০৭:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ভুয়া খবরই তো তেজি ঘোড়ার মতো দৌড়ায়

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ১১:২৫:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১৫৬৮ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভোট আসলেই ভারতে ফেক নিউজের অভিয়োগ বারবার সামনে আসে। অভিযোগের আঙুল ওঠে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে।

কয়েকবছর পিছনে তাকানো যাক। উত্তরপ্রদেশে ২০১৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার তখন তুঙ্গে। সেসময় একটা খবর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলো। উত্তরপ্রদেশের তখনকার মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব তার বাবা এবং সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদবকে থাপ্পড় মেরেছেন।  দাবানলের মতো হু হু করে ছড়িয়ে গেল সেই খবর। কেউ যাচাই করে দেখলো না। কেউ এটা ভাবতেও পারলো না, অখিলেশের মতো শিক্ষিত, বিনয়ী, বাবার প্রতি অসম্ভব শ্রদ্ধাশীল মানুষ যে এই কাজটা করতে পারেন না। এসব মানুষের ভাবনাতেই এলো না।  মুলায়ম, অখিলেশ বললেন, এরকম কিছুই হয়নি। সেকথা কানে তোলা হলো না। মানুষ সামাজিক মাধ্যমের ওই খবরটা এমনভাবে গিললো ও তার প্রতিটি কথা বিশ্বাস করলো যে, সমাজবাদী পার্টির ভরাডুবি হলো। দলের কর্মীরা পর্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল।

এর এক বছর পর রাজস্থানের কোটায় বিজেপি-র সামাজিক মাধ্যমের কর্মকর্তাদের সভায় সত্যটা ফাঁস করেছিলেন অমিত শাহ। তাঁর সেই ভাষণের কথা দৈনিক ভাস্কর, দ্য ওয়্যার, দ্য প্রিন্টের মতো অনেকগুলি সংবাদমাধ্যমে ছাপা হয়েছিল। সেখান থেকেই হুবহু অনুবাদ করে দিচ্ছি। অমিত শাহ সামাজিক মাধ্যম নিয়ে বলতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, ”আমাদের এখানে একটা ছেলে ছিল।

সে একবার চালাকি করেছিল। আমি বলেছিলাম, নীচ থেকে উপরে মেসেজ যাবে। তারপর উপর থেকে নীচে। সে সোজা গ্রুপে মেসেজ পোস্ট করে দেয়, অখিলেশ মুলায়মজিকে চড় মেরেছে।”

অমিত শাহ বলেছেন, ”মুলায়ম আর অখিলেশ তো ছয়শ কিলোমিটার দূরে ছিল। তাসত্ত্বেও সে পোস্ট করে দেয়। আর সামাজিক মাধ্যম নিয়ে রাজ্যের যে টিম ছিল, তারা সেই পোস্ট নীচে পাঠিয়ে দেয়। সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। দশটার পর থেকে আমার কাছে ফোনের পর ফোন আসতে থাকে, ভাইসাব, জানেন তো, মুলায়মকে থাপ্পড় মেরেছে অখিলেশ। নারীরাও রেগে যান। সব জায়গায় এটা চলতে থাকে। এরকম করা উচিত নয়। এরকম কাজ করবেন না।” অমিত শাহ যখন এই কথা বলছেন, ততদিনে অখিলেশের ভরাডুবি হয়ে গেছে।

এই সব কথা বলার আগে বিজেপির সামাজিক মাধ্যমের শক্তি সম্পর্কে অমিত শাহ বলেছিলেন, ”উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র গ্রুপে ৩১ লাখ মানুষ আছে। প্রতিদিন সকাল আটটায় গ্রুপে মেসেজ পোস্ট হয়। তার শিরোনাম, সত্যকে জানুন। খবরের কাগজে বিজেপি-কে নিয়ে যে মিথ্যা খবর প্রকাশিত হয়, সেটা নিয়ে পোস্ট করা হয়। তারপর সেটা সামাজিক মাধ্যমে ছেয়ে য়ায়। মানুষ তো খবরের কাগজকে গিয়ে প্রশ্ন করে, কেন এরকম খবর ছাপলেন?”

অমিত শাহ অতিশয়োক্তি করেননি। বিজেপি-র আইটি সেলের সঙ্গে যুক্ত নেতা আমায় জানিয়েছেন, সবার উপরে আছে বিজেপি সদরদফতরের আইটি সেল। তার নিচে প্রতিটি রাজ্যে আইটি সেল। সেখান থেকে প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি ব্লকে, প্রতিটি লোকসভা ও বিধানসভা কেন্দ্র অনুসারে আইটি সেল। একেবারে নীচে আছে, কয়েকটি গ্রাম জুড়ে একেকটি সেল। সেই নেতা দাবি করেছিলেন, ”আমার আধঘণ্টা সময় দরকার হয়। তারমধ্যে আমরা যে কোনো পোস্ট ভাইরাল করে দেয়ার ক্ষমতা রাখি। বিরোধীদের কোনো পোস্ট বেশি চললে, তার পাল্টা পোস্ট আমরা এমনভাবে ভাইরাল করি, মানুষ ভাবে আমাদেরটাই আসল।”

একবারের জন্যও ভাববেন না, যারা এই সব আইটি সেলের সঙ্গে যুক্ত, তারা দলের কর্মী। তারা সকলেই রীতিমতো শিক্ষিত। অনেকে বিদেশ থেকে পড়াশুনো করে এসেছেন। আগে বড় কোম্পানিতে ছিলেন। তারা একেবারে পেশাদার। তাদের বেতন দিয়ে রাখা হয়।  সত্যি সত্যিই এই পরিকাঠামো নিয়ে বিজেপি যে কোনো পোস্ট ভাইরাল করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।

ভাববেন না, এটা কেবল বিজেপি করে। সব দলই তার ক্ষমতামতো করে।সকলেই পেশাদারদের সাহায্য নেয়। কোম্পানির সাহায্য নেয়। বিজেপি-র সাফল্য দেখে তারাও বুঝতে পেরেছে, সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার না করতে পারলে, মানুষের কাছে প্রতিদিন পৌঁছানো সম্ভব নয়। ।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউ বিশ্বের ৮১টি দেশকে নিয়ে ২০২০তে একটা সমীক্ষা করেছিল। তাতে দেখা গেছে, ৭৬টি দেশে রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে মিথ্যা সংবাদ ছড়ানো হয়।  সেটা এখন পেশাদাররা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে করেন।

ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়। ভোট এলেই ভারতে ফেক নিউজ নিয়ে প্রচুর অভিযোগ ওঠে। দুইটি তথ্য এখানে মনে রাখা দরকার। ভারতে স্মার্টফোন ব্যবহারকীরর সংখ্যা ৬৫ কোটি এবং দেশের ৮৮ শতাংশ অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা আছে। তৃতীয় বিষয়টা হলো, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলে স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। ফলে কোনো মেসেজ ভাইরাল করে দিতে পারলে, তা লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। আর মানুষ যেমন আগে ছাপার হরফে লেখাকে ধ্রুব সত্য মনে করত। এখন তেমনই মোবাইলে আসা ভিডিও ও লেখাকে অভ্রান্ত সত্য মনে করে। রাজনৈতিক দলগুলি, পেশাদাররা সেই সুযোগ নেয়। তারা সমানে চেষ্টা করে যায়, আংশিক সত্য, অর্ধসত্য ও মিথ্যা প্রচার করতে। ভিডিওতে কারচুপি করে ছেড়ে দিলে মানুষ সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হন। তাই প্রতিবার ভোটের আগে এই ধরনের একগুচ্ছ অভিযোগ আসে। আর একটা মিথ্যা খবরের পরিণতি কী হতে পারে, তা মুলায়ম-অখিলেশ চড়কাণ্ড থেকেই তো স্পষ্ট।

আসলে ছোটবেলা থেকেই তো আমাদের শেখানো হয়, মেনে নাও। প্রশ্ন করো না। যুক্তি দিয়ে বিচার কর না। কোনো বিশ্বাসে আঘাত কর না। নির্বিচারে মুখ বুজে মেনে নিলে সকলেরই লাভ। রাজনীতি থেকে ধর্ম, সব জায়গায় যারা ক্ষমতায় থাকেন, তারা বলেন, প্রতিবাদ করতে যেও না। প্রশ্ন করো না। আস্থা রাখ। আর এই সুয়োগে অনেক মিথ্যা সত্য হয়ে য়ায়। অনেক তথ্য উল্টে যায়। প্রচারে মিলা বস্তু তর্কে বহুদূর। তাই আমরা প্রশ্ন করি না।

রাজনীতির সঙ্গে নীতি থাকলেও বাস্তবে তা হলো ভোটের যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে কোনো নীতি নেই। ফলে মানুরযে মনে একটা ধারণা তৈরির জন্য যদি কিছু মিথ্যা প্রচারের আশ্রয় নিতে হয়, তাতেই বা অসুবিধা কোথায়? নীতিবাগিশরা, ইমানুয়েল কান্টের মতো দার্শনিকরা বলবেন, শুধু ফল ভালো হলেই চলে না, যে রাস্তা নেয়া হচ্ছে, সেটাও ভালো ও নৈতিক হওয়া দরকার। আমরা ওসব কথাকে থোড়াই কেয়ার করি।

আমরা তো মনে করি, সব ভালো যার শেষ ভালো। তাই এরকমই চলবে, বরং মিথ্যা প্রচার তেজি ঘোড়ার মতো দৌড়াতে থাকবে।

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

ভুয়া খবরই তো তেজি ঘোড়ার মতো দৌড়ায়

আপডেট সময় : ১১:২৫:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ভোট আসলেই ভারতে ফেক নিউজের অভিয়োগ বারবার সামনে আসে। অভিযোগের আঙুল ওঠে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে।

কয়েকবছর পিছনে তাকানো যাক। উত্তরপ্রদেশে ২০১৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার তখন তুঙ্গে। সেসময় একটা খবর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলো। উত্তরপ্রদেশের তখনকার মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব তার বাবা এবং সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদবকে থাপ্পড় মেরেছেন।  দাবানলের মতো হু হু করে ছড়িয়ে গেল সেই খবর। কেউ যাচাই করে দেখলো না। কেউ এটা ভাবতেও পারলো না, অখিলেশের মতো শিক্ষিত, বিনয়ী, বাবার প্রতি অসম্ভব শ্রদ্ধাশীল মানুষ যে এই কাজটা করতে পারেন না। এসব মানুষের ভাবনাতেই এলো না।  মুলায়ম, অখিলেশ বললেন, এরকম কিছুই হয়নি। সেকথা কানে তোলা হলো না। মানুষ সামাজিক মাধ্যমের ওই খবরটা এমনভাবে গিললো ও তার প্রতিটি কথা বিশ্বাস করলো যে, সমাজবাদী পার্টির ভরাডুবি হলো। দলের কর্মীরা পর্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল।

এর এক বছর পর রাজস্থানের কোটায় বিজেপি-র সামাজিক মাধ্যমের কর্মকর্তাদের সভায় সত্যটা ফাঁস করেছিলেন অমিত শাহ। তাঁর সেই ভাষণের কথা দৈনিক ভাস্কর, দ্য ওয়্যার, দ্য প্রিন্টের মতো অনেকগুলি সংবাদমাধ্যমে ছাপা হয়েছিল। সেখান থেকেই হুবহু অনুবাদ করে দিচ্ছি। অমিত শাহ সামাজিক মাধ্যম নিয়ে বলতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, ”আমাদের এখানে একটা ছেলে ছিল।

সে একবার চালাকি করেছিল। আমি বলেছিলাম, নীচ থেকে উপরে মেসেজ যাবে। তারপর উপর থেকে নীচে। সে সোজা গ্রুপে মেসেজ পোস্ট করে দেয়, অখিলেশ মুলায়মজিকে চড় মেরেছে।”

অমিত শাহ বলেছেন, ”মুলায়ম আর অখিলেশ তো ছয়শ কিলোমিটার দূরে ছিল। তাসত্ত্বেও সে পোস্ট করে দেয়। আর সামাজিক মাধ্যম নিয়ে রাজ্যের যে টিম ছিল, তারা সেই পোস্ট নীচে পাঠিয়ে দেয়। সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। দশটার পর থেকে আমার কাছে ফোনের পর ফোন আসতে থাকে, ভাইসাব, জানেন তো, মুলায়মকে থাপ্পড় মেরেছে অখিলেশ। নারীরাও রেগে যান। সব জায়গায় এটা চলতে থাকে। এরকম করা উচিত নয়। এরকম কাজ করবেন না।” অমিত শাহ যখন এই কথা বলছেন, ততদিনে অখিলেশের ভরাডুবি হয়ে গেছে।

এই সব কথা বলার আগে বিজেপির সামাজিক মাধ্যমের শক্তি সম্পর্কে অমিত শাহ বলেছিলেন, ”উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র গ্রুপে ৩১ লাখ মানুষ আছে। প্রতিদিন সকাল আটটায় গ্রুপে মেসেজ পোস্ট হয়। তার শিরোনাম, সত্যকে জানুন। খবরের কাগজে বিজেপি-কে নিয়ে যে মিথ্যা খবর প্রকাশিত হয়, সেটা নিয়ে পোস্ট করা হয়। তারপর সেটা সামাজিক মাধ্যমে ছেয়ে য়ায়। মানুষ তো খবরের কাগজকে গিয়ে প্রশ্ন করে, কেন এরকম খবর ছাপলেন?”

অমিত শাহ অতিশয়োক্তি করেননি। বিজেপি-র আইটি সেলের সঙ্গে যুক্ত নেতা আমায় জানিয়েছেন, সবার উপরে আছে বিজেপি সদরদফতরের আইটি সেল। তার নিচে প্রতিটি রাজ্যে আইটি সেল। সেখান থেকে প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি ব্লকে, প্রতিটি লোকসভা ও বিধানসভা কেন্দ্র অনুসারে আইটি সেল। একেবারে নীচে আছে, কয়েকটি গ্রাম জুড়ে একেকটি সেল। সেই নেতা দাবি করেছিলেন, ”আমার আধঘণ্টা সময় দরকার হয়। তারমধ্যে আমরা যে কোনো পোস্ট ভাইরাল করে দেয়ার ক্ষমতা রাখি। বিরোধীদের কোনো পোস্ট বেশি চললে, তার পাল্টা পোস্ট আমরা এমনভাবে ভাইরাল করি, মানুষ ভাবে আমাদেরটাই আসল।”

একবারের জন্যও ভাববেন না, যারা এই সব আইটি সেলের সঙ্গে যুক্ত, তারা দলের কর্মী। তারা সকলেই রীতিমতো শিক্ষিত। অনেকে বিদেশ থেকে পড়াশুনো করে এসেছেন। আগে বড় কোম্পানিতে ছিলেন। তারা একেবারে পেশাদার। তাদের বেতন দিয়ে রাখা হয়।  সত্যি সত্যিই এই পরিকাঠামো নিয়ে বিজেপি যে কোনো পোস্ট ভাইরাল করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।

ভাববেন না, এটা কেবল বিজেপি করে। সব দলই তার ক্ষমতামতো করে।সকলেই পেশাদারদের সাহায্য নেয়। কোম্পানির সাহায্য নেয়। বিজেপি-র সাফল্য দেখে তারাও বুঝতে পেরেছে, সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার না করতে পারলে, মানুষের কাছে প্রতিদিন পৌঁছানো সম্ভব নয়। ।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউ বিশ্বের ৮১টি দেশকে নিয়ে ২০২০তে একটা সমীক্ষা করেছিল। তাতে দেখা গেছে, ৭৬টি দেশে রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে মিথ্যা সংবাদ ছড়ানো হয়।  সেটা এখন পেশাদাররা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে করেন।

ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়। ভোট এলেই ভারতে ফেক নিউজ নিয়ে প্রচুর অভিযোগ ওঠে। দুইটি তথ্য এখানে মনে রাখা দরকার। ভারতে স্মার্টফোন ব্যবহারকীরর সংখ্যা ৬৫ কোটি এবং দেশের ৮৮ শতাংশ অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা আছে। তৃতীয় বিষয়টা হলো, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলে স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। ফলে কোনো মেসেজ ভাইরাল করে দিতে পারলে, তা লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। আর মানুষ যেমন আগে ছাপার হরফে লেখাকে ধ্রুব সত্য মনে করত। এখন তেমনই মোবাইলে আসা ভিডিও ও লেখাকে অভ্রান্ত সত্য মনে করে। রাজনৈতিক দলগুলি, পেশাদাররা সেই সুযোগ নেয়। তারা সমানে চেষ্টা করে যায়, আংশিক সত্য, অর্ধসত্য ও মিথ্যা প্রচার করতে। ভিডিওতে কারচুপি করে ছেড়ে দিলে মানুষ সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হন। তাই প্রতিবার ভোটের আগে এই ধরনের একগুচ্ছ অভিযোগ আসে। আর একটা মিথ্যা খবরের পরিণতি কী হতে পারে, তা মুলায়ম-অখিলেশ চড়কাণ্ড থেকেই তো স্পষ্ট।

আসলে ছোটবেলা থেকেই তো আমাদের শেখানো হয়, মেনে নাও। প্রশ্ন করো না। যুক্তি দিয়ে বিচার কর না। কোনো বিশ্বাসে আঘাত কর না। নির্বিচারে মুখ বুজে মেনে নিলে সকলেরই লাভ। রাজনীতি থেকে ধর্ম, সব জায়গায় যারা ক্ষমতায় থাকেন, তারা বলেন, প্রতিবাদ করতে যেও না। প্রশ্ন করো না। আস্থা রাখ। আর এই সুয়োগে অনেক মিথ্যা সত্য হয়ে য়ায়। অনেক তথ্য উল্টে যায়। প্রচারে মিলা বস্তু তর্কে বহুদূর। তাই আমরা প্রশ্ন করি না।

রাজনীতির সঙ্গে নীতি থাকলেও বাস্তবে তা হলো ভোটের যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে কোনো নীতি নেই। ফলে মানুরযে মনে একটা ধারণা তৈরির জন্য যদি কিছু মিথ্যা প্রচারের আশ্রয় নিতে হয়, তাতেই বা অসুবিধা কোথায়? নীতিবাগিশরা, ইমানুয়েল কান্টের মতো দার্শনিকরা বলবেন, শুধু ফল ভালো হলেই চলে না, যে রাস্তা নেয়া হচ্ছে, সেটাও ভালো ও নৈতিক হওয়া দরকার। আমরা ওসব কথাকে থোড়াই কেয়ার করি।

আমরা তো মনে করি, সব ভালো যার শেষ ভালো। তাই এরকমই চলবে, বরং মিথ্যা প্রচার তেজি ঘোড়ার মতো দৌড়াতে থাকবে।

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ