷ মন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে জাইকার প্রতিনিধিদল এসেছে৷ বড় দাতা সংস্থাগুলো এভাবে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে আসে৷
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিনিধিদলের সদস্যরা জাইকার অর্থায়নে বাকি প্রকল্পের কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে বলেছেন৷ আমরাও আশা করছি পারব কারণ, আগে প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সমস্যা ছিল, এখন তা নেই৷ আগে মূল সমস্যা ছিল জমি নিয়ে৷ জমিসংক্রান্ত জটিলতায় কাজ বিলম্ব হতো৷ এখন সে সমস্যা নেই৷’ জাইকা বাজেট বাস্তবায়নে সহায়তা দেবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ঘাটতি যেখানে আছে, প্রয়োজন হলে সহায়তা নেওয়া হবে৷ এবার বাজেটের স্লোগান হচ্ছে-‘উন্নয়নের অগ্রযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’৷ এটি বাস্তবায়নে আইটি খাতসম্পর্কিত প্রকল্প বাস্তবায়নে জাইকার কাছ থেকে সহায়তা নেওয়া হবে৷’
অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল-অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বেরিয়ে আসতে আর কতদিন লাগতে পারে? জবাবে মন্ত্রী পালটা প্রশ্নর রেখে বলেন, ‘কোন জায়গায় (অর্থনীতির সূচক) খারাপ দেখছেন? আমেরিকার মতো দেশে তিন ব্যাংক ফেল করছে৷ এতে বোঝা যায়, পৃথিবীর অর্থনীতি কোনদিকে যাচ্ছে৷ পশ্চিমা অর্থনীতির বিবেচনায় আমরা অনেক ভালো অবস্থানে আছি৷’
সাংবাদিকরা জানতে চান-যেহেতু ভালো আছি, তাহলে কি আইএমএফ-এর ঋণ বাতিল করা হবে? জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আইএমএফ যে ঋণ দিয়েছে সেটি আমাদের দুমাসের রেমিট্যান্সের সমান৷ এটি সহজেই পরিশোধ করা সম্ভব৷’
তাহলে কি আমাদের ঋণের প্রয়োজন ছিল-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কতদিনে থামবে, সেটি অনিশ্চিত ছিল৷ যেভাবে আমাদের সংকট তৈরি হয়, আমদানিতে অনেক ডলার যাচ্ছে, এতে আমরা ভয় পেয়েছিলাম৷ পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে বুঝতে পারিনি৷ এজন্য ঋণ নেওয়া হয়েছে৷ এখন ভয় কেটে গেছে৷’
১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির বিষয়টি দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসার প্রথমদিকে মূল্যস্ফীতি পেয়েছি ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ৷ যে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু, যা করেছি, এখন তার থেকে বাড়েনি৷’
তাহলে কি মূল্যস্ফীতি সহনীয় আছে-জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি অতিক্রম করতে হলে যাদের কাছে খাবার নেই, তাদের খাবার দিতে হবে, সেটি করছি৷ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি৷ মানুষ কিন্তু না খেয়ে নেই৷’ কাঁচামরিচের আকাশছোঁয়া দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি মৌসুমি পণ্য, মৌসুমে উৎপাদন হয়৷ তাই আগ্রহ নিয়ে সবার মরিচ গাছ লাগানো দরকার৷’