লিগ জয়ের হ্যাটট্রিক মহামেডানের
- আপডেট সময় : ১২:১৯:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ অক্টোবর ২০২৩
- / ১৭৪৯ বার পড়া হয়েছে
হারানো গরিমার কিছুটা উদ্ধার করল মহামেডান স্পোর্টিং। টানা তিনবার কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ জয় করল তারা। নয় দশক পর এই নজরকাড়া সাফল্য।
মহামেডানের সাফল্য
কলকাতার ফুটবল মানে তিন বড় প্রধান মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডান। কিন্তু বেশ দীর্ঘ সময় মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাব তাদের সেই কৌলীন্য খুইয়ে বসেছিল। বাকি দুই প্রধান দলের সঙ্গে লড়াইয়ে তারা পিছিয়ে পড়েছিল অনেকটা।
সেই দুঃসময় ক্রমশ কাটিয়ে উঠছে সাদা-কালো জার্সির দলটি। ১৯৮১ সালের পর তারা কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ জিততে পারেনি প্রায় চার দশক। আর সেই খরা কাটিয়ে তারা লিগ জয়ের হ্যাটট্রিক করল।
দু’বছর আগে কোভিড পরবর্তী সময়ে লিগ জেতে মহমেডান। শুক্রবার সুপার সিক্সের ম্যাচে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টসকে হারিয়ে শিরোপা পেল মহামেডান।
মোহনবাগানকে হারিয়ে জয়
কলকাতা লিগে বিদেশি ফুটবলার ছাড়াই দল গড়তে হয়। তাই এই প্রতিযোগিতা বাংলা ও দেশের অন্যান্য রাজ্যের ফুটবলারদের মেলে ধরার সেরা মঞ্চ। তাকে কাজে লাগলেন সাদা-কালো শিবিরের ডেভিড, লালরেমসাঙ্গা, তন্ময়রা।
কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে খেলার ১৩ মিনিটে গোল করে মহমেডানকে ১-০ এগিয়ে দেন লালরেমসাঙ্গা। ৩৭ মিনিটে ব্যবধান ২-০ করেন ডেভিড। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে গোলের লক্ষ্যে ঝাঁপায় মোহনবাগান। মহামেডানের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের টেক্কা দিতে পারেননি সবুজ-মেরুনের ফরওয়ার্ডরা। আন্দ্রে চেরনিশেভের প্রশিক্ষণে থাকা মহমেডান জয় ছিনিয়ে নেয়।
লিগের গ্রুপ পর্বে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে এগিয়ে থেকেও ড্র করেছিল মহমেডান। সুপার সিক্সে জয় হাতছাড়া হওয়ার সেই আফসোস মিটিয়ে নিল সাদা-কালো। তাদের পরের লক্ষ্য আই লিগ জয়। সেই শিরোপা পেলে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে খেলার ছাড়পত্র পেয়ে যাবে মহমেডান।
জয়ের কারিগর
মহমেডানের লিগ জয়ের সম্ভাবনা ছিল প্রবল। ম্যাচের শেষে সমর্থকদের উল্লাস ছিল দেখার মতো। ২১টি গোল করা মিজোরামের স্ট্রাইকার ডেভিড লাললানসাঙ্গাই ছিলেন জনতার নয়নের মণি। এদিনও তিনি গোল করেছেন।
ডেভিড বলেন, “কখনো মনে হয়নি বড় ম্যাচ নিয়ে চাপে আছি। সবাই ভালো খেলেছে। মিলিত প্রচেষ্টায় জয়।” দেশের প্রথম সারির প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার ডেভিডের স্বপ্ন ভারতের জার্সি গায়ে চাপানো।
সাফল্যের নেপথ্যে
যে দলটি খেতাব জিতল, তাদের ফুটবলারদের সাদা-কালো জার্সি পরানোর পিছনে বড় অবদান মেহরাজউদ্দিন ওয়াদুর। কাশ্মীরি এই ফুটবলার কলকাতার বড় দলে খেলেছেন। মেহরাজের প্রশিক্ষণে ৭-০ গোলে জয় দিয়ে লিগ অভিযান শুরু করেছিল এই ক্লাব। সেই ধারাতেই এসেছে চূড়ান্ত সাফল্য। মহমেডান দল থেকে পরে তাকে সরে যেতে হয়।
লিগ জয়ের উৎসবের মধ্যে মেহরাজের ভূমিকার কথা স্মরণ করছেন ক্লাবের শীর্ষ কর্তারা। তাদের একজন বেলাল আহমেদ বলেন, ‘‘মেহরাজ ভাই ছিল বলেই এমন একটা দল করা গিয়েছে, আজ সদস্য-সমর্থকরা আনন্দ করতে পারছেন।”
সামাজিক মাধ্যমে দলকে শুভকামনা জানাতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছেন মেহরাজউদ্দিন। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন চেরনিশভের সহকারী সৈয়দ রহমানও। মেহরাজ ও চেরনিশভের মাঝের সময়টুকু দল চালিয়েছেন রহমানই। তাকেই মূল কৃতিত্ব দিয়েছেন মুখ্য প্রশিক্ষক বিদেশি চেরনিশভ।
দেশীয়দের উত্থান
ভারতীয় ফুটবলে এখন বিদেশিদের দাপট, দেশের তারকা হাতে গোনা। তারই মধ্যে শুধু দেশীয় ফুটবলার নিয়ে খেলা হয়েছে কলকাতা লিগে। এটাকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন সাদা-কালোর অন্যতম সেরা খেলোয়াড় তন্ময় ঘোষ।
তিনি বলেন, দেশের ছেলেরা ভালো খেলছে, “এটা বড় কথা। অনেকে সুযোগ পেয়েছে এই লিগে। নজর কেড়েছে কেউ কেউ। এরা কতদিন এই সাফল্য ধরে রাখতে পারে, সেটাও দেখতে হবে।”
লিগজয়ী মহমেডানের অধিনায়ক সামাদ আলি মল্লিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, “খুব আনন্দ হচ্ছে এই জয়ে। আমাদের আরো ভালো খেলতে হবে। সামনে আই লিগ আছে। তাতে দেশের ছেলেরা ভালো খেলার আত্মবিশ্বাস পাবে।”
আপ্লুত প্রাক্তনীরা
দলের ফুটবল সচিব, জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস উচ্ছ্বসিত। একসময় নিজেও সাদা-কালো জার্সিতে খেলেছেন। তিনি বলেন, “প্রধানের তকমা থাকলেও অন্য দুই প্রধানের থেকে পিছিয়ে পড়ছিল মহমেডান। খুবই সংগ্রামের মধ্যে গিয়েছে একটা সময়। সেই পর্ব পার করে দল এগোচ্ছে। তাতে বাঙালি ও ভারতীয় ফুটবলারদের ভূমিকা থাকছে।”
তন্ময়, সামাদের মতো অভিষেক হালদার ও অন্যান্য বাঙালিরা কি আই লিগের ময়দানে বিদেশিদের পাশে ঝকঝকে দেখাবেন নিজেদের প্রতিভায়, নজর থাকবে সেদিকে।
ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ