কবে স্থায়ী উপাচার্য পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়ে?
- আপডেট সময় : ১২:০২:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ১৭৯৫ বার পড়া হয়েছে
উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল ও রাজ্যের সংঘাত মিটছে না। সার্চ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে আদালত। দ্রুত কি স্থায়ী উপাচার্য পাবে এতগুলি বিশ্ববিদ্যালয়?
রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সংঘাত চরমে পৌঁছেছে। আচার্য তথা রাজ্যপাল একের পর এক অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন। সেই উপাচার্যদের স্বীকৃতি দিচ্ছে না রাজ্য সরকার। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা অচলাবস্থা দূর করা যাচ্ছে না যেহেতু রাজ্যের ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী কোনো উপাচার্য নেই।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সিদ্ধান্তকেচ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে রাজ্য। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি হয় বিচারপতির দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি সূর্যকান্তের বেঞ্চে। সর্বোচ্চ আদালত উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সার্চ কমিটির লক্ষ্যে
নিয়ম অনুযায়ী সার্চ কমিটিতে রাজ্যপাল, রাজ্য সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিনিধিরা থাকেন। শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই তিন পক্ষকে তিন থেকে পাঁচ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম সুপারিশ করতে হবে। সেই নামগুলির মধ্যে থেকে সুপ্রিম কোর্ট উপযুক্ত প্রতিনিধিদের বেছে নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করবে। মামলার পরের শুনানি ২৭ সেপ্টেম্বর।
গত ২১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট এক নির্দেশে বলেছিল, অবিলম্বে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। রাজ্য সরকারের অভিযোগ, বৈঠক করতে রাজ্যপাল আগ্রহ দেখাননি। তাকে চিঠি দিলেও জবাব মেলেনি। রাজ্য একই অভিযোগ জানিয়েছে ইউজিসি সম্পর্কে।
আচার্য ও রাজ্যের ভূমিকা
শুক্রবার দুই বিচারপতির বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছে, কেন আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও আচার্য তথা রাজ্যপাল উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে বৈঠকে বসেননি? শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর প্রতিক্রিয়া, “বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় যে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা দীর্ঘদিন চলতে পারে না, এটাই আমরা বলতে চেয়েছি। সুপ্রিম কোর্ট আমাদের সেই বক্তব্যে মান্যতা দিয়েছে।” বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করে, নিজেদের বশংবদ উপাচার্যদের দায়িত্ব দেয়ার চেষ্টা করেছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেই পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”
সুপ্রিম কোর্ট নিজেই সার্চ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়ায় সেই কমিটিতে রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ থাকার সম্ভাবনা নেই। শীর্ষ আদালতের নির্দেশের ফলে রাজ্য বিধানসভায় গত আগস্ট মাসে পাশ হওয়া বিলের গুরুত্ব থাকল না। তাতে বলা হয়েছিল, পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটিতে মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য সরকার ও উচ্চশিক্ষা দপ্তরের তিন প্রতিনিধি থাকবেন। বাকি দুজন প্রতিনিধি হবেন রাজ্যপাল ও ইউজিসি-র।
শিক্ষার মান অগ্রাধিকার
রাজ্য ও রাজ্যপাল মতবিরোধের ফলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ব্যক্তিগত ‘ইগো’র কথা ভুলে দুই পক্ষকে প্রতিষ্ঠান ও ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভেবে একসঙ্গে চলতে হবে। শিক্ষার মানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, তারা রাজ্যপালের সঙ্গে অবিলম্বে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।
এই অচলাবস্থার জন্য রাজ্যকেই দায়ী করছে বিরোধীরা। সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “সুপ্রিম কোর্টকে প্রশাসনের কাজ করে দিতে হচ্ছে। এটা খুবই লজ্জার। তা হলে প্রশাসন থাকার কী দরকার?” একই সুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, “দেশের অন্য কোনো রাজ্যে উপাচার্য নিয়োগের জন্য সুপ্রিম কোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে, এমনটা শুনেছেন। এটা আমাদের লজ্জা।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্টার রাজা গোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট আচার্য নিযুক্ত অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের নিয়োগকে অবৈধ বলেনি। বিচারপতিদের একজন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল অফিসার ছিলেন। সুতরাং আদালতের কাছে সমস্যাটা স্পষ্ট। তাই দ্রুততার সঙ্গে দিন দশকের মধ্যে নাম সুপারিশ করতে বলেছে বেঞ্চ।”
বিতর্কে ব্রাত্য
সামাজিক মাধ্যমে লেখা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর অন্য একটি মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান রাজ্যের পাঁচ অন্তর্বর্তী উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেন। এদের মধ্যে ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, সংস্কৃত ও বারাসত রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়, বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উপাচার্যদের ‘ক্রীতদাস’ বলে আক্রমণ করেন ব্রাত্য বসু।
কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন। উপাচার্যরাও এ ধরনের কথার নিন্দা করেছেন। যদিও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, “রাজনৈতিক নেতা হিসেবে এ কথা বলতেই পারি। বিজেপি এখানে দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তাই বক্তব্য প্রত্যাহার করছি না।”
এ ধরনের কাদা ছোড়াছুড়ি কয়েকমাস ধরে চলছে। উচ্চশিক্ষার অচলাবস্থায় ভুগছে ছাত্রসমাজ। তাদের সমস্যা কি এ বার মিটবে?
ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ