‘শিল্পী চক্রবর্তী আর এফডিসিতে আসবেন না’
- আপডেট সময় : ০৪:০৮:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪
- / ১৭৬১ বার পড়া হয়েছে
ঢালিউডের অন্যতম সফল নির্মাতা ও এফডিসির নিয়মিত মুখ শিল্পী চক্রবর্তী না ফেরার দেশে চলে গেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে প্রয়াত হন এই নির্মাতা।
রাতে তার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সহকর্মীদের মধ্যে শোকের সৃষ্টি হয়। পরে তার মৃতদেহ শেষ শ্রদ্ধার জন্য শুক্রবার প্রিয় কর্মস্থল এফডিসির পরিচালক সমিতির প্রাঙ্গণে আনা হয়। সকাল ১০টায় এফডিসিতে আনা হলে অনেক সহকর্মী তাকে শেষবারের মতো দেখতে ছুটে আসেন।
এ সময় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সূচনা হয়। পরে এদিন বিকালে পোস্তগোলা শ্মশানঘাটে তার শবদেহ সৎকার করা হয়। শবদেহের পাশে এ সময় তার ভাগিনা সঙ্গীত পরিচালক ইমন সাহা ও পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাসসহ তার নিকটজন উপস্থিত ছিলেন।
তবে এমন পরিবেশ পরিস্থিতিতেও গণমাধ্যম কর্মীদের অনুপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। বাচসাস দপ্তর সম্পাদক আহমেদ তেপান্তরকে ছাড়া কাউকে এ সময় সেখানে দেখা যায়নি বলে একাধিক পরিচালক অনুযোগ করেন। এ নিয়ে পরিচালকদের মধ্যে হাতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের বক্তব্য একজন শিল্পী চক্রবর্তী কি এতোটাই নামহীন যে তার মৃত্যুর খবর এবং শেষ শ্রদ্ধার খবরেও সাংবাদিকদের অনুপস্থিত থাকতে পারে। আমরা জানি শুক্রবার।
এদিন এফডিসি বন্ধ থাকে; তা সত্ত্বেও প্রত্যাশা ছিলো তার সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক ছিলো তারা অন্তত আসতে পারতেন; কিন্তু তাদের অনুপস্থিতি, খবর প্রকাশে অনীহা আমাদের হতাশ করেছে। ভুলে গেলে চলবে না এই এফডিসিতে সবচেয়ে নিয়মিত মুখ শিল্পী চক্রবর্তী আর আসবেন না।
এদিন তাকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে এফডিসিতে এসেছিলেন- পরিচালক সমিতির মহাপরিচালক শাহীন সুমন, যুগ্ম মহাসচিব কবিরুল ইসলাম রানা, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক ছটকু আহমেদ, পরিচালক ও এডিটর গিল্ডের সভাপতি আবু মুসা দেবু, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, সাইদুর রহমান সাঈদ, ড. মতিন রহমান, ওয়াকিল আহমেদ, সাফি উদ্দিন সাফি, এম এন ইস্পাহানি।
শাহ আলম মন্ডল, দেবাশীষ বিশ্বাস, এস এ হক অলিক, সঙ্গীত পরিচালক ইমন সাহা, আনোয়ার সিরাজী, এম এ আউয়াল, সালাউদ্দিন, বজলুর রাশেদ চৌধুরী, রেজা হাসমত, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সায়মন তারিক, আনোয়ার শিকদার টিটন, এন এস বুলবুল বিশ্বাস, পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, প্রযোজক সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, অভিনেতা নানা শাহ প্রমুখ। এ সময় শিল্পীর বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিটের নিরবতা পালন করা হয়।
এদিকে শিল্পী চক্রবর্তীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। এছাড়াও তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, চিত্রগ্রাহক সমিতি, এডিটর গিল্ড, উপমহাদেশের কিংবদন্তী অভিনেত্রী শবনম।
শবনম শোক জানিয়ে বলেন, ‘ও অনেক দিন ধরেই বলছিলো দেখা করবে। কিন্তু আর দেখা হলো না। আর হবেও না। ও চলে গেলো, যে পথে একদিন আমাদের সবাইকে যেতে হবে। অনন্তলোকে ভালো থেকো শিল্পী। নামের দ্যুতিতে স্বর্গকে রাঙিয়ে তোলো।
শিল্পী চক্রবর্তীর কর্ম জীবন শুরু হয় পরিচালক আজিজুর রহমানের সহকারী হিসেবে। এরপর তিনি সত্য সাহা, দীলিপ বিশ^াস, সিবি জামানের মতো গুণী নির্মাতাদের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। শিল্পী চক্রবর্তী পরিচালিত প্রথম ছবি ‘মীমাংসা’ মুক্তি পায় ১৯৮৩ সালে। তার পরিচালনার অন্যান্য ছবির মধ্যে রয়েছে চরমপত্র, আমার আদালত, রঙ্গিন উজান ভাটি, রঙিন বিনি সুতার মালা, সবার অজান্তে, অন্তরে ঝড়, তোমার জন্য পাগল। প্রখ্যাত পরিচালক দীলিপ বিশ্বাস এবং সংগীত পরিচালক সত্য সাহা ছিলেন তার ভগ্নিপতি। সুরকার ইমন সাহা এবং পরিচালক ও উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাসের মামা তিনি।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাত ৮টা নাগাদ দ্বিতীয়বার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। মৃত্যুকালে নির্মাতার বয়স ছিলো ৭১ বছর। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে রেখে যান। ১৯৫৩ সালের ১৯ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শিল্পী চক্রবর্তী।