পটুয়াখালীর কলাপাড়া রাখাইন পাড়ায় পালিত হলো প্রবারণা পূর্ণিমা
- আপডেট সময় : ১১:৪৯:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর ২০২৩
- / ১৬৬৩ বার পড়া হয়েছে
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা পালিত হলো পটুয়াখালীর কলাপাড়া রাখাইন পাড়াগুলোতে। দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষ্যে রাখাইন পাড়াগুলোর প্রতিটি বিহারে আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠনাদির মধ্যে ছিল সকালে বিহারে ধর্মীয় মৈত্রী সূত্রপাঠ, বুদ্ধপূজা, বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা, ধর্মীয় আলোচনা, সন্ধ্যায় প্রদীপ পূজা ও ফানুস উত্তোলন।
কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটার শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, গোড়া আমখোলা পাড়া বিজয়রামা বৌদ্ধ বিহার, মিস্ত্রীপাড়া বৌদ্ধবিহারে ফানুস উড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয় দিন কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের বেতকাটা পাড়ায় বাহারি ডিজাইনের ফানুস উড়ানো অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক এবং বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার প্রেসিডেন্ট নিউ নিউ খেইন ও কলাপাড়া উপজেলা ও পৌর কৃষক লীগের অন্যান্য নেতাকর্মীরা। এর আগে অতিথিদের বিন্নী চালের পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় ও রাখাইন তরুণীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। ফানুস উড়ানো দেখার জন্য রাখাইন পল্লীর আশেপাশের গ্রাম থেকে আসা হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাখাইনরা যাতে এ উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারে, সে জন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া কলাপাড়া উপজেলার ২৪ টি রাখাইন মন্দিরে প্রবারণা উৎসব পালন করার জন্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
এই অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক নিউ নিউ খেইন। তিনি বলেন, ফানুস উড়ানো এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, ঈদে মিলাদুন্নবী, জন্মাষ্টমী, শারদীয় দুর্গোৎসব, বুদ্ধপূর্ণিমা, বড়দিন ইত্যাদি ধর্মীয় অনুষ্ঠান কোনো বিশেষ ধর্মের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকে না, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী-নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ও উপস্থিতিতে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে উদযাপিত হয়।
জাতীয় চেতনায় ও শান্তি প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহবানে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে সব ধর্ম-বর্ণ গোষ্ঠীর মানুষ সাড়ম্বরে পালন করে প্রতিটি ধর্মীয় উৎসব। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের দেশের সকল ধর্মের মানুষ একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে, তাই সকলে সমান অধিকার নিয়ে এদেশে বসবাস করবে।
আমার মনে পড়ে ছোটবেলার প্রবারণা পূর্ণিমার কথা, এই দিনে যখন ফানুস উড়ানো হতো তখন আমাদের রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে স্থানীয় মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরাই এই অনুষ্ঠান বেশী উপভোগ করতো। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগের কথা, আমরা দল বেধে হিন্দু সম্প্রদায়ের লক্ষ্মীপূজায় প্রতিবেশিদের বাসায় যেতাম নারিকেলের নাড়ু খেতে। রোজার ঈদে আমাদের বাসায় সেমাই আসতো বিশ্বাস বাড়ি আর গাজী বাড়ি থেকে, সে দৃশ্যগুলো এখনো মনে পড়ে। এভাবেই কলাপাড়াবাসী উপভোগ করেছে একে অপরের ধর্মীয় উৎসব। আমরা কখনোই অনুভব করি নাই আমরা এদেশে সংখ্যালঘু ও ভিন্ন এক জাতি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্লোগানকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে। গত ১৫ বছরে প্রধানমন্ত্রীর নিরলস প্রচেষ্টায় যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, আগামী ৫ বছরে এরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে টেকসই রূপ দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য।
আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর একবছর পূর্ণ হয়েছে। এ সেতু শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, উন্নয়নের প্রবেশদ্বারও। শিল্প, সংস্কৃতি, কৃষি, পর্যটনসহ নানা ব্যবসার প্রসার ঘটেছে এই সেতুর মাধ্যমে। এ সেতুর ফলে বদলে গেছে দক্ষিণের ২১ জেলার কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতির চিত্র। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রথমবারের মতো দক্ষিণাঞ্চলের সবজি রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপে। ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রির ফলে লাভবান হচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা পদ্মা সেতুর কল্যাণে বরিশাল বিভাগের কৃষি, প্রাণিসম্পদ খাতের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। আগে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতে পথেই অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে যেতো। এখন আর এমনটি হয় না। সুতরাং পদ্মা সেতুর কল্যাণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনে আমূল পবির্তন এসেছে। ভবিষ্যতে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে আরো সমৃদ্ধ করে বিশ^ দরবারে পরিচিত করে এদেশের মানুষের কল্যাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশে থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাবার দৃঢ় অঙ্গীকার করছি।