১০:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

নির্যাতিতা নারীদের বিরুদ্ধেই মামলা পুলিশের

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৮:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩
  • / ১৫১৭ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মালদহের নির্যাতিতা দুই নারী জামিন পেলেন। ফাঁড়ি ভাঙচুরের মামলায় তারা কীভাবে অভিযুক্ত হলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্য নারী কমিশন এ নিয়ে পুলিশের রিপোর্ট তলব করেছে।

১৮ জুলাইয়ের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সূত্রে মালদহে নারী নির্যাতনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, একটি হাটে দুই আদিবাসী নারীকে বিবস্ত্র করে মারধর করছেন কয়েকজন নারী। তাদের বিরুদ্ধে লেবু চুরির অভিযোগ উঠেছিল। উপস্থিত সিভিক ভলান্টিয়াররা তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করলেও সফল হননি।

মণিপুরের নারীনির্যাতন নিয়ে এখন বিরোধীরা সরব। এরই মধ্যে মালদহের ঘটনা। বিষয়টি মারধর পর্যন্ত থেমে থাকেনি। ভিডিওয় যে দুই নারীকে আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছে, তাদেরই পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ১৭ জুলাই বামনগোলার থানার নালাগোলায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর করা হয়। এই হামলায় অভিযুক্ত দেখানো হয় হাটের নির্যাতিতাদের।

সোমবার মালদহের সিজেএম আদালত দুই নির্যাতিতার জামিন মঞ্জুর করে। তাদের আইনজীবী অমিতাভ মৈত্রের বক্তব্য, “নির্যাতিতাদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এ নিয়ে মানবাধিকার কমিশন ও নারী কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে। হাইকোর্টে মামলাও করা হবে।”

এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠছে। নালাগোলায় ফাঁড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু, বিজেপি বিধায়ক জোয়েল মুর্মুর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। এক বিজেপি কর্মীর রহস্যমৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপি। প্রশ্ন উঠছে, এই মামলায় হাটের দুই নির্যাতিতার নাম কীভাবে জুড়ল?

হাটে চুরির অভিযোগ উঠেছিল ওই দুজনের বিরুদ্ধে। তারা মিষ্টি চুরি করেছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে। তা হলে তাদের বিরুদ্ধে চুরির মামলা না দিয়ে কেন ফাঁড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ দায়ের করা হল? নির্যাতিতাদের পরিবারের দাবি, ফাঁড়ি ভাঙচুরের মামলায় পরে দুই নারীর নাম জোড়া হয়েছে।

এই ঘটনা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে সোমবার মালদহে গিয়েছিলেন রাজ্য নারী কমিশনের দুই সদস্য। কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নির্যাতিতাদের পৃথক মামলায় গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চেয়ে পুলিশকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।”

মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ নিয়ে পুলিশ কিছু বলেনি। তবে হাটে দুই নারীর নির্যাতন প্রসঙ্গে মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেছেন, “ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখে আরো কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

পুলিশের ভূমিকা প্রসঙ্গে সাবেক পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “যে নারীদের নিগ্রহ করা হল, তাদের মানসিক অবস্থা অনুমান করা যায়। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য পরামর্শ দরকার। সেই সময় তাদের হাজতে পুরে দেয়া হল।”

নারী ও মানবাধিকার

প্রশ্ন উঠছে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও। এপিডিআর-এর রাজ্য সম্পাদক রণজিত শূর ডয়চে ভেলেকে বলেন, “মিথ্যা মামলা দেয়া এ রাজ্যের পুলিশের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্যাতিতাদের আটকে রাখতে হবে বলে তাদের পুরনো মামলায় জুড়ে দেয়া হয়েছে। এ জন্য পশ্চিমবঙ্গে জেলবন্দির সংখ্যা বাড়ছে। জেলে যত বন্দি থাকতে পারে, তার থেকে ১০ হাজার বন্দি বেশি আছে।”

উত্তরবঙ্গেরই নকশালবাড়িতে গ্রামের সালিশি সভায় আদিবাসী মহিলাকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। কয়েকদিন ধরে মণিপুরের নারী নির্যাতন নিয়ে দেশজুড়ে শোরগোল চলছে। সংসদ ভবনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিরোধী জোট। চাপ বাড়ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উপর। এই পরিস্থিতিতে মালদহের ঘটনা নিয়ে পাল্টা সওয়াল শুরু করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সাংসদরা। মালদহ নিয়ে তারাও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সংসদ ভবন চত্বরে।

নারীর প্রতি অমানবিক আচরণ নিয়ে এই চাপানউতোর কেন? এর পিছনে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব রয়েছে বলে মনে করেন রাজ্য নারী কমিশনের সাবেক চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, “পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এখনো বদলানো যায়নি। তাই নারী নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। তাই দেশ নারী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী পেলেও পরিস্থিতি একই থেকে গিয়েছে।”

ডয়চে ভেলে

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

নির্যাতিতা নারীদের বিরুদ্ধেই মামলা পুলিশের

আপডেট সময় : ০৪:৫৮:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩

মালদহের নির্যাতিতা দুই নারী জামিন পেলেন। ফাঁড়ি ভাঙচুরের মামলায় তারা কীভাবে অভিযুক্ত হলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্য নারী কমিশন এ নিয়ে পুলিশের রিপোর্ট তলব করেছে।

১৮ জুলাইয়ের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সূত্রে মালদহে নারী নির্যাতনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, একটি হাটে দুই আদিবাসী নারীকে বিবস্ত্র করে মারধর করছেন কয়েকজন নারী। তাদের বিরুদ্ধে লেবু চুরির অভিযোগ উঠেছিল। উপস্থিত সিভিক ভলান্টিয়াররা তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করলেও সফল হননি।

মণিপুরের নারীনির্যাতন নিয়ে এখন বিরোধীরা সরব। এরই মধ্যে মালদহের ঘটনা। বিষয়টি মারধর পর্যন্ত থেমে থাকেনি। ভিডিওয় যে দুই নারীকে আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছে, তাদেরই পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ১৭ জুলাই বামনগোলার থানার নালাগোলায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর করা হয়। এই হামলায় অভিযুক্ত দেখানো হয় হাটের নির্যাতিতাদের।

সোমবার মালদহের সিজেএম আদালত দুই নির্যাতিতার জামিন মঞ্জুর করে। তাদের আইনজীবী অমিতাভ মৈত্রের বক্তব্য, “নির্যাতিতাদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এ নিয়ে মানবাধিকার কমিশন ও নারী কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে। হাইকোর্টে মামলাও করা হবে।”

এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠছে। নালাগোলায় ফাঁড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু, বিজেপি বিধায়ক জোয়েল মুর্মুর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। এক বিজেপি কর্মীর রহস্যমৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপি। প্রশ্ন উঠছে, এই মামলায় হাটের দুই নির্যাতিতার নাম কীভাবে জুড়ল?

হাটে চুরির অভিযোগ উঠেছিল ওই দুজনের বিরুদ্ধে। তারা মিষ্টি চুরি করেছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে। তা হলে তাদের বিরুদ্ধে চুরির মামলা না দিয়ে কেন ফাঁড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ দায়ের করা হল? নির্যাতিতাদের পরিবারের দাবি, ফাঁড়ি ভাঙচুরের মামলায় পরে দুই নারীর নাম জোড়া হয়েছে।

এই ঘটনা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে সোমবার মালদহে গিয়েছিলেন রাজ্য নারী কমিশনের দুই সদস্য। কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নির্যাতিতাদের পৃথক মামলায় গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চেয়ে পুলিশকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।”

মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ নিয়ে পুলিশ কিছু বলেনি। তবে হাটে দুই নারীর নির্যাতন প্রসঙ্গে মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেছেন, “ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখে আরো কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

পুলিশের ভূমিকা প্রসঙ্গে সাবেক পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “যে নারীদের নিগ্রহ করা হল, তাদের মানসিক অবস্থা অনুমান করা যায়। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য পরামর্শ দরকার। সেই সময় তাদের হাজতে পুরে দেয়া হল।”

নারী ও মানবাধিকার

প্রশ্ন উঠছে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও। এপিডিআর-এর রাজ্য সম্পাদক রণজিত শূর ডয়চে ভেলেকে বলেন, “মিথ্যা মামলা দেয়া এ রাজ্যের পুলিশের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্যাতিতাদের আটকে রাখতে হবে বলে তাদের পুরনো মামলায় জুড়ে দেয়া হয়েছে। এ জন্য পশ্চিমবঙ্গে জেলবন্দির সংখ্যা বাড়ছে। জেলে যত বন্দি থাকতে পারে, তার থেকে ১০ হাজার বন্দি বেশি আছে।”

উত্তরবঙ্গেরই নকশালবাড়িতে গ্রামের সালিশি সভায় আদিবাসী মহিলাকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। কয়েকদিন ধরে মণিপুরের নারী নির্যাতন নিয়ে দেশজুড়ে শোরগোল চলছে। সংসদ ভবনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিরোধী জোট। চাপ বাড়ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উপর। এই পরিস্থিতিতে মালদহের ঘটনা নিয়ে পাল্টা সওয়াল শুরু করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সাংসদরা। মালদহ নিয়ে তারাও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সংসদ ভবন চত্বরে।

নারীর প্রতি অমানবিক আচরণ নিয়ে এই চাপানউতোর কেন? এর পিছনে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব রয়েছে বলে মনে করেন রাজ্য নারী কমিশনের সাবেক চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, “পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এখনো বদলানো যায়নি। তাই নারী নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। তাই দেশ নারী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী পেলেও পরিস্থিতি একই থেকে গিয়েছে।”

ডয়চে ভেলে