পিত্তথলিতে পাথর কেন হয়?
- আপডেট সময় : ০৩:৫৮:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৪
- / ১৫৭৯ বার পড়া হয়েছে
পিত্তথলিতে পাথর একটি সাধারণ সার্জিক্যাল সমস্যা। অনেকেই পিত্তথলিতে পাথর হলে চিন্তায় পড়ে যান, এটি কি অপারেশন করব নাকি ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করব। অপারেশন করলে সেটি কিভাবে করব-ল্যাপরোস্কপির মাধ্যমে করব, নাকি কেটে করব-এই অপারেশন করাতে হলে কি বিদেশে যেতে হবে; নাকি দেশেই এটির অপারেশন সম্ভব? এটি কি যে কোনো সার্জন করেন, নাকি এর জন্য ল্যাপরোস্কপি সার্জনের কাছে যেতে হবে? ল্যাপরোস্কপির মাধ্যমে অপারেশন করলে কি কিছু পাথর থেকে যাবে? এটা কি কেটে করাটা ভালো? এ রকম নানাবিধ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।
রোগীদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই, পিত্তথলিতে যদি কারো পাথর হয়ে থাকে, আজকাল প্রত্যেকটি জেনারেল সার্জন বিভাগে যারা কাজ করে থাকেন, তারা ল্যাপরোস্কপির মাধ্যমেই কিন্তু চিকিৎসা করে থাকেন। অধিকাংশ জেনারেল সার্জনই হচ্ছে ল্যাপরোস্কপি সার্জন। তারা প্রত্যেকেই এ টেকনিকটি আয়ত্ত করেছে এবং ল্যাপরোস্কপির (Laparoscopy) মাধ্যমে যদি পিত্তথলির পাথর অপারেশন করা যায়, সেক্ষেত্রে পেটে কাটতে হয় না, পেটে চারটি ছোট ছোট ছিদ্র করে ল্যাপরোস্কপি যন্ত্রের মাধ্যমে আমরা পিত্তথলিটা পাথরসহ বের করে নিয়ে আসি, এতে করে পেটের ভেতরে কিন্তু পাথর থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। দক্ষ সার্জন যারা ল্যাপরোস্কপিতে অত্যন্ত অভিজ্ঞ তারা এই সার্জারিটা করে থাকেন। বাংলাদেশে অনেক জায়গায় এই সার্জারিটা হয়ে থাকে, আমরাও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে শতভাগ ট্রেডেবেলেটি মেইন্টেন করে, এই কাজগুলো করে থাকি। এতে করে আমাদের রোগীরা অপারেশনের পরবর্তী দিনই বাসায় চলে যেতে পারেন, কোনো কাটা-ছেঁড়া করতে হয় না এবং অপারেশন পরবর্তী সময়ও কিন্তু ওই ল্যাপরোস্কপি সাইডে কোনো ধরনের ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনাও একেবারেই কম থাকে।
আজকাল পিত্তথলির পাথর অপারেশন কেটে করার তেমন কোনো প্রয়োজন হয় না। যদি দেখা যায় কারো পিত্তথলিতে, পিত্তনালীতে অনেকগুলো পাথর হয়েছে কিংবা বিভিন্ন রকম জটিলতা রয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কেটে অপারেশনের প্রয়োজন হয়। কারো যদি পিত্তনালীতেও পাথর থাকে তাদের ক্ষেত্রেও কিন্তু কাটা-ছেঁড়ার প্রয়োজন হয় না। মুখ দিয়ে একটা যন্ত্র প্রবেশ করিয়ে ইআরসিপি সেই পিত্তনালী থেকে পাথর নিয়ে আসা হয়। অনেক ইনডোস্কোপিক সার্জন আমাদের রয়েছে, তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এ কাজটি করে থাকেন। আমরা যারা সার্জন রয়েছি, তারা ল্যাপরোস্কপির মাধ্যমে পিত্তথলির অপারেশন করে থাকি। এই অপারেশনের জন্য আপনার বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, পিত্তথলির পাথর ওষুধে যাবে না; এই পাথর যদি দীর্ঘদিন থেকে যায়, আপনি যদি নানাবিধ অহেতুক ভয় পেয়ে থাকেন, তাহলে দেখা যাবে অসংখ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে পিত্তথলিতে যে পাথরটা রয়েছে, সেটা পিত্তনালীতে চলে যেতে পারে অথবা পিত্তথলির বিভিন্ন রকম ইনফেকশন হতে পারে। যেটাকে আমরা এমপ্লায়েমা গলব্লাডার বলে থাকি।
দীর্ঘদিন যদি পিত্তথলিতে পাথর থেকে থাকে, তাহলে এই পাথরের জন্য (যদিও সংখ্যায় খুব কম) মেলোগেসি বা টিউমারও হতে পারে। কাজেই পিত্তথলিতে পাথর হওয়ায় যদি আপনার ব্যথা থাকে, তাহলে এটি নিয়ে বসে থাকবেন না; অহেতুক দুশ্চিন্তা করবেন না, কারো দ্বারা বিভ্রান্ত হবেন না-অনেকেই যারা পিত্তথলির পাথর ল্যাপরোস্কপির মাধ্যমে অপারেশন করতে পারেন না কিংবা যে সমস্ত সেন্টারে হয় না, অনেকেই হয়তো রোগীদের বিভিন্নভাবে ভুল বুঝিয়ে করে থাকে। যেমন : ল্যাপরোস্কপির মাধ্যমে অপারেশন করলে কিছু পাথর থেকে যায়। এটি অত্যন্ত বিভ্রান্তিমূলক তথ্য। ল্যাপরোস্কপি হচ্ছে আজকের পৃথিবীতে অত্যন্ত আধুনিক চিকিৎসা। অনেক সার্জনই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই সার্জারিটা করে থাকেন; এটি করার জন্য কোনো বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, আলাদা করে কোনো ল্যাপরোস্কাপি সার্জন খোঁজারও দরকার নেই। প্রত্যেক জেনারেল সার্জনই, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই সার্জারিটা করে থাকেন। জেলা সদরে কিংবা বড় বড় সেন্টারে এই কাজগুলো সার্জনরা অত্যন্ত নিরাপদেই করতে পারেন।
ডা. মো. নাজমুল হক মাসুম
জেনারেল ও কোলো-রেকটাল সার্জন
সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ