অনুপ্রবেশ রুখতে জার্মান সীমান্তে বাড়তি নিয়ন্ত্রণ
- আপডেট সময় : ০৪:৩১:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ১৬৬২ বার পড়া হয়েছে
শরণার্থী সংকট সামলাতে নাজেহাল জার্মান সরকার সীমান্তে বাড়তি নিয়ন্ত্রণ চালু করে আদম ব্যবসায়ীদের চাপে ফেলতে চাইছে৷ ইউরোপীয় স্তরে আশ্রয় সংক্রান্ত আইনের সংস্কারের পথেও বাধা দূর করতে চান চ্যান্সেলর শলৎস৷
শরণার্থীদের ঢল শুধু ইটালির মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহির্সীমানার দেশের মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে না, ভূমধ্যসাগর থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও জার্মানির মতো দেশ বিষয়টিকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ সংকটের মুখে পড়ছে৷ সরকারি সূত্র অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রায় ৭৮ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ তাছাড়া শুধু আগস্ট মাসেই গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৬ শতাংশ বেশি মানুষ জার্মানিতে প্রবেশ করেছেন৷ নথিভুক্ত এই সংখ্যার বাইরে আরো মানুষ প্রবেশ করে থাকতে পারেন বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন৷
চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের তিন দলের জোট সরকারের শরিকদের মধ্যে মতপার্থক্য শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় বাধা সৃষ্টি করছে৷ মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলির উপর ভরসা হারিয়ে আরো বেশি মানুষ চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি দলের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে৷ আসন্ন রাজ্য স্তরের নির্বাচনগুলিতে এই দলের আরো উত্থানের আশঙ্কা বাড়ছে৷ জার্মান সংসদের প্রধান বিরোধী ইউনিয়ন শিবিরও এএফডি-র চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ শিবিরের অন্যতম নেতা ও বাভেরিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডার শরণার্থী গ্রহণের ঊর্দ্ধসীমা স্থির করার বিতর্কিত প্রস্তাব সম্বল করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছেন৷
এমন পরিস্থিতিতে জার্মান সরকার কিছু একটা করে দেখাতে বদ্ধপরিকর৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার বুধবার বলেছেন, যে চলতি সপ্তাহেই পোল্যান্ড ও চেক সীমান্তে বাড়তি নিয়ন্ত্রণ শুরু করবে৷ উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকেই বাভেরিয়া ও অস্ট্রিয়া সীমান্তে এমন নিয়ন্ত্রণ চালু আছে৷ তাঁর মতে, ইইউ-র বহির্সীমানায় সুরক্ষার উন্নতি করতে না পারলে রাষ্ট্রজোটের ভেতরের সীমানাগুলি বিপদের মুখে পড়বে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নতুন পদক্ষেপের মাধ্যমে আদম ব্যবসায়ীদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা চালানো হবে৷ জার্মানিতে প্রবেশ করা প্রায় এক-চতুর্থাংশ শরণার্থীদের জন্য এমন দুষ্কৃতিরা দায়ী বলে তিনি দাবি করেন৷ তাদের ধোঁয়াসায় রাখতে ফেসার সরকারের নতুন পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাচ্ছেন না৷ মঙ্গলবার ভোরে জার্মানির একাধিক অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ফেডারেল পুলিশ পাঁচ জন সিরীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে৷
ইউরোপীয় স্তরেও শরণার্থী সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে ঐকমত্য অর্জন করা সহজ হচ্ছে না৷ বৃহস্পতিবার ইইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা ব্রাসেলসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন৷ রাজনৈতিক আশ্রয় ব্যবস্থার সংস্কারের দুটি আইনের খসড়া আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে৷ বিশেষ করে হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র ও অস্ট্রিয়া অতীতের ঐকমত্য অগ্রাহ্য করে বর্তমান পরিস্থিতিতে আরো কড়া পদক্ষেপের জন্য চাপ দিচ্ছে৷
জার্মানির সরকারি জোটের মধ্যে মতপার্থক্য সত্ত্বেও চ্যান্সেলর শলৎস নিজের ক্ষমতার জোরে এক সংকটকালীন বিধির প্রস্তাবের ক্ষেত্রে জার্মানির আপত্তি তুলে নিয়েছেন বলে একাধিক সংবাদ মাধ্যম দাবি করছে৷ অর্থাৎ সবুজ দলের আপত্তি সত্ত্বেও ব্যতিক্রমি পরিস্থিতিতে শরণার্থীদের সপরিবারে ৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত গৃহবন্দি করে রাখার প্রস্তাবের পথে জার্মানি বাধা দেবে না৷ সে ক্ষেত্রে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট রাজনৈতিক আশ্রয়ের সংস্কার সংক্রান্ত আইনের বাকি অংশগুলি নিয়ে আবার তর্কবিতর্ক শুরু করতে পারে৷ ইউরোপীয় স্তরে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য সম্ভব হলে আখেরে সব দেশেরই এই সংকট মোকাবিলা করতে সুবিধা হবে বলে সংস্কারের প্রবক্তারা দাবি করছেন৷
ডয়চে ভেলে