‘খাদ্যপণ্যের যৌক্তিক দাম: বাজার তত্ত্বাবধানের কৌশল অনুসন্ধান’ শীর্ষক পলিসি কনক্লেভ অনুষ্ঠিত
- আপডেট সময় : ০৭:৪৯:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ১৫১৮ বার পড়া হয়েছে
২ ফেব্রুয়ারি বণিক বার্তার আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘খাদ্যপণ্যের যৌক্তিক দাম: বাজার তত্ত্বাবধানের কৌশল অনুসন্ধান’ শীর্ষক পলিসি কনক্লেভ। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের গ্র্যান্ড বলরুমে আয়োজিত এ সম্মেলনে ব্যবসায়ী, ভোক্তা, সরকারের নীতিনির্ধারকসহ বিভিন্ন পক্ষ অংশ নিয়েছেন।
বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, খাদ্যস্ফীতি রোগের উপসর্গ মাত্র, সমস্যা নয়। অনেক সময় উৎপাদন পর্যাপ্ত থাকার পরও বাজারে সংকট থাকে। চাহিদার হিসাবটাও আমাদের ঠিকঠাক হয় না। সরকারের কাঠামোর ভেতরে তা থাকতে হবে। সরকারের কাছে ব্যাপক ও সমন্বিত তথ্য-উপাত্ত থাকা দরকার।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের যে দাম দেখছি, তাতে তো দেশে দাম কমার কথা। বাড়ার কোনো কারণ তো দেখি না।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রতিযোগিতা কমিশনকে পুরোপুরি স্বাধীন করে দিতে চাই। বাজারে যাতে প্রতিযোগিতা বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড না ঘটে। মন্ত্রণালয়ের সেখানে কোনো হস্তক্ষেপ যেন না থাকে, সেদিকে আগাতে চাই।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আবদুর রহিম খান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির মূলনীতি অনুযায়ী বাজারে প্রতিযোগিতা থাকবে, ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা বেশি হবে এবং তথ্য উন্মুক্ত থাকবে। কিন্তু বাস্তবে বাজার কয়েকটি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে, প্রতিযোগিতাও নেই। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কমিশন ও সরকারেরও দায় আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আবদুর রহিম খান। তিনি বলেন, বাজারে বড় বড় খেলোয়াড়দের (ব্যবসায়ী) পাশাপাশি খুচরা ব্যবসায়ী যারা ছোট ব্যবসা করে তাদেরকে যদি সুযোগ করে দিতে পারি তাহলে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় করা যেতে পারে। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি ইনপুট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড তৈরি করতে যাচ্ছে। যেখান থেকে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্য আমদানিতে একটি সহযোগিতা পাবে। স্বল্প সুদে ঋণ নিতে পারবে।
প্যানেল আলোচনায় প্রবিধান ও সরকারি সংস্থা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন চেয়ারপারসন এএইচএম আহসান, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন চেয়ারম্যান (সচিব) ড. মইনুল খান, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ফয়সল আজাদ। তিনি বলেন, ভোক্তা ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে আমাদের। টিসিবির প্রচারণায় ঘাটতি রয়েছে।
পণ্য আমদানি, সরবরাহ ও ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য রাখেন টি. কে. গ্রুপের গ্রুপ ডিরেক্টর মোহাম্মাদ মুস্তাফা হায়দার। সিটি গ্রুপের এমডি মোহাম্মদ হাসান।
অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন ও বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনা করেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন,মধ্যস্বত্বভোগী ও মিলারদের আমরা অনেক সময় নেতিবাচকভাবে দেখি, কিন্তু তারা বাজার ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
খুচরা বাজার নিয়ে বক্তব্য রাখেন এসিআই লজিস্টিকস লিমিটের (স্বপ্ন) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির, কারওয়ান বাজার ২নং কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদ আহমেদ রাসেল।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে আলোচনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, আমদানিকরণ প্রক্রিয়ার বিকেন্দ্রীকরণ করা জরুরি। কয়েকটি বৃহৎ কোম্পানি সবকিছু নির্ধারণ করে দেয়। সেক্ষেত্রে সহযোগীতামূলক বাজার থেকে আমাদের প্রতিযোগিতামূলক বাজারের দিকে যেতে হবে। সর্বোপরি সামগ্রিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই বাজারে ভারসাম্য আনা যাবে।
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন। আগামী রমজান মাসে ভোক্তাদের ‘পকেট না কাটতে’ ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতাসহ সারা দেশের দুই শতাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
(সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)