০২:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

ইউরোপে ‘মানব চিড়িয়াখানা’ আর নেই, তবে বর্ণবাদ শেষ হয়নি

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ০৪:৪২:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০২৩
  • / ১৬২৪ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঔপনিবেশিক ইউরোপে একসময় ‘মানব চিড়িয়াখানা’ বেশ পরিচিত ছিল৷ বর্ণবাদী নৃতাত্ত্বিক এই প্রদর্শনী হামবুর্গ, লিসবন বা ব্রাসেলসের মতো শহরে মাঝেমাঝেই হতো৷ সেই সময় আর নেই৷

পঞ্চদশ শতাব্দি থেকেই এই চর্চার কথা শোনা যায়৷ তখন উপনিবেশ থেকে মানুষকে অপহরণ করে ইউরোপে নিয়ে আসা হতো এবং বিভিন্ন প্রদর্শনীতে তাদের দেখানো হতো৷ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে অমানবিক এই বর্ণবাদী চর্চা গত শতকের শুরুর দিকেও দেখা গেছে৷

সেই ‘মানব চিড়িয়াখানা’ এখন আর দেখা যায় না৷ আর সামগ্রিকভাবে বর্ণবাদবিরোধী কঠোর অবস্থান জার্মানি ও ইউরোপ নিয়েছে বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে৷ কিন্তু সেই অবস্থার পরিবর্তন কতটা হয়েছে?

দুদিন আগেই কথা হচ্ছিল একজন সহকর্মীর সঙ্গে৷ তিনি গ্রীষ্মের ছুটিতে বার্লিন গিয়েছিলেন বেড়াতে৷ ফেরার দিন ট্রেনের এক কামড়ায় তিনিসহ আরো তিন ডজন মানুষ উঠেছিল৷ কিন্তু ট্রেনের টিকিট শুধু সেই সহকর্মীরটাই পরীক্ষা করেছেন চেকার!

এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আমার সহকর্মী৷ তার কাছে এটা মনে হয়েছে অস্বাভাবিক আচরণ৷ এরকম আচরণ যে শুধু তার সঙ্গে হয়েছে বিষয়টি এমন নয়৷ এশীয় বংশোদ্ভূত এক নারী জানিয়েছেন, জার্মানিতে বাসা ভাড়া নেয়ার পর শুরুর দিকে কেউ কেউ তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তিনি সেখানে ঘরদোর পরিষ্কারের কাজ করতে গিয়েছেন কিনা!

এগুলোকে হয়ত ছোট ছোট বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়া যায়৷ ব্যক্তিগতভাবে আমি জার্মানি বা ইউরোপে গত দেড় দশকে কোনোরকম বর্ণবাদী আচরণের মুখোমুখি হইনি৷ তবে পরিসংখ্যান বলছে, বর্ণবাদী সহিংস ঘটনাও ঘটছে জার্মানিতে৷ ২০২২ সালে জার্মানিতে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ সহিংস ঘটনা ঘটেছিল এক হাজার ৪২টি৷ তার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ঘটনার ধরন ছিল বর্ণবাদী৷

জার্মানিতে মুসলমানদের বসবাসের বিষয়টি নিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার কথা শোনা যায় মাঝেমাঝে৷ এক জরিপে অংশ নেয়াদের এক-তৃতীয়াংশ মত দিয়েছেন যে ইউরোপের দেশটিতে মুসলমানদের অভিবাসন সীমিত করা উচিত৷ সেই জরিপে অংশ নেয়াদের ২৭ শতাংশ আবার এই মতও দিয়েছেন যে জার্মানিতে অনেক বেশি মুসলমান বসবাস করছেন৷

এতটুকু পড়ে এমন ভাবার কারণ নেই জার্মানি বিদেশি বা মুসলমানদের জন্য বোধহয় নিরাপদ নয়৷ আমি বলবো উল্টো, বর্তমান জার্মানি অতীতের অনেক ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, অনেক অপরাধের দায় স্বীকার করে সামনে আগানোর কৌশল বেছে নিয়েছে৷ ফলে ২০১৫ সালে সিরিয়ার ১০ লাখের বেশি শরণার্থীর জন্য দুয়ার খুলে দিয়ে নজির সৃষ্টি করেছিল ইউরোপের এই দেশটি৷ আরো বেশি বেশি বিদেশিকে জার্মানি আসতে উৎসাহিত করতে সম্প্রতি অভিবাসন আইনও সংস্কার করেছে দেশটি৷

তাছাড়া বর্ণবাদ প্রতিরোধে জার্মানিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা উদ্যোগ সচল রয়েছে৷ সরকারি নীতির পাশাপাশি সমাজ থেকে বর্ণবাদ হটাতেও প্রচারণা চালানো হয়৷ এধরনের যেকোনো ঘটনা দ্রুত সামনে আনা হয় যাতে তা প্রতিরোধ করা যায়৷

ইউরোপের অন্যান্য দেশেও এধরনের উদ্যোগ রয়েছে৷ কিন্তু তারপরও সমাজ থেকে বর্ণবাদ পুরোপুরি সরতে এখনো অনেক সময় লাগবে মনে হচ্ছে৷ বিশেষ করে ছোটখাট বা বিচ্ছিন্ন যেসব ঘটনা এখনো ঘটছে সেগুলোও বন্ধ করতে হবে৷ পাশাপাশি বর্ণবাদের বিষবাষ্প নতুন করে যাতে বাড়তে না থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে৷

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

ইউরোপে ‘মানব চিড়িয়াখানা’ আর নেই, তবে বর্ণবাদ শেষ হয়নি

আপডেট সময় : ০৪:৪২:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০২৩

ঔপনিবেশিক ইউরোপে একসময় ‘মানব চিড়িয়াখানা’ বেশ পরিচিত ছিল৷ বর্ণবাদী নৃতাত্ত্বিক এই প্রদর্শনী হামবুর্গ, লিসবন বা ব্রাসেলসের মতো শহরে মাঝেমাঝেই হতো৷ সেই সময় আর নেই৷

পঞ্চদশ শতাব্দি থেকেই এই চর্চার কথা শোনা যায়৷ তখন উপনিবেশ থেকে মানুষকে অপহরণ করে ইউরোপে নিয়ে আসা হতো এবং বিভিন্ন প্রদর্শনীতে তাদের দেখানো হতো৷ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে অমানবিক এই বর্ণবাদী চর্চা গত শতকের শুরুর দিকেও দেখা গেছে৷

সেই ‘মানব চিড়িয়াখানা’ এখন আর দেখা যায় না৷ আর সামগ্রিকভাবে বর্ণবাদবিরোধী কঠোর অবস্থান জার্মানি ও ইউরোপ নিয়েছে বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে৷ কিন্তু সেই অবস্থার পরিবর্তন কতটা হয়েছে?

দুদিন আগেই কথা হচ্ছিল একজন সহকর্মীর সঙ্গে৷ তিনি গ্রীষ্মের ছুটিতে বার্লিন গিয়েছিলেন বেড়াতে৷ ফেরার দিন ট্রেনের এক কামড়ায় তিনিসহ আরো তিন ডজন মানুষ উঠেছিল৷ কিন্তু ট্রেনের টিকিট শুধু সেই সহকর্মীরটাই পরীক্ষা করেছেন চেকার!

এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আমার সহকর্মী৷ তার কাছে এটা মনে হয়েছে অস্বাভাবিক আচরণ৷ এরকম আচরণ যে শুধু তার সঙ্গে হয়েছে বিষয়টি এমন নয়৷ এশীয় বংশোদ্ভূত এক নারী জানিয়েছেন, জার্মানিতে বাসা ভাড়া নেয়ার পর শুরুর দিকে কেউ কেউ তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তিনি সেখানে ঘরদোর পরিষ্কারের কাজ করতে গিয়েছেন কিনা!

এগুলোকে হয়ত ছোট ছোট বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়া যায়৷ ব্যক্তিগতভাবে আমি জার্মানি বা ইউরোপে গত দেড় দশকে কোনোরকম বর্ণবাদী আচরণের মুখোমুখি হইনি৷ তবে পরিসংখ্যান বলছে, বর্ণবাদী সহিংস ঘটনাও ঘটছে জার্মানিতে৷ ২০২২ সালে জার্মানিতে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ সহিংস ঘটনা ঘটেছিল এক হাজার ৪২টি৷ তার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ঘটনার ধরন ছিল বর্ণবাদী৷

জার্মানিতে মুসলমানদের বসবাসের বিষয়টি নিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার কথা শোনা যায় মাঝেমাঝে৷ এক জরিপে অংশ নেয়াদের এক-তৃতীয়াংশ মত দিয়েছেন যে ইউরোপের দেশটিতে মুসলমানদের অভিবাসন সীমিত করা উচিত৷ সেই জরিপে অংশ নেয়াদের ২৭ শতাংশ আবার এই মতও দিয়েছেন যে জার্মানিতে অনেক বেশি মুসলমান বসবাস করছেন৷

এতটুকু পড়ে এমন ভাবার কারণ নেই জার্মানি বিদেশি বা মুসলমানদের জন্য বোধহয় নিরাপদ নয়৷ আমি বলবো উল্টো, বর্তমান জার্মানি অতীতের অনেক ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, অনেক অপরাধের দায় স্বীকার করে সামনে আগানোর কৌশল বেছে নিয়েছে৷ ফলে ২০১৫ সালে সিরিয়ার ১০ লাখের বেশি শরণার্থীর জন্য দুয়ার খুলে দিয়ে নজির সৃষ্টি করেছিল ইউরোপের এই দেশটি৷ আরো বেশি বেশি বিদেশিকে জার্মানি আসতে উৎসাহিত করতে সম্প্রতি অভিবাসন আইনও সংস্কার করেছে দেশটি৷

তাছাড়া বর্ণবাদ প্রতিরোধে জার্মানিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা উদ্যোগ সচল রয়েছে৷ সরকারি নীতির পাশাপাশি সমাজ থেকে বর্ণবাদ হটাতেও প্রচারণা চালানো হয়৷ এধরনের যেকোনো ঘটনা দ্রুত সামনে আনা হয় যাতে তা প্রতিরোধ করা যায়৷

ইউরোপের অন্যান্য দেশেও এধরনের উদ্যোগ রয়েছে৷ কিন্তু তারপরও সমাজ থেকে বর্ণবাদ পুরোপুরি সরতে এখনো অনেক সময় লাগবে মনে হচ্ছে৷ বিশেষ করে ছোটখাট বা বিচ্ছিন্ন যেসব ঘটনা এখনো ঘটছে সেগুলোও বন্ধ করতে হবে৷ পাশাপাশি বর্ণবাদের বিষবাষ্প নতুন করে যাতে বাড়তে না থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে৷