বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতীয় টাকায় বাণিজ্যে ভারতের লাভ কী
- আপডেট সময় : ১২:৩৪:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০২৩
- / ১৬০৬ বার পড়া হয়েছে
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ভারতীয় টাকায় বাণিজ্য শুরু হয়েছে। কী বলছেন ভারতীয় বিশেষজ্ঞেরা?
কথা শুরু হয়েছিল গত এপ্রিলে। ভারত এবং বাংলাদেশ দ্রুত এক ঐতিহাসিক চুক্তিতে পৌঁছেছে। দুই বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত দুই দেশের বাণিজ্য আর ডলারে হবে না, ভারতীয় টাকা বা রুপিতে হবে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। কী বলছেন ভারতের বিশেষজ্ঞেরা?
ভারতের বহির্দেশীয় বাণিজ্যের অর্থনীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থনীতি এবং বাণিজ্যনীতির উপদেষ্টা তিনি। ডয়চে ভেলেকে অভিরূপ জানিয়েছেন, ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় পদক্ষেপ। দুই দেশের বাণিজ্য পারস্পরিক সম্পর্ক এবং বিশ্বাসের উপর অনেকটাই নির্ভর করে। সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত সেই সম্পর্কের উন্নতি করবে। ডলারের উপর দুই দেশের যে নির্ভরশীলতা, সেটিও এর ফলে কিছুটা কমবে। ডলারের রেটের উপর দুই দেশের বাণিজ্য আর প্রভাবিত হবে না। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। কিন্তু এর উল্টো সমস্যাও আছে। অভিরূপের বক্তব্য, ”ভারতীয় টাকা এখনো গ্লোবাল কারেন্সি নয়। ফলে বাংলাদেশের হাতে অতিরিক্ত ভারতীয় টাকা জমে গেলে তা বেচার জায়গা তারা পাবে না। ফলে খেয়াল রাখতে হবে দুই দেশের বাণিজ্য যেন সমমূল্যের হয়। ভারতে বাংলাদেশের টাকা অথবা বাংলাদেশে ভারতের টাকা যেন জমে না যায়। ডলারের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি সমস্যার কারণ হয় না। ডলার বিক্রি করা যায়।”
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাৎসরিক বাণিজ্য হয় ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলারের। বাংলাদেশকে ভারত সবচেয়ে বেশি কাঁচামাল রপ্তানি করে। ২০২২ সালের রিপোর্ট বলছে, দুই দেশের বাণিজ্য হয়েছে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলারের। কিন্তু দুই দেশের চুক্তিতে স্থির হয়েছে, কেবলমাত্র দুই বিলিয়নডলার পর্যন্ত বাণিজ্য ভারতীয় টাকায় হবে। বাকি বাণিজ্য আপাতত ডলারেই হবে। অভিরূপের ধারণা, টাকা যাতে কোনো দেশের হাতে জমে না যায়, সে কথা মাথায় রেখেই এই দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের সিলিং তৈরি করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ এবং অধ্যাপক সুকান্ত ভট্টাচার্য মনে করেন, বিষয়টি নিয়ে এখনই হইচই করার সময় আসেনি। এর ফলে ভারত এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে যাবে, এমনও মনে করার কারণ নেই। বিষয়টিকে বাণিজ্যিক সুবিধা হিসেবে ধরাই ভালো। সুকান্তের কথায়, ”ভারত যদি এই চুক্তি উপমহাদেশের আরো কয়েকটি দেশের সঙ্গে করতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতে এর ফল মিলবে। শুধু বাংলাদেশের সঙ্গে এই চুক্তিতে গিয়ে বিরাট কোনো পরিবর্তন হবে না।” তবে দুই দেশের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এটি একটি সুবিধাজনক জায়গা তৈরি করবে বলে মনে করেন সুকান্ত। সেদিক থেকে দেখলে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন।
গত কয়েকবছর ধরে ভারত অবশ্য বেশ কিছু দেশের সঙ্গেই ভারতীয় টাকায় বাণিজ্যের নীতি নিয়েছে। এ বিষয়ে আফ্রিকার কয়েকটি দেশের সঙ্গেও ভারতের আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন প্রবীণ বিজনেস সাংবাদিক সুপর্ণ পাঠক। ডয়চে ভেলেকে সুপর্ণ জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে এই চুক্তি এক নতুন পথের সূচনা হিসেবে ধরা যেতে পারে। এর ফলে দুই দেশেরই ডলারের উপর নির্ভরশীলতা কমবে। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের ওঠা-পড়ার উপর দুই দেশের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রিত হবে না। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। এমন নয় যে, এর আগে দুই দেশের মধ্যে নিজেদের টাকায় বাণিজ্য হয়নি। সীমান্ত বাণিজ্য বহু সময়েই রুপি এবং টাকার বিনিময়ে হয়েছে। কিন্তু এবার তা অনেকটা বড় আকার পেল। বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ভারতীয় ব্যাংকের সরাসরি সম্পর্ক তৈরি হলো। এই বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন সুপর্ণ।
সুপর্ণের বক্তব্য, ”ভারত দীর্ঘদিন ধরেই নিজেকে গ্লোবাল ইকোনমিক পাওয়ার হিসেবে তৈরি করতে চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিকে মূলধন করে ভারত এবার অন্য দেশের সঙ্গেও এই চুক্তির রাস্তায় হাঁটবে। যা সার্বিকভাবে ভারতের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।” অর্থনীতির চেয়েও এখানে ক্ষমতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন সুপর্ণ।
বস্তুত, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতি বিষয়ক এক কর্মকর্তাও সুপর্ণের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তার বক্তব্য, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারতীয় টাকাকে প্রতিষ্ঠা করা ভারতের অন্যতম লক্ষ্য। বাংলাদেশের সঙ্গে এই চুক্তি তারই প্রথম পদক্ষেপ বলা যেতে পারে। ওই কর্মকর্তাও স্বীকার করেছেন আরো বেশ কিছু দেশের সঙ্গে এবিষয়ে লাগাতার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত।
ডয়চে ভেলে