০১:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক যোদ্ধাকে হারালো দেশ

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৬:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ জুন ২০২০
  • / ১৫৬৬ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কামাল লোহানী–এদেশের সাংবাদিকতা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ; স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনের সামনের সারির যোদ্ধা ছিলেন তিনি। একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, আজন্ম বাঙালিয়ানার ধারক কামাল লোহানী, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। তার মৃত্যুতে দেশ হারালো একজন মুক্তিসংগ্রামী, সাংবাদিক ও সংস্কৃতি কর্মীকে।

কামাল লোহানী, বিজয়ের খবর এসেছিল যার কণ্ঠে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের বিজয়ের খবর বেতারে কামাল লোহানীই প্রথম পড়েছিলেন।

আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী। ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন জন্ম নেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার খান সনতলা গ্রামে। শিশুকালেই মাতৃহারা কামাল ১৯৪৮ সালে চলে আসেন পাবনায়। ভাষা আন্দোলনের বছর পাস করেন মাধ্যমিক পরীক্ষা। সে সময় থেকেই রাজনীতিকে পান বন্ধু হিসেবে। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তিনি প্রচলিত শিক্ষার ইতি টানেন। রাজনীতি, সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতি চর্চায় জীবনের মানে খুঁজে নেন।

ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, বাঙ্গালীর প্রতিটি অর্জনে ছিলেন নির্ভিক সেনানী। আপদমস্তক অসাম্প্রদায়িক কামাল লোহানী, এ দেশের ঐতিহাসিক প্রায় সব ঘটনার সঙ্গে ছিলেন সম্পৃক্ত । প্রথম গ্রেপ্তার হন ১৯৫৩ সালে। এরপর একাধিকবার তাঁর জায়গা হয় জেলখানায়। ৫৪তে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে কাজ করায় কারাবরণ করেন। ৫৫ তে বাড়ি ছেড়ে রাজধানীর পথে পা বাড়ান, শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। মার্ক্সবাদী কামাল লোহানী যোগ দেন সাংবাদিকতায়। পাশাপাশি এ বছরই ন্যাপে যোগ দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি হলে আত্মগোপনে যান তিনি ।

পাকিস্তান সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছেন। ছায়ানট, উদীচী, ক্রান্তিসহ বহু সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ষাটের দশক থেকে রাজনীতি আর সংস্কৃতি যখন পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলেছিল, তখন তিনি ছিলেন সেই বন্ধনের একজন রূপকার। ছায়ানট সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাড়ে চার বছর কাটানোর পর নিজেই ১৯৬৭ সালে গড়ে তোলেন ‘ক্রান্তি’ নামে সাংস্কৃতিক সংগঠন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় কামাল লোহানী স্বাধীন বাংলা বেতারের সংবাদ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ‘দৈনিক জনপদ’ নামে একটি নতুন পত্রিকায় যোগ দিয়ে আবার ফিরে আসেন সাংবাদিকতায়। ১৯৭৪ সালে ‘বঙ্গবার্তা’, এরপর ‘দৈনিক বাংলার বাণী’ পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৭৭ সালে রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক বার্তা’র নির্বাহী সম্পাদক হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি । পরে যোগ দেন পিআইবিতে। ২০০৮ সালে দুই বছরের জন্য আবার শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিক ইউনিয়নে দুই দফা যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন স্বাধীনতার ঠিক আগে। সাংবাদিকতার জন্য ২০১৫ সালে পান একুশে পদক।

উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটেরও উপদেষ্টা ছিলেন কামাল লোহানী।

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক যোদ্ধাকে হারালো দেশ

আপডেট সময় : ০৮:৩৬:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ জুন ২০২০

কামাল লোহানী–এদেশের সাংবাদিকতা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ; স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনের সামনের সারির যোদ্ধা ছিলেন তিনি। একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, আজন্ম বাঙালিয়ানার ধারক কামাল লোহানী, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। তার মৃত্যুতে দেশ হারালো একজন মুক্তিসংগ্রামী, সাংবাদিক ও সংস্কৃতি কর্মীকে।

কামাল লোহানী, বিজয়ের খবর এসেছিল যার কণ্ঠে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের বিজয়ের খবর বেতারে কামাল লোহানীই প্রথম পড়েছিলেন।

আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী। ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন জন্ম নেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার খান সনতলা গ্রামে। শিশুকালেই মাতৃহারা কামাল ১৯৪৮ সালে চলে আসেন পাবনায়। ভাষা আন্দোলনের বছর পাস করেন মাধ্যমিক পরীক্ষা। সে সময় থেকেই রাজনীতিকে পান বন্ধু হিসেবে। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তিনি প্রচলিত শিক্ষার ইতি টানেন। রাজনীতি, সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতি চর্চায় জীবনের মানে খুঁজে নেন।

ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, বাঙ্গালীর প্রতিটি অর্জনে ছিলেন নির্ভিক সেনানী। আপদমস্তক অসাম্প্রদায়িক কামাল লোহানী, এ দেশের ঐতিহাসিক প্রায় সব ঘটনার সঙ্গে ছিলেন সম্পৃক্ত । প্রথম গ্রেপ্তার হন ১৯৫৩ সালে। এরপর একাধিকবার তাঁর জায়গা হয় জেলখানায়। ৫৪তে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে কাজ করায় কারাবরণ করেন। ৫৫ তে বাড়ি ছেড়ে রাজধানীর পথে পা বাড়ান, শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। মার্ক্সবাদী কামাল লোহানী যোগ দেন সাংবাদিকতায়। পাশাপাশি এ বছরই ন্যাপে যোগ দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি হলে আত্মগোপনে যান তিনি ।

পাকিস্তান সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছেন। ছায়ানট, উদীচী, ক্রান্তিসহ বহু সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ষাটের দশক থেকে রাজনীতি আর সংস্কৃতি যখন পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলেছিল, তখন তিনি ছিলেন সেই বন্ধনের একজন রূপকার। ছায়ানট সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাড়ে চার বছর কাটানোর পর নিজেই ১৯৬৭ সালে গড়ে তোলেন ‘ক্রান্তি’ নামে সাংস্কৃতিক সংগঠন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় কামাল লোহানী স্বাধীন বাংলা বেতারের সংবাদ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ‘দৈনিক জনপদ’ নামে একটি নতুন পত্রিকায় যোগ দিয়ে আবার ফিরে আসেন সাংবাদিকতায়। ১৯৭৪ সালে ‘বঙ্গবার্তা’, এরপর ‘দৈনিক বাংলার বাণী’ পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৭৭ সালে রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক বার্তা’র নির্বাহী সম্পাদক হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি । পরে যোগ দেন পিআইবিতে। ২০০৮ সালে দুই বছরের জন্য আবার শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিক ইউনিয়নে দুই দফা যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন স্বাধীনতার ঠিক আগে। সাংবাদিকতার জন্য ২০১৫ সালে পান একুশে পদক।

উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটেরও উপদেষ্টা ছিলেন কামাল লোহানী।