চরম দক্ষিণপন্থিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিপাকে ম্যার্কেলের দল
- আপডেট সময় : ০১:১৫:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ১৫৬৫ বার পড়া হয়েছে
জার্মানির প্রধান বিরোধী দল সিডিইউ আঞ্চলিক পার্লামেন্টে চরমপন্থি এএফডি দলের সমর্থন নিয়ে একটি প্রস্তাব পাশ করে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ জার্মানির রাজনৈতিক জগতে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
গোটা ইউরোপ জুড়ে চরম দক্ষিণপন্থি শক্তির বাড়বাড়ন্তের মাঝে মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলি যতটা সম্ভব ভোটারদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করছে৷ কিন্তু একের পর এক নির্বাচন ও জনমত সমীক্ষায় চরমপন্থিদের প্রতি মানুষের সমর্থন বেড়েই চলেছে৷ এমন শক্তিকে ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে দূরে রাখতে নিজস্ব প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলি প্রায়ই একজোট হচ্ছে৷ জার্মানির চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি দলকেও এতকাল সেভাবে একঘরে রাখা হয়েছে৷ বাকি দলগুলি এএফডি-র সঙ্গে জোট সরকার গড়ার সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে৷ বিরোধী পক্ষে থেকেও সেই দলের সঙ্গে সহযোগিতার প্রস্তাব বার বার উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা সেই দলের কয়েকজন নেতার কার্যকলাপের উপর নজর রাখায় এতকাল সব দল আরো সতর্ক ছিল৷ কিন্তু এবার সেই প্রত্যয়ে চিড় ধরায় দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷
আপাতদৃষ্টিতে গুরুত্বহীন হলেও জার্মানির প্রধান বিরোধী ইউনিয়ন শিবিরের স্থানীয় শাখার এক সিদ্ধান্ত গোটা দেশে নজর কেড়েছে৷ পূবের টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের পার্লামেন্টে বিরোধী দল হিসেবে সিডিইউ জনসাধারণ ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির সম্পত্তির করের বোঝা কমাতে এক উদ্যোগ নিয়েছিল৷ শুধু উদারপন্থি এফডিপি দলের ভোট সেই উদ্যোগের জন্য যথেষ্ট হতো না৷ বৃহস্পতিবার এএফডি দলের সমর্থন নিয়ে সেই প্রস্তাব অনুমোদন করা সম্ভব হয়েছে৷
এমন ঘটনার পর জার্মানির রাজনৈতিক জগতে আলোড়ন পড়ে গেছে৷ চরম দক্ষিণপন্থি শক্তির সঙ্গে যে কোনো বোঝাপড়ার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছেন অনেক রাজনৈতিক নেতা ও বিশেষজ্ঞ৷ জনমত সমীক্ষায় বর্তমানে সিডিইউ-র পরেই এএফডি জনসমর্থন পাচ্ছে৷ আগামী বছর একাধিক রাজ্য নির্বাচনে সেই দল এমনকি সরকার সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়ে এমনকি গড়ার উদ্যোগ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ সমালোচকদের মতে, এমন অবস্থায় সিডিইউ-র মতো ‘দায়িত্বশীল’ দল নরম মনোভাব নিলে এএফডি জোট সরকার গড়ার সুযোগ পেতে পারে৷ বিদেশি ও ইউরোপ-বিদ্বেষী এই শক্তি একবার ক্ষমতায় এলে জার্মানির রাজনৈতিক জগতে বিপর্যয়েরও আশঙ্কা দেখছেন অনেকে৷
জাতীয় পর্যায়ে সাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ দল এএফডি-র সঙ্গে কোনো রকম সহযোগিতার সম্ভাবনা বার বার উড়িয়ে দিয়ে এসেছে৷ কিন্তু রাজ্য ও পৌর স্তরে অনেক নেতা এমন ছুতমার্গের বিরোধী৷ টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের সিডিইউ প্রধান মারিও ফোগ্ট আঞ্চলিক শাখার সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, বাস্তবে এই ভোটের ফলে বরং তাঁর দল এএফডি ভোটারদের সমর্থন ফিরে পাবে৷ তাঁর মতে, সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক কলাকৌশল দেখে বিরক্ত হয়ে পড়েছেন৷ তাঁরা চান, তাঁদের দুশ্চিন্তার কারণ দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক৷ ভোগ্টের মতে, এমন সব বিষয়কে মূলধন করে মানুষের সমর্থন আদায় করা সম্ভব৷ তিনি অবশ্য আবার জোর দিয়ে বলেন, তাঁর সিডিইউ দল এএফডি-র সঙ্গে কাজ করে না৷
সিডিইউ দলের প্রধান ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসও আঞ্চলিক শাখার সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, তাঁর দল ফেডারেল বা রাজ্য স্তরে অন্য দলের কাজ দেখে রাজনীতি করে না৷ বৃহস্পতিবারের ভোটাভুটি সত্ত্বেও ম্যার্ৎস এএফডির সঙ্গে সহযোগিতার সম্ভাবনা আবার উড়িয়ে দিয়েছেন৷
সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি ও পরিবেশবাদী সবুজ দল সিডিইউ দলের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে এই পদক্ষেপকে ‘শয়তানের সঙ্গে বোঝাপড়া’ হিসেবে বর্ণনা করেছে৷ বামপন্থি দল ডি লিংকে সিডিইউ-র সমালোচনা করে বলেছে, এএফডি-র সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তোলার পথে এগোচ্ছে এই দল৷
ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ