তামা চুরির জেরে নাজেহাল জার্মান ব্যবসা
- আপডেট সময় : ১২:৩৩:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ অক্টোবর ২০২৩
- / ১৭০৫ বার পড়া হয়েছে
জার্মানিতে নানা ধরনের ধাতু চুরি করছে কয়েকটি অপরাধী চক্র৷ নাজেহাল হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন ব্যাবসায়িক সংস্থাদের৷ তামার দাম বাড়ায় আরো জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি৷
জার্মান রেল সংস্থা ডয়চে বানের সময় গত কয়েক বছর ধরেই ভালো যাচ্ছে না৷ কয়েক দশক ধরে ঠিকঠাক মেরামতের কাজ না হওয়ায় অবকাঠামোর বেহাল দশা, অর্থায়নেও তেমন সুখবর আসছে না৷
তার ওপর ২০২২ সালে ডয়চে বানের প্রায় ৭০ লাখ ইউরোর লোকসান হয়েছে তামা চুরির বাড়বাড়ন্তের ফলে, জানাচ্ছে জার্মান সংবাদপত্র হান্ডেলসব্লাট৷ এবছর, তামা চুরির ফলে দুই হাজার ৬৪৪টি ট্রেনের যাত্রা সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ৭০০ ঘণ্টা বেশি, জানাচ্ছে এই সংবাদপত্রটি৷
অপরাধীরা কেবল ডাক্ট ভেঙে তামা বা অন্যান্য দামি ধাতুচুরি করে, যা শুধু যাত্রীদের হয়রানির কারণই নয়, এমনকি দেশে সরবরাহ প্রক্রিয়াতেও তার প্রভাব পড়ে৷ ঘন ঘন ট্রেন দেরি হবার কারণে যাত্রীরাও হতাশ হচ্ছেন৷
কিন্তু এই বিপাকে শুধু ডয়চে বানই না, বিভিন্ন ভবন নির্মাণের জায়গা থেকেও চুরি হচ্ছে এসব মূল্যবান ধাতু৷ বাদ পড়ছে না তামার প্রলেপ দেওয়া গির্জার ছাদও!
সবচেয়ে নজরকাড়া তামা চুরির ঘটনা ঘটে হামবুর্গের তামা উৎপাদক ও পুনর্ব্যবহারকারী সংস্থা অরুবিসের সঙ্গে৷ সংস্থাটির পক্ষে জানানো হয়, প্রায় দু’শ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের তামা চুরি গেছে৷
তামা: সরবরাহ চালাতে গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল
আগস্ট মাসের শেষে যখন এই চুরির কথা প্রকাশ্যে আসে, অরুবিস জানায় যে এর পেছনে কাজ করছে একটি অপরাধী চক্র৷ ইউরোপের সবচেয়ে বড় তামা উৎপাদক এই সংস্থাটি জানায় যে এই চুরির ফলে বার্ষিক লাভের টার্গেট থেকে অনেকটাই দূরে তারা৷
বৈদ্যুতিক প্রযুক্তিতে তামার গুরুত্ব অনেকটাই, কারণ কার্বন নিউট্রাল হওয়ার জন্য বেশ কিছু খাতে তামার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে বলে জানালেন আর্থ রিসোর্স ইনভেস্টমেন্টের প্রধান ইওয়াখিম বেরলেনবাখ৷ তিনি আরো মনে করান যে ভবিষ্যতে আরো বাড়বে তামার ব্যবহার ও চাহিদা৷
ডয়চে ভেলেকে বেরলেনবাখ বলেন যে ভবিষ্যতে তামার দাম কতটা বাড়েতা নির্ভর করছে চীন ও ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে জীবনযাপনের মানের ওপর৷ যত এই মান উন্নত হবে, তত বাড়বে গাড়ি, বাতানুকূল যন্ত্রের মতো প্রযুক্তির ব্যবহার, যার জন্য তামা অত্যন্ত জরুরি কাঁচামাল৷
অন্যদিকে, তামার বাড়ন্ত চাহিদার সাথে পাল্লা দিতে পারচে না তামার উৎপাদন৷ চিলে বা ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর মতো দেশে তামার পাশাপাশি রয়েছে ভূরাজনৈতিক জটিলতাও৷ ফলে, নতুন করে তামা খননে বিনিয়োগ তখনই আসবে যখন বিনিয়োগ থেকে লাভের সুযোগ থাকবে৷
কোথায় যাচ্ছে চুরি হওয়া তামা?
অরুবিসের হিসাবের খাতায় কলমে তামা চুরির বিষয়টি লুকিয়ে থাকায় বেশ অনেক দিন ধরা পড়েনি৷ তাছাড়া, বিশাল পরিমাণে চুরি হওয়া তামা ইউরোপের পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের বাজারে বিক্রি করা সহজ নয়, জানান জার্মান ধাতব পণ্য ব্যবসাযী সংস্থার রালফ শ্মিটৎজ৷
জার্মান সংবাদপত্র টাগেসশ্পিগেলকে তিনি বলেন, ‘‘কী চুরি হচ্ছে তা ব্যবসায়ীরা জানেন৷ এই একই অবস্থা পাশের দেশ পোল্যান্ডেও৷ চুরি হওয়া তামার বড় অংশ ইউরোপে বিক্রি হয় না৷ আমার ধারণা, বেশিরভাগই কন্টেনারে বিদেশে চলে যায়৷”
তামার বিকল্প?
জার্মানিতে তামা চুরির বিষয়ে বেরলেনবাখ বলেন, ‘‘এই তামা চুরির ঘটনা আমাকে সাউথ আফ্রিকার কথা মনে করাচ্ছে৷ এক সময় এমন ছিল যখন জোহানেসবুর্গের পাড়ায় সবক’টি টেলিফোন লাইন তুলে ফেলা হয়েছিল৷ নিশ্চয়ই কোনো সুপরিকল্পিত চক্র ছিল যাদের ভালো যোগাযোগ ছিল পেশাদার ক্রেতাদের সাথে৷”
বেরলেনবাখের মতে এখনও তামার কেবল বা তারের কোনো বিকল্প এই মুহূর্তে নেই, কারণ এটা বিজ্ঞানের বিষয়৷
ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ