১০:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

‘কাতারগেট’ প্রকাশ করছে ইউরোপিয়ান সংসদে দুর্নীতির বাস্তবতা

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ১২:৩৫:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৩
  • / ১৫৫২ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ব্রিটিশ নথিতে উঠে এসেছে এক তুর্কি ব্যবসায়ীর নাম৷ একই নথিতে আছে মরক্কো ও কাতার থেকে ইইউ সংসদ সদস্যদের ঘুস নেবার কথাও৷

‘১৯৯২ সালে লন্ডনের এক কাবাবের দোকানে প্রথম কাজ৷ তারপর দেশে বিদেশের নানা অভিজাত পাড়া ঘুরে দুর্নীতির অভিযোগে যুক্ত হয় তুর্কি ব্যবসায়ী হাকান কামুজের নাম৷ সম্প্রতি,ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্যদের ঘুস নেবার আলোচনাতেও জড়িয়েছে তার নাম৷

কাবাব শপ থেকে ‘কাতারগেট’, লম্বা পথ, কিন্তু তার মাঝে হাকান রণবিদ্যায় পড়াশোনা শেষ করেন৷ তুর্কি ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব নিয়ে পরামর্শও দিতেন তিনি৷ এক পর্যায়ে, পড়াশোনা শেষ করে তিনি আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করেন৷

এসময়ে তিনি যুক্তরাজ্য ও তুরস্কে বেশ কিছু ক্রম্পানি চালু করেন, যেগুলির নাম এই ‘কাতারগেট’ দুর্নীতিতে উঠে আসছে৷

কামুজ পরিচালিত একটি সংস্থা, ‘স্টোন হোয়াইট’, ভারত, ইসরায়েল, সিরিয়া, সৌদি আরবের মতো তুরস্কের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের বিরুদ্ধে মামলা লড়েছে৷

ডয়চে ভেলেকে কামুজ বলেন, ‘‘গত ১০ বছরে অভিবাসন আইন বিষয়ে আমাদের কাজ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলেছে৷

ইইউ পার্লামেন্ট  কামুজ

২০২২ সালে ইইউ পার্লামেন্টের বেশ কয়েকজন সদস্য, যেমন ভাইস প্রেসিডেন্ট ইভা কাইলি ও তার সঙ্গী ফ্রাঞ্চেসকো গিওর্গিকে দুর্নীতি, টাকা আত্মসাৎ করা ও অপরাধচক্রের সাথে যুক্ত থাকার দায়ে ব্রাসেলস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়৷

বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইইউ সংসদ সদস্যদের নগদ টাকা দেবার পাশাপাশি, বিভিন্ন বিলাসবহুল জায়গায় বেড়ানোর ও থাকার ব্যবস্থা বিনামূল্যে করে দেন কাতার, মরক্কো ও মৌরিতানিয়ার কিছু সরকারি কর্মকর্তারা৷ তাদের উদ্দেশ্য ছিল এতে করে ২০২১ সালে ইইউ’র অন্তর্গত সবক’টি বিমানবন্দরে কাতার এয়ারওয়েজকে ছাড় দেওয়ার পক্ষে ইইউ সংসদদের ভোট টানা৷

২০০৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ইইউ সংসদ সদস্য থাকা আন্তোনিও পানজেরি এই ‘কাতারগেট’ চক্রের মাথা বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তাকে গ্রেপ্তার করার পর থেকে পুলিশের সাথে সহায়তা করছে পানজেরি, খবর দিচ্ছে তার সহায়কদের৷

এই পানজেরির সাথে গিওর্গির ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে, রয়েছে যৌথ কোম্পানিও৷ এইসব কোম্পানির মাধ্যমেই ঘুসের অর্থ পাচার করা হতো৷

আরো যা তথ্য

পানজেরি ও গিওর্গির বক্তব্য ও কামুজের সাক্ষাৎকার ছাড়াও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পন্থা কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি পেয়েছে ডয়চে ভেলে৷ ২০১৭ সালে জার্মান সংবাদপত্র ডি জ্যুডডয়চেৎসাইটুং ও আইসিআইজে (ইন্টারন্যাশনাল কনসর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস) বিশ্বের কয়েকটি বড় অফশোর কোম্পানিকে খতিয়ে দেখে৷

সেখানে উঠে আসে একটি নাম, রেডিয়ান্ট প্রপার্টিজ, যা নথিভুক্ত আছে যুক্তরাজ্যের দ্বীপ গার্নসিতে৷ সেই সংস্থার পরিচালনা করে রেডিয়ান্ট ট্রাস্ট৷ প্যারাডাইস পেপার্স বলছে, এই সংস্থার মালিক কাতারের রাজপরিবারের সদস্য খালিদ আল থানি ও তার পুত্র, তুর্কি আল থানি৷ খালিদ একইসঙ্গে কাতার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী পরিচালকও৷

রেডিয়ান্ট ট্রাস্ট নামে একই গার্নসি দ্বীপে একটি সংস্থার ট্রাস্টি হাকান কামুজ, কিন্তু এই দুই রেডিয়ান্ট ট্রাস্ট একই সংস্থা কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ যদিও যুক্তরাজ্যের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সেই দেশে আর কোনো সংস্থা নেই এই একই নামে৷ কিন্তু কামুজকে খালিদ আল থানির সাথে ঘনিষ্ঠতা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি তা এড়িয়ে যান৷ কাতারের সরকারও ডয়চে ভেলের প্রশ্নের উত্তর দেয়নি৷

দুর্নীতির কালো ছায়া ইইউ ওপর

কাতারগেট চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় যে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের অন্দরে ঢুকে গেছে দুর্নীতি, কালো টাকার লেনদেন ও গোপন ব্যবসায়িক বোঝাপড়া৷ এই ঘটনা সামনে আসার পর, ইইউ পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট রোবের্তা মেটসোলা ১৪-দফা প্যাকেজ ঘোষণা করেন দুর্নীতি মোকাবিলায়৷

কিন্তু ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি ডিরেক্টর নিকোলাস আইয়োসা মেটসোলার পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নন৷ তার মতে, ইইউ পার্লামেন্ট সরাসরি কিছু বলছে না এবং ‘‘ইইউ সংসদ সদস্যরা এত দীর্ঘ সময় ধরে বিচারের বাইরে থেকেছেন যে এখন বদলের কথা কল্পনাও করতে পারছেন না৷”

দুর্নীতিবিরোধী নীতির প্রথম খসড়া জুলাইয়ের বদলে এখন বেরোবে সেপ্টেম্বরে৷ কাতারগেট কাণ্ড সামনে আসার পর কেটে গেছে সাত মাসেরও বেশি সময়৷ কিন্তু এখনও ইইউ সংসদে দুর্নীতিবিরোধী কোনো নতুন নীতি প্রণয়ন করা হয়নি৷

মূল প্রতিবেদন: সেরদার ভারদার

সহযোগিতায়: জ্যাক প্যারক (ডয়চে ভেলে) ও পাওলো বিয়োন্দানি (ল’এসপ্রেসো)

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

‘কাতারগেট’ প্রকাশ করছে ইউরোপিয়ান সংসদে দুর্নীতির বাস্তবতা

আপডেট সময় : ১২:৩৫:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৩

ব্রিটিশ নথিতে উঠে এসেছে এক তুর্কি ব্যবসায়ীর নাম৷ একই নথিতে আছে মরক্কো ও কাতার থেকে ইইউ সংসদ সদস্যদের ঘুস নেবার কথাও৷

‘১৯৯২ সালে লন্ডনের এক কাবাবের দোকানে প্রথম কাজ৷ তারপর দেশে বিদেশের নানা অভিজাত পাড়া ঘুরে দুর্নীতির অভিযোগে যুক্ত হয় তুর্কি ব্যবসায়ী হাকান কামুজের নাম৷ সম্প্রতি,ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্যদের ঘুস নেবার আলোচনাতেও জড়িয়েছে তার নাম৷

কাবাব শপ থেকে ‘কাতারগেট’, লম্বা পথ, কিন্তু তার মাঝে হাকান রণবিদ্যায় পড়াশোনা শেষ করেন৷ তুর্কি ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব নিয়ে পরামর্শও দিতেন তিনি৷ এক পর্যায়ে, পড়াশোনা শেষ করে তিনি আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করেন৷

এসময়ে তিনি যুক্তরাজ্য ও তুরস্কে বেশ কিছু ক্রম্পানি চালু করেন, যেগুলির নাম এই ‘কাতারগেট’ দুর্নীতিতে উঠে আসছে৷

কামুজ পরিচালিত একটি সংস্থা, ‘স্টোন হোয়াইট’, ভারত, ইসরায়েল, সিরিয়া, সৌদি আরবের মতো তুরস্কের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের বিরুদ্ধে মামলা লড়েছে৷

ডয়চে ভেলেকে কামুজ বলেন, ‘‘গত ১০ বছরে অভিবাসন আইন বিষয়ে আমাদের কাজ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলেছে৷

ইইউ পার্লামেন্ট  কামুজ

২০২২ সালে ইইউ পার্লামেন্টের বেশ কয়েকজন সদস্য, যেমন ভাইস প্রেসিডেন্ট ইভা কাইলি ও তার সঙ্গী ফ্রাঞ্চেসকো গিওর্গিকে দুর্নীতি, টাকা আত্মসাৎ করা ও অপরাধচক্রের সাথে যুক্ত থাকার দায়ে ব্রাসেলস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়৷

বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইইউ সংসদ সদস্যদের নগদ টাকা দেবার পাশাপাশি, বিভিন্ন বিলাসবহুল জায়গায় বেড়ানোর ও থাকার ব্যবস্থা বিনামূল্যে করে দেন কাতার, মরক্কো ও মৌরিতানিয়ার কিছু সরকারি কর্মকর্তারা৷ তাদের উদ্দেশ্য ছিল এতে করে ২০২১ সালে ইইউ’র অন্তর্গত সবক’টি বিমানবন্দরে কাতার এয়ারওয়েজকে ছাড় দেওয়ার পক্ষে ইইউ সংসদদের ভোট টানা৷

২০০৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ইইউ সংসদ সদস্য থাকা আন্তোনিও পানজেরি এই ‘কাতারগেট’ চক্রের মাথা বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তাকে গ্রেপ্তার করার পর থেকে পুলিশের সাথে সহায়তা করছে পানজেরি, খবর দিচ্ছে তার সহায়কদের৷

এই পানজেরির সাথে গিওর্গির ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে, রয়েছে যৌথ কোম্পানিও৷ এইসব কোম্পানির মাধ্যমেই ঘুসের অর্থ পাচার করা হতো৷

আরো যা তথ্য

পানজেরি ও গিওর্গির বক্তব্য ও কামুজের সাক্ষাৎকার ছাড়াও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পন্থা কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি পেয়েছে ডয়চে ভেলে৷ ২০১৭ সালে জার্মান সংবাদপত্র ডি জ্যুডডয়চেৎসাইটুং ও আইসিআইজে (ইন্টারন্যাশনাল কনসর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস) বিশ্বের কয়েকটি বড় অফশোর কোম্পানিকে খতিয়ে দেখে৷

সেখানে উঠে আসে একটি নাম, রেডিয়ান্ট প্রপার্টিজ, যা নথিভুক্ত আছে যুক্তরাজ্যের দ্বীপ গার্নসিতে৷ সেই সংস্থার পরিচালনা করে রেডিয়ান্ট ট্রাস্ট৷ প্যারাডাইস পেপার্স বলছে, এই সংস্থার মালিক কাতারের রাজপরিবারের সদস্য খালিদ আল থানি ও তার পুত্র, তুর্কি আল থানি৷ খালিদ একইসঙ্গে কাতার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী পরিচালকও৷

রেডিয়ান্ট ট্রাস্ট নামে একই গার্নসি দ্বীপে একটি সংস্থার ট্রাস্টি হাকান কামুজ, কিন্তু এই দুই রেডিয়ান্ট ট্রাস্ট একই সংস্থা কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ যদিও যুক্তরাজ্যের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সেই দেশে আর কোনো সংস্থা নেই এই একই নামে৷ কিন্তু কামুজকে খালিদ আল থানির সাথে ঘনিষ্ঠতা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি তা এড়িয়ে যান৷ কাতারের সরকারও ডয়চে ভেলের প্রশ্নের উত্তর দেয়নি৷

দুর্নীতির কালো ছায়া ইইউ ওপর

কাতারগেট চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় যে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের অন্দরে ঢুকে গেছে দুর্নীতি, কালো টাকার লেনদেন ও গোপন ব্যবসায়িক বোঝাপড়া৷ এই ঘটনা সামনে আসার পর, ইইউ পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট রোবের্তা মেটসোলা ১৪-দফা প্যাকেজ ঘোষণা করেন দুর্নীতি মোকাবিলায়৷

কিন্তু ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি ডিরেক্টর নিকোলাস আইয়োসা মেটসোলার পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নন৷ তার মতে, ইইউ পার্লামেন্ট সরাসরি কিছু বলছে না এবং ‘‘ইইউ সংসদ সদস্যরা এত দীর্ঘ সময় ধরে বিচারের বাইরে থেকেছেন যে এখন বদলের কথা কল্পনাও করতে পারছেন না৷”

দুর্নীতিবিরোধী নীতির প্রথম খসড়া জুলাইয়ের বদলে এখন বেরোবে সেপ্টেম্বরে৷ কাতারগেট কাণ্ড সামনে আসার পর কেটে গেছে সাত মাসেরও বেশি সময়৷ কিন্তু এখনও ইইউ সংসদে দুর্নীতিবিরোধী কোনো নতুন নীতি প্রণয়ন করা হয়নি৷

মূল প্রতিবেদন: সেরদার ভারদার

সহযোগিতায়: জ্যাক প্যারক (ডয়চে ভেলে) ও পাওলো বিয়োন্দানি (ল’এসপ্রেসো)

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ